কার সাপোর্টে যাব, গেলেই-বা কী পাব

রফিকুন নবী
রফিকুন নবী

এই লেখাটি যখন ছাপা হবে, তখন প্রথম সেমিফাইনালে কে কী করল, তা জানা হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু গোলমাল বাধিয়েছে বৃষ্টি। সেমিফাইনাল টেনে নিয়ে এসেছে আজ পর্যন্ত। প্রথম সেমিফাইনালের দুই দল ভারত-নিউজিল্যান্ড দুই দলের টেনশনই তাই দীর্ঘ হচ্ছে কিছুটা। টেনশনে থাকছে অপেক্ষমাণ অন্য দুই দলও।

শুধু টেনশন নেই আমাদের। নিজ দলের খেলা শেষে আমরা এখন হেব্বি ফ্রি। আমি তো এখন বাকি খেলাগুলোর ব্যাপারে একেবারে নির্লিপ্ত দেখনদার। শুধুই দর্শক। কারণ, আমার তেমন দুর্বলতা অন্য কোনো দলের জন্য নেই।

যে খুশি ফাইনালে উঠুক, জিতুক, হারুক, আনন্দিত হোক বা মন ভেঙে সাত খণ্ড হোক—আমার তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। খেলাগুলো আকর্ষণীয় হলে, ভালো হলে টিভির সামনে বসা হবে, নইলে না।

তবে আগের খেলাগুলোর কথা ভুলতে পারছি না। যেমন পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে হঠাৎ শক্তিধর হয়ে গিয়েছিল কেমন করে, শ্রীলঙ্কা শেষমেশ গড়িয়ে-পড়িয়ে বাংলাদেশের ওপরে উঠে গেল কেমন করে নবশক্তি পেয়ে ইত্যাদি। বিশেষ করে পাকিস্তান। পৌরাণিক গল্প ‘স্যামসন-দেলিলাহ’র মহাশক্তিধর স্যামসনের হারিয়ে যাওয়া শক্তি যেমন একসময় ফিরে পেয়েছিল, সেই রকমের ঘটনা। বহু আগে বিশ্বকাপ জেতার জোশটা যেন আবার ফিরে আসতে শুরু করেছিল। আর সেটা আমাদের ওপর খুব সাফল্যের সঙ্গে খাটিয়েছিল শেষ মুহূর্তে।

ভাগ্যিস, নিউজিল্যান্ড আগেভাগে বেশি বেশি রানরেট নিয়ে মইয়ের ওপর ধাপে বসে গিয়েছিল, তা না হলে সেমিতে বিশ্বকাপজয়ী তিনটি দল থাকার ঘটনা ঘটত। শ্রীলঙ্কাও প্রায় গোলিয়াথদের মতো বীরত্ব দেখাতে শুরু করেছিল। কিন্তু তত দিন টুর্নামেন্টের গাড়ি শেষ স্টেশনের দিকে চলে গেছে। ওদের আর দৌড়ে গাড়ি ধরা হয়নি। কিন্তু ১ পয়েন্ট বেশি পেয়ে আমাদের ওপরে উঠে গেছে।

আমরা পয়েন্ট তালিকায় শেষমেশ আটে। শেষ মুহূর্তে সমান পয়েন্ট নিয়েও নেট রানরেটের হিসাবে আমাদের টপকে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

এই দক্ষিণ আফ্রিকা ভালোই কাণ্ড ঘটাল। এবারের বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল তাদের দিয়ে। প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। হার দিয়েই শুরু তাদের। কিন্তু জয় দিয়ে ৭ পয়েন্টের প্রাপ্তিটায় শেষ।

তো আমাদের ছেলেরা ব্যক্তিপর্যায়ে বেশ কজন ভালো খেলেছে, কিন্তু দল রয়ে গেছে আটে।

এসব তো ভেবে আর লাভ নেই। লাভ নেই সেমিফাইনাল আর ফাইনাল নিয়ে ভাবারও। ভাবার দিকটি এখন আষ্টেপৃষ্ঠে ৪টি দলের। অবশ্য এই ৪ দল নিয়ে ভাবাভাবিটা বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই ছিল। কানাঘুষা থেকে শুরু করে ক্রিকেট-বিশ্লেষকদের কথাবার্তায়ও এই চার দলই যে সম্ভাব্য সেমিফাইনালিস্ট, তা শোনা যাচ্ছিল। বিশ্বকাপ জেতা পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কাকে ধর্তব্যজ্ঞান করতে তেমন দেখিনি।

শেষতক যা ঘটল, তাকে বলা যায় ভালোই ম্যানেজ হয়েছে সেমিফাইনাল। দুটি দল রয়েছে একাধিকবার বিশ্বকাপ জেতা—ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। বাকি দুটি দেশের নামে ‘ল্যান্ড’ শব্দ যুক্ত—ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। কাপ জেতার স্বপ্ন দেখছে তারা।

প্রথম দুটির সঙ্গে তুলনা করলে যা ভাবনায় আসে, তা হলো যে তারা ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতে জিতে হাত পাকিয়ে রেখেছে। তাদের প্রতিযোগিতা—‘কে আরও কতবার জিততে পারে’ তেমন।

সেমিফাইনালটা জমত যদি অস্ট্রেলিয়া আর ভারতের মুখোমুখি হওয়াটা প্রথমেই হতো। তবে সেমিটা যেভাবে সাজানো-গোছানোমতো ধরন পেয়ে গেছে, তাতে ফাইনালে দুই দল মুখোমুখি হলে অবাক হব না।

ইংল্যান্ডের কাপ জয়ের চান্সটা খুবই জোরদার স্বাগতিক দেশ হিসেবে। স্বাগতিকতার চাপ সামাল দিতে পারলে কাপটা এবার হাতছাড়া না-ও হতে পারে।

সবচেয়ে দুর্ভাগা দল নিউজিল্যান্ড। এবার নিয়ে আটবারের সেমিফাইনালিস্ট, একবার ফাইনালেও যাওয়া দল।

এবার আসল কথাটি বলি। নিজ ভাবনার কথা। খুশি হব যদি কাপটি যেকোনো নতুন ঘরে ঢোকে, নতুন হাত খুঁজে পায়।