বাংলাদেশ কেন নয়?

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আরও একটি আসরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের মানুষের সামনে একটি প্রশ্নই গুঞ্জরিত হচ্ছে, ‘অপরের পাওনা আদায় করেছে আগে, আমাদের পরে দেনা শোধবার ভার।’ কবি নির্মলেন্দু গুণেরও প্রশ্ন, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা পারলে বাংলাদেশ কেন নয়?

আরও একটি ক্রিকেট বিশ্বকাপের সামনে দাঁড়িয়ে আমি নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান একজন বলে মনে করছি। ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম দুটি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের খেলা আমরা অনেকেই দেখতে পারিনি। আসলে তখন বাংলাদেশ এই খেলায় ছিলও না, বাংলাদেশ টেলিভিশন এই খেলাগুলো প্রচারও করত না। বাংলাদেশে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রচার শুরু হয় ১৯৮৩ সাল থেকে। তা-ও সবগুলো খেলা নয়, শুধু ফাইনাল ম্যাচটাই প্রচার করেছিল বিটিভি, তালিবাবাদ ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে। কোথায় ওই তালিবাবাদ, তখন তা-ও জানতাম না। ক্রিকেটের প্রথম তিনটি বিশ্বকাপ আসর বসেছিল ক্রিকেটের জন্মভূমি ইংল্যান্ডের মাটিতে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের একাধিপত্য চূর্ণ করে অবিশ্বাস্যভাবে ভারত তৃতীয় বিশ্বকাপ জয় করলে পরে এ উপমহাদেশের মানুষ হকি ও ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে ক্রিকেটকে বুকে টেনে নেয়। উপমহাদেশের মানুষ ভাবতে শুরু করে যে ভারত যখন বিশ্বকাপ জয় করতে পেরেছে, তবে পাকিস্তানও পারবে, পাকিস্তান পারলে শ্রীলঙ্কাও পারবে। আর শ্রীলঙ্কা যদি পারে, তবে বাংলাদেশ কেন নয়? ক্রিকেট নিয়ে এ উপমহাদেশের মানুষের স্বপ্ন ও বিশ্বাস দ্রুতই সফলতার মুখ দেখে-ইংল্যান্ডকে হারিয়ে পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ ক্রিকেট জয়ের মধ্য দিয়ে।

এবার যখন আমরা আরও একটি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মুখোমুখি হয়েছি, তখন আমাদের, বাংলাদেশের মানুষের সামনে এ প্রশ্নটিই গুঞ্জরিত হচ্ছে, ‘অপরে পাওনা আদায় করেছে আগে, আমাদের পরে দেনা শোধবার ভার।

ভারত জিতল, পাকিস্তান জিতল, শ্রীলঙ্কা জিতল-আমরা কেন জিতব না? গত বিশ্বকাপে আমরা কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছি। আমাদের এবারের ক্রিকেট দল এবং আমাদের প্রস্তুতিও এই সময়ে আগের সব সময়ের চেয়ে ভালো। তবে এবারের বিশ্বকাপে আমাদের টাইগারদের নিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে ভাবতে দোষ কোথায়?

এবারের বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে শক্তিশালী ভারতের ৩৫৯ রান তাড়া করতে গিয়ে তামিম (খেলেননি), সাকিব ও মোসাদ্দেকের শূন্য রানে আউট হওয়ার পরও আমরা ২৬৪ রান করে আমাদের ব্যাটিং লাইন সম্পর্কে একটা ইতিবাচক ধারণা দিতে পেরেছি বলেই আমি মনে করছি। ভারতের মারকুটে অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে আমি একমত যে সাম্প্রতিক কালে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে শক্তির ভারসাম্য অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হলো কার?

খেলার দিনে খেলার মাঠেই নির্ধারিত হবে প্রতিদিনের খেলার ভাগ্য। এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দেশই প্রতিটি দেশকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। বাংলাদেশের কাছে পরপর তিন ম্যাচে পরাভূত হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতকে হারানো নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪২১ রান তুলে ৯১ রানে ম্যাচ জিতবে, কে ভেবেছিল? বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তানকে হারানো আফগানিস্তান আবার ইংল্যান্ডের কাছে হারল ৯ উইকেটে।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের ক্ষতি হয়েছে। ওই ম্যাচে আমাদের জয়ের সম্ভাবনা ছিল।

আমি মাঝেমধ্যে লিখব বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে, কেননা, আমি ক্রিকেটকে ভালোবাসি শুধু নয়, আমি এই খেলাটা ভালো বুঝিও। এই খেলাটা আমার চেয়ে কে বেশি বোঝেন, আমি জানি না।

লেখক: নির্মলেন্দু গুণ, কবি