শুধু শুধু ৫০ লাখে 'বিক্রি' হননি তিনি

জাতীয় ও ক্লাব উভয় জার্সিতেই উজ্জ্বল রবিউল হাসান। ফাইল ছবি
জাতীয় ও ক্লাব উভয় জার্সিতেই উজ্জ্বল রবিউল হাসান। ফাইল ছবি
তিন মৌসুম ধরে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘে খেলছেন মিডফিল্ডার রবিউল হাসান। এই বছর প্রিমিয়ার লিগে সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন। বিশ্বস্ত সূত্রমতে, উদীয়মান এই ফুটবলার আগামী মৌসুমের জন্য ৫০ লাখ টাকায় বসুন্ধরা কিংসে নাম লিখিয়েছেন।


বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ জেমি ডেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, লিগে কোন খেলোয়াড়ের খেলায় মুগ্ধ হয়েছেন? তাঁর মুখ থেকে বের হওয়া প্রথম নামটাই রবিউল হাসান। লিগের প্রথম পর্বে দুর্দান্ত খেলা রবিউলকে লিগের শেষের দিকে আর মাঠে দেখা যায়নি বলে হতাশাও লুকাননি কোচ। তবে বেশ কিছু ম্যাচ খেলতে না পারলেও এই মিডফিল্ডারের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা ঠেকাতে পারেননি কেউ।

এবারের লিগে এতটাই উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছেন রবিউল, যে আরামবাগ থেকে তাঁকে ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে নিজেদের দলে ভিড়িয়েছে বসুন্ধরা কিংস। নতুন মৌসুমের দলবদল কাগজে-কলমে শুরু হয়নি এখনো। কিন্তু দলগুলো আগেভাগেই কাজ গুছিয়ে এনেছে। চলতি মৌসুমের মাঝপথেই খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তি সেরে নিয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্র অনুযায়ী বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের আগামী মৌসুমের জন্য দল গুছিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় বেশ বড় দান মেরেছে রবিউলকে টেনে এনে।

তিন মৌসুম ধরে আরামবাগের জার্সিতে খেলছেন জাতীয় দলে সবে আলো ছড়ানো শুরু করা মিডফিল্ডার রবিউল। আরামবাগের জার্সিতে শেষ দুই মৌসুম তো কেটেছে স্বপ্নের মতো। ২০১৮ সালে আরামবাগকে এনে দিয়েছেন স্বাধীনতা কাপের শিরোপা। সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ এবারের মৌসুমে তাঁর কাঁধেই তুলে দেওয়া হয় অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। তারুণ্য নির্ভর দলটিকে সামনে থেকে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে এসেছিলেন পয়েন্ট টেবিলের সম্মানজনক অবস্থানে। শেষ দিকে কিছুটা পথ হারালেও পঞ্চম স্থানে লিগ শেষ করেছে আরামবাগ।

মারুফুল হকের হাত ধরে তারুণ্য নির্ভর আরামবাগ বেশ কয়েকটি বড় ক্লাবকে পেছনে ফেলে পঞ্চম। আর ব্যক্তিগতভাবে ঝলক দেখিয়েছেন অধিনায়ক রবিউল। ১৬ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন দুইটি। তবে গোলের সংখ্যা দিয়ে এই মিডফিল্ডারকে বিচার করা যাবে না। মূলত প্লেমেকার হিসেবেই মাঠে তাঁর উজ্জ্বল পদচারণা। তারই স্বীকৃতি সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার। তবে পুরস্কার হিসেবে পাওয়া মোটরসাইকেলটা নিজে বুঝে নিতে পারেননি। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সময় রবিউল ছিলেন নিজের বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুরে।

সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হিসেবে আনন্দিত হলেও লিগের সব ম্যাচ খেলতে পারলে সেরা খেলোয়াড়ও হতে পারতেন বলে মনে করেন রবিউল, ‘এই মৌসুমে আমি অনেক পরিশ্রম করেছি। সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হয়ে সে ফলই পেয়েছি। তবে সবগুলো ম্যাচ খেলতে পারলে সেরা খেলোয়াড়ও তো হতে পারতাম।’ সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন কোস্টারিকার জার্সিতে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা বসুন্ধরা কিংসের দানিয়েল কলিনদ্রেস। বিশ্বকাপের একজন ফুটবলারকে পেছনে ফেলে স্থানীয় এক ফুটবলারের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্নকে বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। তবে তাঁর আত্মবিশ্বাসের প্রশংসা করতে হয়। এমনি এমনি তো আর ৫০ লাখ টাকা দিয়ে তাঁকে কিনে নেয়নি বসুন্ধরা!

জাতীয় দলের জার্সিতে রবিউলের পারফরম্যান্স তো আরও বেশি উজ্জ্বল। কখনো উইঙ্গার, কখনো বা আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে জেমি ডের অটোমেটিক চয়েজ এই তরুণ। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর নামের সঙ্গে লেগে গিয়েছে সুপার সাব ট্যাগ। তাঁর একমাত্র গোলেই লাওসকে হারিয়ে বিশ্বকাপের মূল বাছাইপর্বে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। এই রবিউলের গোলেই গত মার্চে কম্বোডিয়ার বিপক্ষে নমপেনে প্রীতি ম্যাচ জিতেছিল জেমি ডের দল।