ছোট মাঠে আজ বড় আশা

আগের দিন নেটে ব্যাটিংয়ের সময় তাঁর চোট দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। টন্টনে কাল অনুশীলনে সেই মুশফিকুর রহিমের এমন হাসিখুশি ছবি দুশ্চিন্তা কিছুটা কমাবে।  ছবি: শামসুল হক
আগের দিন নেটে ব্যাটিংয়ের সময় তাঁর চোট দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। টন্টনে কাল অনুশীলনে সেই মুশফিকুর রহিমের এমন হাসিখুশি ছবি দুশ্চিন্তা কিছুটা কমাবে। ছবি: শামসুল হক

কেউ বলেন বিবিসিরটা ভালো। কারও কাছে ‘মেট অফিস’ ঠিক মনে হয়। কেউ আবার আইফোনের অ্যাপকে যথেষ্ট মনে করেন। যে যেটার ওপরই আস্থা রাখুন না কেন, এই বিশ্বকাপে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ওপর চোখ রাখছেন না, এমন কেউ নেই।

ব্রিস্টলে বৃষ্টির কাছে ‘হেরে’ যাওয়ার পর বাংলাদেশ দলের চোখও এখন আকাশে আকাশে ঘুরছে। কাল এই প্রতিবেদন লেখার সময়ের পূর্বাভাস, আজ এখানে বৃষ্টি নেই। বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচটা ঠিকঠাক হয়ে যাবে। কিন্তু প্রবাদই তো আছে, এই দেশে তিন ‘ডব্লিউ’ নিয়ে কোনো অনুমান খাটে না। ওয়ার্ক, ওয়েদার ও উইমেন।

পূর্বাভাসের ওপর আস্থা রাখলে নিজ দায়িত্বে রাখুন। পরে বোকা বনে গেলে কারও কিছু করার থাকবে না। এক রাতের মধ্যেই ঘটে যেতে পারে বিরাট ওলট-পালট। আবার না–ও ঘটতে পারে। দেখা গেল পূর্বাভাসই ঠিক। কাল কুপার অ্যাসোসিয়েটস মাঠের প্রেসবক্সে বসে যখন এই প্রতিবেদন লেখা শুরু হলো, তখন বাইরে ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টি। উইকেট কাভারে ঢাকা। এর মধ্যেই ফিল্ডিং অনুশীলন চলছিল বাংলাদেশ দলের। প্রতিবেদন লেখার শেষ দিকে আবার ঝলমলে রোদ। বোলার-ব্যাটসম্যানরা নেট প্র্যাকটিস করছেন।

ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বৃষ্টি এমনিতেই একটা বাড়তি চিন্তা। টন্টনে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সমারসেটের কাউন্টি মাঠ। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেরই সবচেয়ে ছোট মাঠ এটি। ব্যাটসম্যানরা চাইলেই বলটাকে আকাশে ভাসিয়ে দিতে পারেন। এমন মাঠে প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ মানে বোলারদের ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কা।

এমন নয় যে এ মাঠে হওয়া বিশ্বকাপের আগের দুই ম্যাচে সে রকম রানবন্যা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের কিছুটা দুর্বল বোলিংয়ের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ‘পাওয়ার হিটার’ ব্যাটসম্যানরা নিশ্চয়ই বসে থাকবেন না। সমান ৩ পয়েন্ট নিয়ে মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল। নিজেদের শক্তির জায়গাটা পুরো কাজে লাগিয়ে ক্যারিবীয়রা চাইবে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলতে। কাল অনুশীলনের ফাঁকে মাঠে দাঁড়িয়েই ইয়ান বিশপ অনেকক্ষণ কথা বলছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের সঙ্গে। হোল্ডারও খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন অগ্রজের কথা। বিশ্বকাপে ধারাভাষ্য দিতে আসা বিশপ নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু টিপসই হয়তো দিলেন অধিনায়ককে। কিন্তু নেটে তখন ধুমধাড়াক্কা শট খেলার অনুশীলন চলছিল, সেটির জন্য ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের কোনো টিপস লাগে না।

বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির কথা, চোটের কারণে আন্দ্রে রাসেল না–ও খেলতে পারেন ম্যাচটা। কাল নেট প্র্যাকটিসে চোট পেয়েছেন এভিন লুইসও। সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য চোট-আঘাতের প্রশ্নে খুব বিচলিত মনে হয়নি হোল্ডারকে। রাসেলের অবস্থা উন্নতির দিকেই বললেন। আজ ম্যাচের আগে অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁকে খেলাবেন কি না। লুইসের ব্যথাও নাকি সামান্য।

পরশু মুশফিকের হাতের চোট চিন্তায় ফেলেছিল বাংলাদেশকেও। কাল তাঁর অনুশীলনে প্রত্যাবর্তন শঙ্কা দূর করেছে। সাকিব আল হাসানের ঊরুর ব্যথাও এখন নেই। তার মানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে একাদশে নেওয়ার জন্য সবাইকেই হাতে পাচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু সেই ১১ জন কারা, সেটি কাল পর্যন্ত স্বাভাবিক কারণেই খোলসে ঢাকা ছিল। অবশ্য অনুমান করা কঠিন নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে স্পিন বোলিংয়ের ওপর বেশি নির্ভরতা থাকবে বাংলাদেশের। সে ক্ষেত্রে আগের তিন ম্যাচের দলটাই আজ মাঠে নামলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। অবশ্য দল না বললেও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা একাদশ গঠনের ফর্মুলাটা বলে দিলেন। মাঠের আকৃতি, উইকেটের ধরন, আবহাওয়ার মতিগতি আর প্রতিপক্ষ বুঝেই নাকি ১১ জন ঠিক করবেন তাঁরা।

এসবের কোনোটি বাদ দিয়ে অন্য কিছু ভাবনায় রেখে কখনো কোনো দল একাদশ ঠিক করেছে কি না, জানা নেই। তাই মনে হতে পারে, মাশরাফি বুঝি একাদশের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতেই ওভাবে বললেন। কিন্তু বাস্তবতা আসলে ওটাই। বাংলাদেশকে অন্তত তিনটি বিষয় মাথায় রেখেই সাজাতে হচ্ছে এই ম্যাচের একাদশ। প্রথমত, প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয় পেসারদের বিপক্ষে সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অভিজ্ঞতা ভালো। সর্বশেষ আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজ, তার আগে হোম সিরিজের ফলাফলই সেটিই বলছে। আরও সহজ হিসাব—দুই দলের সর্বশেষ ১০ ম্যাচের ৭টিতেই তো জিতেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ত, মাঠের আকৃতি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাফল্যের ছকটা বাংলাদেশ স্পিন দিয়েই আঁকে বরাবর। কিন্তু টন্টনের ছোট মাঠে স্পিননির্ভরতা বিপদে ফেলবে না তো! আর আবহাওয়ার কথা তো বলা হলোই। মাঝপথে বৃষ্টি এসে যদি ম্যাচে ডাকওয়ার্থ–লুইস সাহেবকেও নিয়ে আসে, তখনকার পরিস্থিতি সামলানোর মতো লোকও তো চাই দলে!

টন্টনের ম্যাচের আগে জটিল হিসাবের মধ্য দিয়েই যেতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। কিন্তু লক্ষ্যটা বেশ স্পষ্ট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা চাই। ২০১৯ বিশ্বকাপে নাক ভাসিয়ে রাখতে যে সেটির বিকল্পও নেই বাংলাদেশের!