বিশ্বকাপের দুঃস্বপ্ন এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়

বিশ্বকাপে অনেক স্বপ্ন নিয়ে আসে দলগুলো। কখনো লক্ষ্য পূরণ হয়, কখনো বা একটু মন খারাপ করেই বাড়ি ফিরে যেতে হয়।

কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত ফলেরও তো রকমফের আছে নাকি! বিশ্বকাপে এমন কিছু বেরসিক আচরণের স্বীকার হয়েছিল কয়েকটি দল যে চিরদিনের খত হয়ে আছে সে স্মৃতি। সেই সব ভরাডুবির গল্পগুলো মনে করে দেখা যাক।

বাংলাদেশের কাছে হারের ধাক্কা সামলাতে পারেনি ভারত। ফাইল ছবি
বাংলাদেশের কাছে হারের ধাক্কা সামলাতে পারেনি ভারত। ফাইল ছবি


ভারত (২০০৭)
রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে কি দলটাকেই না সেবার বিশ্বকাপে পেয়েছিল ভারত। শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, বীরেন্দর শেবাগ, জহির খান—এমন তারকাখচিত দল নিয়ে বিশ্বকাপ খুব কম দলই করেছে। স্বপ্ন সেবার যেন বাঁধ মানছিল না ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের। সে স্বপ্নের শুরুর এমন সমাপ্তি হবে কে জানত? বাংলাদেশের সঙ্গে পরাজয়ে শুরু, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে হতশ্রী আত্মসমর্পণে শেষ। মাঝে যদিও আনকোরা বারমুডাকে পাত্তা না দিয়ে পয়েন্ট টেবিলে নিজেদের নামের পাশে বড়সড় একটা গোল্লার উপস্থিতি ঠেকাতে পেরেছিল, কিন্তু শেষ রক্ষা হলো কই! এভাবে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়া ভারতের পাঁড় ক্রিকেট ভক্তরা মানতে পারেননি কোনো মতেই। চার বছর পর ঘরের মাঠে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের উৎসব করে তবেই শান্তি পেয়েছে তারা। তবু ২০০৭ সালের সেই দুঃস্বপ্ন যেন এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় ভারতকে, তাই যেকোনো ক্রিকেট আড্ডায় এখনো সাবেকদের দীর্ঘশ্বাস ওঠে অনবরত।

১৯৯২ বিশ্বকাপ পারলে ভুলে যেতে চাইবে অস্ট্রেলিয়া। ফাইল ছবি
১৯৯২ বিশ্বকাপ পারলে ভুলে যেতে চাইবে অস্ট্রেলিয়া। ফাইল ছবি


অস্ট্রেলিয়া (১৯৯২)
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ১৯৯২ বিশ্বকাপে পা রেখেছিল অস্ট্রেলিয়া। সে বিশ্বকাপের আয়োজকও তারা। কিন্তু ঘরের আঙিনায় এত বাজে খেলবে, এতটা আঁচ করতে পারেনি তাঁরা। অ্যালান বোর্ডারের নেতৃত্বে বিশ্বকাপ মিশনটা শুরুই হয় সহ-স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে পরাজয় দিয়ে। ৮টি ম্যাচ খেলে তাদের জয় পরাজয়ের সংখ্যা ছিল সমান। নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ—চার দলের বিপক্ষে হারই কাল হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষভাবে সিডনিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ৩৬ বছর বয়সী ইংলিশ অলরাউন্ডার ইয়ান বোথাম যখন কোনো রান না খরচ করেই চার-চারজন ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নের পথ ধরান, দৃশ্যটা অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট ভক্তদের হৃদয় পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছিল। টানা তিনবার বিশ্বকাপ জিতে ক্রিকেট দুনিয়ায় অলিখিতভাবে রাজত্ব করেছে অস্ট্রেলিয়া। কে জানে, ’৯২ এর সেই দুঃস্বপ্নের তাড়া খেয়েই অস্ট্রেলিয়ার এত দূর আসা কিনা!

পনেরোর রাগ তবে উনিশে ঝাড়বে ইংল্যান্ড? সূত্র: এএফপি
পনেরোর রাগ তবে উনিশে ঝাড়বে ইংল্যান্ড? সূত্র: এএফপি


ইংল্যান্ড (২০১৫)
চির শত্রুদের ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। আর তাদের বিপক্ষেই ছিল বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। কিন্তু সেকী ভরাডুবি! ১১১ রানের বিশাল পরাজয় গোঁড়াতেই ইংলিশদের কোমর ভেঙে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। মিচেল মার্শের মিডিয়াম পেসের সামনে সেদিন দাঁড়াতেই পারেনি মরগান-রুটরা। ৫ উইকেট নিয়ে একা হাতেই গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন ইংলিশদের ব্যাটিং লাইনআপ। আর অ্যাডিলেডে বাংলাদেশের সঙ্গে মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাদের হার দেখে তো সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেইন ধারাভাষ্যেই বলে উঠলেন, ইংলিশ ক্রিকেটে এর চেয়ে খারাপ দিন আর আসেনি! গ্রুপ স্টেজ থেকেই বিদায় নিয়ে ইংল্যান্ড কিন্তু ভেঙে পড়েনি, গত চার বছরে একদিনের ক্রিকেটে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে চলেছে। ওয়ানডেতে নিজেদের তুলে এনেছে র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। ঘরের মাঠে ২০১৯ বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট হিসেবে তাদের শুরুটাও হয়েছে দারুণ।

কেনিয়ার বিপক্ষে হার দিয়ে শেষ হয়েছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ। ফাইল ছবি
কেনিয়ার বিপক্ষে হার দিয়ে শেষ হয়েছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ। ফাইল ছবি


বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা (২০০৩)
বিশ্বকাপের ১৯৯৯ সংস্করণে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিষেক হয়। অভিষেক আসরেই স্কটল্যান্ড এবং ওয়াসিম-ওয়াকারদের পাকিস্তানকে ধরাশায়ী করে। ২০০৩ বিশ্বকাপে তাই খালেদ মাসুদ পাইলটের দলের কাছে ভক্তদের প্রত্যাশা কিছুটা বেশিই ছিল। সেই প্রত্যাশার চাপেই কিনা বিশ্বকাপ ইতিহাসে বাংলাদেশ তাদের সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে সেবার। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ ৬টি ম্যাচের ৫টিতে হেরেছে বাজেভাবে আর একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে স্রেফ উড়ে গেছে বাংলাদেশ। তবে কানাডার বিপক্ষে ৬০ রানের হার দিয়ে বিশ্বকাপের শুরুটাই মূল সর্বনাশ করেছিল।

নিজেদের মাঠে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। আগের বিশ্বকাপের পাগলাটে দৌড়ে সেমিফাইনালে হারের দুঃখ ভোলার উপলক্ষ ছিল প্রোটিয়াদের সামনে। সে দল কি না বৃষ্টি আইনের হিসাব কষতে পারল না। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা থামার আগে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রান নেননি উইকেটে থাকা ব্যাটসম্যান। কারণ তাঁদের বলা হয়েছি সুপার সিক্সে ওঠার জন্য যথেষ্ট রান হয়ে গেছে। হিসেবের ভুলে ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে গেল স্বাগতিক দল!