ঘরে-ঘরের বাইরে অস্ট্রেলিয়া এত ভালো, তলানিতে বাংলাদেশ

টেস্টে দেশে-দেশের বাইরের সাফল্যে অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে এগিয়ে, পিছিয়ে বাংলাদেশ। প্রথম আলো ফাইল ছবি
টেস্টে দেশে-দেশের বাইরের সাফল্যে অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে এগিয়ে, পিছিয়ে বাংলাদেশ। প্রথম আলো ফাইল ছবি

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পথ চলার ২০ বছর পূর্ণ হবে আগামী নভেম্বরে। ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সংস্করণে বাংলাদেশের পথ চলাটা মসৃণ ছিল না কখনোই। ১১৯ ম্যাচে ১৪ জয়ের বিপরীতে ৮৯ হার। অনুজ্জ্বল পরিসংখ্যানের বিশ্লেষণ অনেকই হয়েছে। ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর ‘ক্রিকেট মান্থলি’ বিশ্লেষণ করেছে ১৪৩ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ঘরে-ঘরের বাইরে কোন দল সবচেয়ে সফল, কারা ধারাবাহিক ব্যর্থ।

ঘরের মাঠে
ঘরের মাঠে খেলা মানে উইকেট-কন্ডিশন নিয়ে খুব বেশি ভাবার দরকার হয় না। মাঠ-মাঠের বাইরের সবকিছুই থাকে চেনা। সঙ্গে দর্শক সমর্থন তো থাকেই। দেশের মাঠে টেস্ট খেলা মানে প্রতিপক্ষের তুলনায় এক কদম এগিয়ে থেকেই সিরিজ শুরু করার সুবিধা। স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা সবচেয়ে ভালো লাগাতে পারে অস্ট্রেলিয়া। ঘরের মাঠে তারাই সবচেয়ে সফল। দেশে খেলা ৪২৬ টেস্টে জিতেছে ২৪৬টিতে, ড্র ৮১, হার ৯৯টিতে। দেশে সফল দলগুলোর মধ্যে দুইয়ে আছে পাকিস্তান—১৫৪ টেস্টে জিতেছে ৫৮টিতে; ড্র ৭৪ আর হেরেছে ২২টিতে। পাকিস্তানের পরই আছে ভারত। ২৭২ টেস্টে ১০৬টিতে জয়, ড্র ১১৪ আর হার ৫২টিতে। ঘরের মাঠে টেস্ট জয়ের পরিসংখ্যান বাংলাদেশ তলানিতে। খেলেছে ৬২ টেস্ট, জিতেছে ৯টিতে, ড্র করেছে ১৩ আর হেরেছে ৪০টিতে।

দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়েও সবচেয়ে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। ১১৬ সিরিজের মধ্যে ৭৬টিতে জিতেছে তারা। ড্র ১৭টি আর হেরেছে ২৩টিতে। দেশের মাটিতে সিরিজ জয়ে অবশ্য দুইয়ে আছে ভারত—৮২ টেস্টের ৪৮টিতে জয়। ড্র ১৭ আর হেরেছে ১৭টিতে। এ তালিকাতেও বাংলাদেশ তলানিতে—৩২ সিরিজের মাত্র তিনটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। ৬টি ড্র আর হার ২৩টিতে। গত ২০ বছরের পরিসংখ্যানেও বাংলাদেশ যে সবার নিচে, সেটি না বললেও চলছে। এই দুই দশকে ১১৫ টেস্টে জিতেছে ৮৩টি জিতে এ তালিকাতেও অস্ট্রেলিয়া আছে সবার ওপরে। তবে ধারাবাহিক সাফল্যে ভারত পেছনে ফেলেছে ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তানকে। ৯৭ টেস্টে ৫৮টিতে জিতে ভারত আছে দুইয়ে। ইংল্যান্ড ১৩৭ টেস্টে জিতেছে ৭৯টিতে।

ঘরের বাইরে
দেশের বাইরে খেলা মানে শুধু প্রতিপক্ষই নয়, সব দলকেই ভাবতে হয় উইকেট, কন্ডিশনসহ আরও অনেক কিছু নিয়ে। কখনো খেলতে হয় অকল্যান্ডের মতো ঠান্ডায়, কখনো কলম্বোর মতো খুব গরমে কিংবা বৃষ্টি প্রবণ ওল্ড ট্রাফোর্ডে। স্বাগতিকদের চাহিদা অনুযায়ী কখনো খেলতে হয় ঘূর্ণি উইকেট, কখনো পেসবান্ধব, গতিময় উইকেট, অতিরিক্ত বাউন্স অথবা একেবারে ন্যাড়া উইকেটে। ভ্রমণ ধকল, ভিন্ন সংস্কৃতি, খাবার, থাকার ব্যবস্থা—কত কিছুই-না রাখতে হয় ভাবনায়। টেস্টে নিরপেক্ষ আম্পায়ারের ইতিহাসও বেশি দিনের নয়। এত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বিদেশে ধারাবাহিক টেস্ট জেতা অবশ্যই বড় সাফল্য। আর এখানেও এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। বিদেশে খেলা ৩৯২ টেস্টে তারা জিতেছে ১৪১টি। ড্র ১৩০টি আর হেরেছে ১২১টি। বিদেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের পরিসংখ্যানও যথেষ্ট উজ্জ্বল—৪৯৫ টেস্টে তারা জিতেছে ১৫১টিতে। ১৯৩ টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছে ৫৬টিতে। সাফল্যের হারে প্রোটিয়ারা আছে তিনে। গত ২০ বছরের হিসেবেও অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা শীর্ষ দুইয়ে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হয়েছে ভারতের পারফরম্যান্সে। ১১৫ টেস্টের ৩৮টিতে জিতে ইংল্যান্ডকে পেছনে ফেলে ভারত উঠে এসেছে দুইয়ে। এ তালিকায় যথারীতি বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে, ৫৬ টেস্টে জিতেছে মাত্র ৪টি। ড্র ৩টি, বাকি ৪৯টিতেই হার।

বিদেশে টেস্ট সিরিজ জয়ের পরিসংখ্যানেও অস্ট্রেলিয়া সবার আগে। ১০৮ সিরিজের ৫০টিতে জিতেছে তারা। ড্র ১৬, হেরেছে ৩৮টিতে। বাংলাদেশ বিদেশের মাঠে যে ২৯টি সিরিজ খেলেছে, জিতেছে মাত্র ১টি (২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে)। ড্র করেছে ২টি আর হার বাকি ২৬টিতে। গত চার বছরে পারফরম্যান্সের গ্রাফ কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও সামগ্রিক পরিসংখ্যান যেন বাংলাদেশকে ভেংচিই কাটছে—ঘরে, ঘরে-বাইরের রেকর্ড কোনোটিই যে দৃষ্টিগ্রাহী নয়!