ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে জয়ই চান সাকিব

সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসান

কেমন যেন এলোমেলো হয়ে পড়েছিল সব। সুখের সংসারে হঠাৎ শান্তির ভাটা। বিশ্বকাপে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ব্যর্থতার দায় নিয়ে চাকরি হারালেন কোচ স্টিভ রোডস। শ্রীলঙ্কা সফরে আরেক ধাক্কা, ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই বাংলাদেশ। আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেটটাই যেন পড়ে গিয়েছিল গ্রহের ফেরে। জাতীয় দলের মতো ‘এ’ দলও হারের বৃত্তে ঘুরপাক খেয়েছে। সাফল্য আসছিল না হাইপারফরম্যান্স ইউনিটের মতো দেশের ক্রিকেটের অন্য শাখা–প্রশাখা থেকেও। সঙ্গে বিপিএল আর সিনিয়র ক্রিকেটারদের সম্পর্কের টানাপোড়েনের খবর—কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট পার করছে অস্থির এক সময়।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ থেকে শুরু একমাত্র টেস্ট সেই অস্থির সময়টাকে বোতলবন্দী করারই উপলক্ষ। অন্তত সাকিব আল হাসান আর তাঁর দলের বিশ্বাস, এই টেস্ট দিয়েই আবার চেনা চেহারায় ফিরবে বাংলাদেশ। দলে নতুন নতুন কোচ এসেছেন। তাতে ড্রেসিংরুমের হাওয়া কিছুটা হলেও বদলেছে। নিজেদের গুছিয়ে নিতে শুধু প্রয়োজন একটি জয়।

সাকিব আল হাসানও সেটি খুব ভালো বুঝতে পারছেন। কাল টেস্ট–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক বলছিলেন, ‘যদি এই ম্যাচ ভালোভাবে জিততে পারি, অনেক কিছুই আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। তবে জয়টাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভালোভাবে আর খারাপভাবে; ১ রানে জিতলেও সেটি জয়, ১০০ রানে জিতলেও। ১ উইকেট হোক বা ১০ উইকেট, জয় জয়ই। জেতাটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’

ঘরের মাঠে টেস্ট, উইকেট কথা বলবে স্পিনারদের হয়ে। অধিনায়ক সাকিবও স্পিন–সহায়ক উইকেটেই নিজের সেরা অধিনায়কত্বটা করেন। পছন্দের কন্ডিশন, পছন্দের একাদশ, সবকিছুই সাকিবের পক্ষে। তবে অতি স্পিন–নির্ভরতা আবার তুলে ধরে বাংলাদেশ দলের পেস দুর্বলতাটাকে। শুনতে হয় সমালোচনা। তবে এ ক্ষেত্রে সাকিবের দর্শন সব সময়ই ভিন্ন, ‘ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া চার পেসার খেলায়, তখন তো সমালোচনা হয় না। যারাই খেলবে, আমাদের চেষ্টা থাকবে ২০ উইকেট নেওয়ার। আমাদের স্পিনাররা যখনই উইকেটের সাহায্য পেয়েছে, তখনই ভালো করেছে।’

সাগরিকার হাওয়া বাংলাদেশের পতাকাটাকে এবার হয়তো একটু বেশিই দোলাবে। অধিনায়ক সাকিব বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সের পর আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছেন। অনুশীলনে গত কয়েক দিন যথেষ্ট প্রাণচঞ্চল মনে হয়েছে তাঁকে। টেস্টের আগের দিন দুই দলই করেছে হালকা অনুশীলন। তবে অন্য সিনিয়রদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনুশীলনে আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সিরিয়াস সাকিব। শরীরী ভাষায় ব্যাটে–বলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষুধাটা স্পষ্ট। সাকিব বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সহজ হবে টেস্টটা। সঙ্গে মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুমিনুল হক তো আছেনই। তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের ব্যাটিং তাকিয়ে থাকবে তাঁদের দিকেই। ঘরের মাঠে সর্বশেষ সিরিজে প্রত্যেকেই বড় রান পেয়েছেন। তামিম ছুটিতে থাকায় সৌম্য সরকারকে ওপেনিংয়ে দেখা যেতে পারে, সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরেই যিনি দেখা পেয়েছেন প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির।

সাকিবের পর্যবেক্ষণ, চট্টগ্রাম টেস্টে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে দুই দলের ব্যাটিং সামর্থ্যই। নিজের ব্যাটসম্যানদের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখার ঘোষণাও কাল তিনি দিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনে।

অবশ্য আফগানিস্তানও এখানে খেলতেই এসেছে। বাংলাদেশে আসার আগে রশিদ খানের দল অনুশীলন ক্যাম্প করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। উদ্দেশ্য, সেখানকার তীব্র গরমে অনুশীলন করে বাংলাদেশের অপেক্ষাকৃত কম গরমটাকে সহনীয় করে তোলা। নিজেদের প্রথম দুই টেস্টের একটিতে জেতা ও একটিতে হারা দলটা বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টটিকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, বোঝাই যায়। তাতে আফগান ক্রিকেট–উত্থানের রূপকথায় আরেকটি সাফল্যের গল্পই নিশ্চয় লিখতে চাইবেন রশিদ খান। বাংলাদেশের মতো তাঁদেরও মূল অস্ত্র স্পিন। টেস্টে এখন পর্যন্ত ৩ ইনিংস বল করে আফগানরা ৩ ইনিংসেই অলআউট করেছে প্রতিপক্ষকে।

অধিনায়ক রশিদ খানের দাবি, ‘প্রথম টেস্টের চেয়ে দ্বিতীয় টেস্টে আমরা ৭০-৮০ ভাগ ভালো পারফরম্যান্স করেছি। যতই খেলব, ততই শিখব ও উন্নতি করব।’

উন্নতির সিঁড়িতে আরেকটা ধাপ এগোতে সাকিবের মতো জয়ে চোখ রশিদ খানেরও। আফগানিস্তানকে টেস্ট জাতি হিসেবে গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ যে হাতে নিয়েছেন তিনি!