টিম বাংলাদেশ ভালো করুক

রফিকুন নবী
রফিকুন নবী

দেখতে দেখতে আবার ক্রিকেটের মহাযজ্ঞ আইসিসি বিশ্বকাপ খেলার আসরটি শুরু হলো। খেলোয়াড়-অখেলোয়াড়, ভক্ত-অভক্ত—সবার মধ্যেই কোনো না কোনোভাবে ক্রিকেটাসর ভর করে আছে। আমারও সেই দশা।

ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে দিয়ে শুরু। আমি আসলে বসে আছি দেশের খেলা শুরুর দিনের জন্য। বলতে দ্বিধা নেই যে আমি একজন প্রাচীন দর্শক, প্রবীণ ভক্ত। প্রাচীন বলছি, কারণ, পঞ্চাশের দশকের প্রায় মাঝামাঝিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম ক্রিকেটের আসর পাক-ভারত টেস্ট খেলা দেখা দিয়ে আমার অভিজ্ঞতার শুরু। তারপর থেকে খেলাটির দিকে চোখ রাখা বছরের পর বছর ধরে চলছে। কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের খেলা দেখেছি। দেশের দলকে ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজগতে বিশেষ স্থানে জায়গা করে নিতে দেখেছি। এখন বাংলাদেশের তরুণ খেলোয়াড়েরা সব দলের, সব দেশের কাছে ‘কাউন্টেড ফ্যাক্টর’। যেকোনো দিন, যেকোনো খেলায়, নামীদামিদের ধরাশায়ী করে দেওয়ার সামর্থ্য আছে তাঁদের। এটা কম কথা নয়। বিশ্বকাপগুলোতে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জনই শুধু নয়, ধাপে ধাপে টুর্নামেন্টের ওপরের দিকে উঠে আসারও নজির তৈরি করছে। এই সব সাফল্য দেখে আশা করতেই পারি যে আসরের চূড়ান্ত পর্বগুলোতে তরুণ দলটি শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে, বুদ্ধিদীপ্ততা নিয়ে পৌঁছাবে। আর একবার তাহলে কাপটির জয় পেয়ে গেলে বিস্মিত হব না। আসলে ক্রিকেট খেলাটিই অনিশ্চয়তার বলে আমার এই ভাবনা। কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জয়টিকে দৃষ্টান্ত ধরা যায়।

যা-ই হোক, খেলা নিয়ে উদ্দীপনা, আবেগ ও উদ্বেগকে সঙ্গী করে সবাই অপেক্ষমাণ নানান প্রস্তুতি নিয়ে। সবটাই অবশ্য দেশের টিমকে নিয়ে। খেলা দেখার ব্যাপারে কর্মব্যস্ততার কারণে চয়েস নিতে হবে। যে দিনগুলোতে নিজেদের খেলা, সেগুলোতে তো বটেই, সঙ্গে অন্য যেসব দলের হার-জিতের ওপর বাংলাদেশ দলের লাভ-ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, সেসব দেখার লিস্টিতে রাখব। সত্যি বলছি, খেলা দেখা নিয়ে হিংসা হচ্ছে ইংল্যান্ডে মাঠে বসে যাঁরা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন, তাঁদের।

২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলতে সুযোগ পাওয়া ভাগ্যবান এবং দক্ষতা প্রমাণ করা দেশের খেলোয়াড়েরাও ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে যুক্তরাজ্যে। অনুশীলনী পর্ব হিসেবে একটি ত্রিদেশীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ও ওয়ার্মআপ খেলার সুযোগে নিজেদের ঝালাই, যাঁচাই করার কাজটিও ভালো-মন্দ মিশিয়ে সমাপ্ত করেছে। ঘরবাড়ি কম্পমান শীত-বৃষ্টি-ঝোড়ো হাওয়াকে সহ্য করে কেমনভাবে নিজেদের মানিয়ে নিতে হবে, সেই প্র্যাকটিসও করা হয়েছে। দলের ব্যস্ততা বেড়ে আকাশচুম্বী অবস্থানে রয়েছেন ক্রীড়া লেখক, সাংবাদিক, ভাষ্যকার, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোচবৃন্দ, থেরাপিস্ট, চিকিৎসক প্রমুখ বিশেষজ্ঞগণও। সবাই ভেন্যুতে বসে খেলা দেখার আনন্দ এবং দেশের টিমটির ব্যাপারে উদ্বিগ্নতা মেশানো মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিয়ে অপেক্ষমাণ।

আর সবার মতো অপেক্ষমাণ আমিও। অধীরতা ও আবেগের কোনো খামতি নেই।

তবে একটা কথা না বললেই নয় যে এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা দেশে ঈদের আনন্দের সঙ্গে মিশেছে। এখন সবার জন্য একটা কথাই বলা যায় ‘হোপ ফর দ্য বেষ্ট’। এগিয়ে যাওয়ার দিন এসেছে। ভালো করুক টিম বাংলাদেশ।