বিশ্বকাপের 'বুড়ো' একাদশে আছেন কারা?

ক্রিকেট খেলাটা বুড়োদের নয় মোটেও। মাঠে একেকটি রান তুলতে বেশ পরিশ্রম করতে হয়। বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের পরিশ্রম তো আরও বেশি। তবু বয়সকে শুধুই একটি সংখ্যা বানিয়ে দিয়ে কিছু ক্রিকেটার ছুটে চলেন অদম্য স্পৃহা নিয়ে। দলকে জেতাতেও তাঁদের ভূমিকাটাই দিন শেষে অনেক বড় হয়ে দেখা দেয়। এবারের বিশ্বকাপেও প্রায় প্রতিটি দলের অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ করতেও আছেন এমন কয়েকজন, যাঁরা সহজেই ম্যাচের গতিপথ বদলে দিতে পারেন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে।

ইমরান তাহির।
ইমরান তাহির।


ইমরান তাহির (দক্ষিণ আফ্রিকা)
উইকেট পাওয়ার পর প্রায় পুরো মাঠ দৌড়ে বেড়ান। তাঁর দৌড় দেখে ঘুণাক্ষরেও আঁচ করা যায় না গত মার্চে চল্লিশে পা রেখেছেন প্রোটিয়া লেগ স্পিনার। এমনকি এবারের ২০১৯ বিশ্বকাপের প্রবীণতম ক্রিকেটারটিও তাহির। পাকিস্তানের লাহোরে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার দেশটির অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়েও খেলেছেন। এরপর ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেট হয়ে শেষে থিতু হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলে। এক দিনের ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১০০ ম্যাচে এখন পর্যন্ত ১৬৪ উইকেট নিয়েছেন। প্রোটিয়াদের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটধারী স্পিনারও তাহির।

ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
জ্যামাইকার ‘ইউনিভার্স বস’, বোলারদের যম। তাঁর মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ক্রিকেট ইতিহাসেই হাতে গোনা। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ফিফটি করে এরই মধ্যে জানান দিয়ে রেখেছেন, শেষ বিশ্বকাপকে নিজের করে নেওয়ার জন্য ভালোভাবেই প্রস্তুত। ৩৯ বছর বয়সী এই ওপেনারের ফর্মের ওপরেই নির্ভর করছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ মিশন।

মোহাম্মদ হাফিজ।
মোহাম্মদ হাফিজ।


মোহাম্মদ হাফিজ (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারদের সঙ্গে যদিও এখন আর তাঁর নাম নিয়মিত উচ্চারিত হয় না, তবু এবারের বিশ্বকাপ দলে তাঁর দিকে চেয়ে আছে পাকিস্তান। ৩৮ বছর বয়সী হাফিজ পাকিস্তানের তাঁর অভিজ্ঞতা দিয়ে দলকে ভরসা দেবেন, সেই আশাতেই তাঁকে নেওয়া। 

শোয়েব মালিক (পাকিস্তান)
ম্যাচের দিক থেকে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়র শোয়েব মালিক। ৩৭ বছর বয়সেও দলের অন্যতম ব্যাটিং ভরসা। ওয়ানডেতে ছয় হাজারের বেশি রান এবং প্রায় ১৩৭ উইকেটের মালিক তিনি। বিশ্বকাপে অপেক্ষাকৃত তরুণ স্কোয়াডগুলোর একটি পাকিস্তানের। তাই নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে মাঠে দলকে এবং অধিনায়ককে সাহায্য করার উপরি দায়িত্বটাও থাকবে তাঁর।

মহেন্দ্র সিং ধোনি।
মহেন্দ্র সিং ধোনি।


মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)
অধিনায়ক হিসেবে দেশকে যা যা জেতানো যায়, তার প্রায় সবই জিতিয়েছেন ধোনি। সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়কের তকমাটা এরই মধ্যে নিজের করে নিয়েছেন। এবার ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে মাঠে নামছেন। জীবনের প্রায় ৩৬ বসন্ত পেছনে ফেলে এখনো ছুটে চলেছেন দুরন্ত গতিতে। উইকেটের পেছনে যেমন সদা ততপর, আবার ব্যাটিংয়ে ঠান্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে দলকে এনে দেন আকাঙ্ক্ষিত জয়। দল বিপদে পড়লে এখনো কোহলি পরামর্শের জন্য ছুটে যান ধোনির কাছে।

হাশিম আমলা (দক্ষিণ আফ্রিকা)
বছরের পর বছর প্রোটিয়াদের ইনিংস শুরুর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন হাশিম আমলা। ইদানীং ব্যাটে কিছুটা রানখরা চলছে। যদিও বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পেয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে দুটি ফিফটির ইনিংসে জানান দিচ্ছেন স্বরূপে ফিরতে সময় নেবেন না বেশি। প্রোটিয়ারা এবারের বিশ্বকাপে ডি ভিলিয়ার্সের মারকুটে ব্যাটিং পাচ্ছে না। আমলার ব্যাটিং তাই খুব করে দরকার তাদের। ৩৬ বছর বয়সী আমলার দিকে এবার বিশ্বকাপজুড়েই নজর থাকবে।

জীবন মেন্ডিস (শ্রীলঙ্কা)
বেহাল অবস্থা লঙ্কান ক্রিকেটের। এক দিনের ক্রিকেটে তাদের গত তিন বছরের পারফরম্যান্স এতটাই হতাশাব্যঞ্জক যে বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের চেয়েও মাতামাতি কম তাদের নিয়ে। অভিজ্ঞতার বলেই সুযোগ পেয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার জীবন মেন্ডিস। প্রথম ম্যাচে যদিও তেমন কোনো আহামরি প্রদর্শন ছিল না, তবুও দলের প্রয়োজনে জ্বলে উঠবেন এমনটাই আশা সবার।

রস টেলর (নিউজিল্যান্ড)
এবারের কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে কিউই ইনিংসের হাল ধরার দায়িত্বটা বর্তাবে অভিজ্ঞ রস টেলরের ওপর। এক দিনের ক্রিকেটে আট হাজারের বেশি রান করা টেলরের সেঞ্চুরিসংখ্যা ২০। ইনিংস লম্বা করার তাঁর যে সহজাত ক্ষমতা, সেটি এ বিশ্বকাপে কিউইদের অনেক বড় শক্তি। ৩৫ বছর বয়সেও ধারাবাহিকতার প্রতিমূর্তি রস টেলর।

ডেল স্টেইন (দক্ষিণ আফ্রিকা)
ইংল্যান্ডের পেসবান্ধব কন্ডিশনে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিংয়ের প্রাণ হিসেবেই কল্পনা করা হচ্ছিল তাঁকে। যদিও কাঁধের ইনজুরিতে জর্জরিত হয়ে এখনো বিশ্বকাপে মাঠে নামা হয়নি তাঁর। তবু প্রোটিয়া সমর্থকেরা এখনো আশায় আছেন, ফিরেই জ্বলে উঠবেন ‘স্টেইনগান’। গতির ঝড়ে নাকাল করবেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের। ৩৫ বছর বয়সী স্পিড স্টার স্টেইনকে আর যাই বলা হোক না কেন, অন্তত বুড়ো বলা যায় না!

লাসিথ মালিঙ্গা।
লাসিথ মালিঙ্গা।


লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)
শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ দলের বোলিং ইউনিটকে নেতৃত্ব দেবেন লাসিথ মালিঙ্গা। ২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলা মালিঙ্গা এখনো ব্যাটসম্যানদের বুকে কাঁপন ধরান। এই তো কদিন আগে আইপিএল ফাইনালে মুম্বাইয়ের হয়ে ডেথ ওভারে যা করলেন, তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেই পারে লঙ্কান সমর্থকেরা। মালিঙ্গা আগামী আগস্টে ৩৬ বছরে পা রাখবেন। কিন্তু ডেথ ওভারে তাঁর নিখুঁত ইয়র্কারগুলো দিয়ে যে বিশ্বকাপেও ব্যাটসম্যানদের ভোগাবেন, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

মাশরাফি বিন মুর্তজা।
মাশরাফি বিন মুর্তজা।


মাশরাফি বিন মুর্তজা (বাংলাদেশ)
এবারের বিশ্বকাপই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর শেষ কোনো বড় টুর্নামেন্ট, এই ঘোষণা বিশ্বকাপে যাওয়ার আগেই দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক তার আগে অবশ্যই স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। ৩৫ বছর বয়সেও এখনো বাংলাদেশের পেস আক্রমণের মূল ভরসা মাশরাফি। আগের মতো গতিতে বল করতে না পারলেও বুদ্ধিদীপ্ত আর বৈচিত্র্যপূর্ণ বোলিং দিয়ে কাবু করেন ব্যাটসম্যানদের। দলের ভরসার প্রতীক হয়ে প্রথম ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি নিয়েই খেলছেন মাশরাফি। এভাবেই বাধাগুলোকে তোয়াক্কা না করেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভার বয়ে চলেছেন ম্যাশ।