মাশরাফি-সাকিবদের মতোই ভালোবাসি রবিউলদের

পরপর দুটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেশকে জেতালেন রবিউল। ছবি : বাফুফে
পরপর দুটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেশকে জেতালেন রবিউল। ছবি : বাফুফে
>

অনেকটা নীরবে-নিভৃতে গতকাল ২০২২ বিশ্বকাপের প্রাক্‌-বাছাইপর্বের প্রথম লেগে লাওসকে তাদের মাটিতে হারিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ডামাডোলের মধ্যে ফুটবলের এই জয় কিন্তু প্রশংসা পেতেই পারে

চলছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। মাশরাফি-সাকিবদের নিয়ে দেশবাসীর চিন্তা-আকাঙ্ক্ষা আকাশ ছুঁয়েছে। ক্রিকেটপাগল বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বকাপের প্রতিটি মুহূর্তের খোঁজ রাখছে নিয়মিত। যাঁরা ক্রিকেটের খুব একটা খোঁজখবর রাখেন না, তাঁরাও অফিস থেকে ঘরে ফেরার পথে টিভি দোকানের বাইরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপের উত্তেজনা গায়ে মাখছেন।

বাংলাদেশের খেলা হলে তো কথাই নেই। সাকিব-তামিমদের একেকটি চার-ছয়ের সঙ্গে উল্লাসধ্বনি কাঁপিয়ে দেয় চারপাশ। একেকজন ব্যাটসম্যানের সাজঘরে ফেরা নিয়ে আসছে কবরের নিস্তব্ধতা। ক্রিকেটের এই ডামাডোলের মধ্যেই বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল অনেকটা নীরবেই একটা বড় ম্যাচ খেলে ফেলল। বিশ্বকাপের ফুটবলের প্রাক্‌-বাছাইপর্বের ম্যাচ।

সে ম্যাচে লাওসকে ১-০ গোল হারিয়ে মূল বাছাইপর্বের পথে একধাপ এগিয়ে গেছে জামাল ভূঁইয়া-জেমি ডের দল। ম্যাচের ৭২ মিনিটে জয়ের গোলটি করেন তরুণ, উদীয়মান স্ট্রাইকার রবিউল ইসলাম। পুরো ম্যাচে বেশ কৌশলী খেলা খেলেছে বাংলাদেশ। বিশ্বনাথ, ইয়াসিনদের রক্ষণভাগ গোটা ম্যাচে লাওসের প্রেসিং সহ্য করে গেছে দক্ষভাবে। নিজেরা খামোখা আক্রমণ করে শক্তি খরচ করতে চাননি বাংলাদেশের ফুটবলাররা। পরে প্রেস করতে করতে লাওস হাঁপিয়ে গেলে রবিউল সে সুযোগটা নেন ভালোভাবে। ডি-বক্সের ডান দিকে লাওসের রাইটব্যাককে পরাস্ত করে ডান পায়ের এক দুরন্ত শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন তিনি। ক্লান্তির কারণেই কি না, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লাওসের চার ডিফেন্ডার রবিউলকে চার্জ করতে যাননি, আর এই সুযোগই নিয়েছেন রবিউল।

এই ম্যাচ খেলতে ঈদের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে লাওসে গিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল দল বিশ্বকাপ খেলা ক্রিকেট দলের মতোই। এই ম্যাচ সামনে রেখেই ব্যাংককে ১০ দিনের প্রস্তুতি ক্যাম্প করতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রস্তুতি ক্যাম্প করায় যে লাভ হয়েছে, বোঝা গেছে কাল। ঈদের আনন্দ ভুলে নিজেরা দেশবাসীকে যে আনন্দের উপলক্ষ এনে দিলেন, রবিউলরা তাতেই তৃপ্ত। গোলদাতা রবিউলের কণ্ঠে শোনা গেছে সেই প্রত্যয়, ‘অনেক বেশি আনন্দিত। দেশের বাইরে ঈদ করার যে সার্থকতাটা, দল জেতার কারণে সেটা পেয়েছি। দেশের মানুষকে খুশি করতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ।’

গত মার্চে রবিউলের গোলেই কম্বোডিয়ার মাটিতে কম্বোডিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। পরপর দুটি ম্যাচে গোল করে দেশকে জেতানোর ইতিহাস বাংলাদেশের কিন্তু খুব বেশি ফুটবলারের নেই।

শুধু এটুকু বলেই থামেননি রবিউল। বাংলাদেশে জন্মেছেন। দেশে একসময় ফুটবলের কী রমরমা ছিল, তিনি সেটি বেশ ভালোই জানেন। সে অবস্থা আবার ফিরিয়ে আনতে চান, ‘আমাদের দেশের মাটিতে একটা ম্যাচ আছে। ওটাতে ভালো খেলে দেশে ফুটবলের হারানো জোয়ারটা আবার ফেরত আনতে চাই।’

মাশরাফি-সাকিবদের মতো রবিউলরাও দেশের জার্সি পরেই মাঠে নামেন। লাওসকে হারানোর পর বড় একটা প্রশংসা তাঁরা পেতেই পারেন।