প্রথম ম্যাচেই ৫০০? কেন নয়!

বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনে মাঠে নামার আগে অনুশীলনে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা দল। ছবি: এএফপি
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনে মাঠে নামার আগে অনুশীলনে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা দল। ছবি: এএফপি
ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক ইনিংসে তিনশ রান উঠেছিল বিশ্বকাপের আসরেই। ওয়ানডেতে অনেক আগেই চারশ রান উঠেছে। হালের আক্রমণাত্মক ক্রিকেটে পাঁচশ রান তোলার কথাও উঠছে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পাঁচ শ হলে কিন্তু মন্দ হয় না!

পাঁচ শ কি উদ্বোধনী ম্যাচেই হবে? মুখোমুখি হচ্ছে কিন্তু চার শ করার অভ্যাস আছেন এমন দুটি দল—ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। আর ইতিহাসও বলছে, প্রথম তিন শ রানের নজির দেখা গিয়েছিল বিশ্বকাপেই। তাই এবার পাঁচ শ রান কেন নয় এবং সেটি প্রথম ম্যাচেই!

আশার বেলুনটা ফুলেফেঁপে অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে? সেটি হতেই পারে। তবে আশাটাও একদম অমূলক নয়। ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশিবার চার শ রান তোলার রেকর্ড দক্ষিণ আফ্রিকার। ছয়বার এই মাইলফলক ছুঁয়েছে দলটি। ইংল্যান্ড চার শ ছুঁয়েছে চারবার। এর মধ্যে গত বিশ্বকাপের পর থেকে ওয়ানডে খেলার ধাঁচ পাল্টে দেওয়া ইংল্যান্ড বিশ্ব রেকর্ড ভেঙেছে দুবার। গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪৮১ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড—যা ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড।

প্রথম ম্যাচেই পাঁচ শ ছোঁয়ার প্রেরণা ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকে নিতে পারে ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯৭৫ বিশ্বকাপের ৭ জুন—প্রথম দিনে মাঠে গড়িয়েছিল মোট চারটি ম্যাচ। এর মধ্যে প্রথম ম্যাচে (স্কোরকার্ড অনুযায়ী প্রথম) মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড-ভারত। সেই ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ৩৩৪ রান তুলেছিল স্বাগতিক ইংল্যান্ড। ওয়ানডেতে এটাই প্রথম ৩০০ রানের দলীয় ইনিংস। মজার বিষয় একই দিন দ্বিতীয় ম্যাচেও দেখা গেছে ন্যূনতম ৩০০ রানের দলীয় ইনিংস। পূর্ব আফ্রিকার (কেনিয়া, উগান্ডা, তানজানিয়া ও জাম্বিয়া) বিপক্ষে ৫ উইকেটে ৩০৯ তুলেছিল নিউজিল্যান্ড।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে ‘ডাবল’ সেঞ্চুরি রয়েছে দুটি। ক্রিস গেইল (২১৫) ও মার্টিন গাপটিল (২৩৭*) ডাবলের মুখ দেখেছিলেন গত ক্রিকেট বিশ্বকাপে। আচ্ছা, দলীয় সংগ্রহ যদি পাঁচ শ হতে পারে তাহলে সেই ইনিংসে ব্যক্তিগত সংগ্রহ তিন শ হতে দেখার সম্ভাবনাও তো থেকে যায়? তা ছাড়া ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ২৬৪—মানে আরেকটু আক্রমণাত্মক হলে সেদিন (১৩ নভেম্বর, ২০১৪, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা) তিন শ রানের দেখা পেতেই পারতেন রোহিত শর্মা। তাঁর এই ১৭৩ বলের ইনিংসটাই বলে দেয় ওয়ানডেতে ৩০০ রানের ব্যক্তিগত ইনিংস দেখার দিন খুব বেশি দূরে নয়। কেমন হয় যদি আজ উদ্বোধনী দিনেই দলীয় স্কোরবোর্ডে ন্যূনতম ৫০০ আর ব্যক্তিগত স্কোরবোর্ডে ৩০০ দেখা যায়?

বোঝাই যাচ্ছে, বিশ্বকাপের আমেজে ভেসে এসব অতি কল্পনা প্রবণ মনের খেয়াল। তবে হাল আমলের ব্যাটসম্যানবান্ধব ক্রিকেটে এই খেয়াল চাপাও খুব একটা দোষের নয়। তা ছাড়া ইতিহাস থেকে প্রেরণা নেওয়ার উপলক্ষ তো আছেই। না, ৩০০ রানের ব্যক্তিগত ইনিংসের ইতিহাস নয়। ওয়ানডেতে এবং বিশ্বকাপে প্রথম যে ম্যাচে ৩০০ রানের দলীয় ইনিংস দেখা গিয়েছিল সেই ম্যাচে কিন্তু সেঞ্চুরিও ছিল। সেটি আবার বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরিও। এ নিয়ে বেশ মজার এক ঘটনাও আছে।

আগেই বলা হয়েছে ১৯৭৫ বিশ্বকাপের প্রথম দিনে মাঠে গড়িয়েছিল চারটি ম্যাচ। সবগুলো ম্যাচই শুরু হয়েছিল সকাল ১১টায়। এর মধ্যে দুটি ম্যাচে দেখা গিয়েছিল সেঞ্চুরি। লর্ডসে ভারতের বিপক্ষে ১৩৭ রান করেছিলেন ইংলিশ ওপেনার ডেনিস অ্যামিস। এজবাস্টনে আরেক ম্যাচে পূর্ব আফ্রিকার বিপক্ষে ১৭১ রান করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের গ্লেন টার্নার। তখনকার দিনে ওয়ানডেতেও মধ্যাহ্নভোজের বিরতি ছিল। দুপর ১টায় মধ্যাহ্নভোজন যাওয়ার সময় অ্যামিসের স্কোর ছিল ৯৮ (৩৫ ওভার শেষে, ম্যাচ ছিল ৬০ ওভারের) আর টার্নারের স্কোর ছিল ৮২ (৪০ ওভার শেষে, ম্যাচ ছিল ৬০ ওভারের)। ওই ম্যাচের বল-বাই-বল তথ্য নেই পরিসংখ্যানবিদদের কাছে, তবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত অ্যামিসই সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন আগে। সেটি মধ্যাহ্নভোজের পর দ্বিতীয় ওভারেই (৩৭তম ওভার)।

কয়েক দিন আগে শাই হোপ বলেছিলেন, ওয়ানডেতে প্রথম দল হিসেবে ৫০০ রান তুলতে চায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই চাওয়া অমূলক কিছু না। ৫০০ তোলার মতো ব্যাটিং শক্তি রয়েছে ক্যারিবীয়দের। তবে এটাও সত্য যে বড় রান তোলা আসলে অভ্যাসের ব্যাপার। মানে ৫০০ রানের মাইলফলক গড়তে আগে ৪০০ করার অভ্যাসটা থাকতে হয়। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ক্যারিবীয়রা এখনো ৪০০ রান তুলতে পারেনি। সেদিক বিচারে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশিবার চার শ রান তোলা তিন দলের (অন্য দলটি ভারত-৫ বার) দুটি দল আজ মুখোমুখি হচ্ছে একে অপরের বিপক্ষে। তাই দলীয় স্কোরবোর্ডে ৫০০ আর ব্যক্তিগত স্কোরবোর্ডে ৩০০ দেখার প্রত্যাশার ভিতটা কল্পনাবিলাসী মন গড়ে দিলেও অসম্ভব কিছু নয়। ক্রিকেট মানেই তো গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা!