বিশ্বকাপ ক্রিকেট জমে উঠেছে

নির্মলেন্দু গ‌ুণ
নির্মলেন্দু গ‌ুণ

খেলা নিয়ে লিখতে হবে— চিন্তাটা মাথার ভেতরে থাকলে যতই চিন্তাটাকে ঠেলে মাথার এক পাশে সরিয়ে রাখি না কেন, খেলা দেখার নির্ভেজাল আনন্দে ঘাটতি পড়ে। আমি ২০১১ সালে ঢাকায় বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলাকালে শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে প্রথম আলোর জন্য একদিন স্পট রিপোর্টিং করেছিলাম। জাস্ট অভিজ্ঞতা লাভের জন্য করা। কাজটা কঠিন এবং অতিশয় বিরক্তিকর বলে মনে হয়েছিল আমার।

একবার গাজী টিভির ভাষ্যকার হিসেবেও কোনো একটি খেলার ধারাভাষ্য দিয়েছিলাম কিছুক্ষণের জন্য। ক্রিকেট ভাষ্যকাররা যে বিশেষ ধরনের মাইক্রোফোনটি মুখের সামনে বিশেষ ভঙ্গিতে ধরে রেখে খেলার ধারাভাষ্য প্রদান করেন, সহধারাভাষ্যকারের সঙ্গে হাসি-মশকরা করেন, রঙ্গ-তামাশা করেন, সেই মাইক্রোফোনটি হাতে নিলে কেমন লাগে, কথা বলতে কেমন লাগে—এই অনুভূতি নিজের হাতে, নিজের মুখে যাচাই করে দেখাটাই ছিল আমার উদ্দেশ্য। এটা ছিল আমার নেশার অংশ, পেশার অংশ নয়।

তাই পেশাদার ক্রিকেট সাংবাদিক বা ক্রিকেট ভাষ্যকার, যাঁরা ক্রিকেট নিয়ে লেখেন এবং ক্রিকেটের ধারাভাষ্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে নিজেকে কখনো ভাবিনি। কৌতূহলের অবসানে শিশুরা যেমন তাদের প্রিয় খেলাগুলো পরিত্যাগ করে, আমিও তেমনি ক্রিকেটের স্পট রিপোর্টিং এবং ভাষ্যকারের মাইক্রোফোন পরিত্যাগ করেছি। এ পৃথিবী একবারই পায় তারে, পায় নাকো আর। তাতে ক্রিকেটের সঙ্গে আমার অন্তরের ভালোবাসার সম্পর্কের কোনো হেরফের হয়নি। এই ৭৫ বছরে পদার্পণ করার পরও, এবারের চলতি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রতিটি খেলাই ২৫ বছরের তরুণ-তরুণীদের মতোই আমাকে টিভির সামনে বসিয়ে রেখেছে। জয়-পরাজয়ের উত্তেজনায় আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে এবং আমি আনন্দ পাচ্ছি। খুব আনন্দ পাচ্ছি।

এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া প্রতিটি দলই প্রতিটি দলের সঙ্গে খেলার সুযোগ পাচ্ছে বলে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দ্বাদশ আসরটি দারুণ জমে উঠেছে। ২২ জুনের দুটি খেলাকেই এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শুধু নয়, এযাবৎকালের সব বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেরা খেলা, ক্লোজেস্ট ম্যাচ বলে আমার মনে হয়েছে। এবারের আসরের এখন পর্যন্ত অপরাজিত দুটি দল নিউজিল্যান্ড ও ভারত। এই দুই দলের বিরুদ্ধে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা নবাগত আফগানিস্তান এবং ১৯৭৯-র পর আর বিশ্বকাপের ছোঁয়া না পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে যে খেলা খেলেছে, আমি একই দিনে পরপর এ রকম দুটো উত্তেজনাপূর্ণ সমশক্তির ক্রিকেট ম্যাচ আগে কখনো দেখিনি। শেষ পর্যন্ত যদিও পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থাকা দুটি অপরাজিত দলই জিতেছে, কিন্তু ১১ রানে ভারতের কাছে আফগানিস্তানের হার বা ৫ রানে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হারটাকে জয়ের অধিক বলেই মনে হয়েছে আমার। এ রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলার কথা কে ভেবেছিল? আমি অন্তত ভাবিনি। এ রকম স্মরণীয় খেলা উপহার দেওয়ার জন্য আমি আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে অভিনন্দন জানাই।

পয়েন্টে সমান হলেও নেট রানরেটে এগিয়ে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর সুখস্মৃতি আজ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে উজ্জীবিত করবে বলেই মনে করি। বিশ্বকাপ জেতার চাইতেও হারানো পঞ্চম স্থানটি পুনরুদ্ধার করাই এখন জরুরি।