সাত গোলের লজ্জায় ডুবল ব্রাজিল

কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন অস্কার। সামনেই উল্লাসে মেতে উঠেছেন জার্মানির খেলোয়াড়েরা। ছবি: রয়টার্স
কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন অস্কার। সামনেই উল্লাসে মেতে উঠেছেন জার্মানির খেলোয়াড়েরা। ছবি: রয়টার্স

১৯৫০ সালের মারাকানা নাকি ২০১৪ সালের বেলো হরিজোন্তে? কোনটা বেশি মর্মান্তিক? কোনটা বেশি বেদনাদায়ক ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের জন্য?

১৯৫০ সালে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে শুধু ড্র করলেই প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের স্বাদ পেত ব্রাজিল। কিন্তু মারাকানার দুই লাখ সমর্থককে কাঁদিয়ে, পুরো জাতিকে শোকে আচ্ছন্ন করে দিয়ে ব্রাজিল ম্যাচটা হেরেছিল ২-১ গোলে।

এবার নিজেদের মাটিতে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত বিশ্বকাপে ব্রাজিলের স্বপ্নভঙ্গ হলো আরও একধাপ আগে। সেমিফাইনালে। সেটাও যে এমনভাবে হবে তা হয়তো কারো কল্পনাতেও আসেনি। সেমিফাইনালের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এসে যেন খেলাটাই ভুলে গিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা। স্বাগতিকদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করে ৭-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে জিতেছে জার্মানি। চলে গেছে এবারের বিশ্বকাপের ফাইনালে।

এটাই ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের রেকর্ড। এর আগে ১৯২০ সালে উরুগুয়ের বিপক্ষে ৬-০ ব্যবধানে হেরেছিল ব্রাজিল।
ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি নেইমার। দুই ম্যাচে দুইটি হলুদ কার্ড দেখে আজ মাঠে নামতে পারেননি ব্রাজিলের নিয়মিত অধিনায়ক থিয়াগো সিলভাও। এই দুইজনই ছিলেন এবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের অন্যতম প্রধান ভরসা। তাঁদের অনুপস্থিতি নিশ্চিতভাবেই ভুগিয়েছে সেলেসাওদের। কিন্তু ৭-১ গোলের বিশাল ব্যবধানের হারটা কোনো কিছু দিয়েই ব্যাখ্যা করা যায় না।
ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছিল প্রথম ২৯ মিনিটের মধ্যেই। তখনই ৫-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিল জার্মানি। টমাস মুলার ম্যাচের প্রথম গোলটি করেছিলেন ১১ মিনিটের মাথায়। টনি ক্রুসের কর্নার কিক থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন মুলার। বলটা মাটিতেও পড়তে দেননি জার্মান স্ট্রাইকার। দারুণ এক শটে সেটি পাঠিয়ে দিয়েছেন ব্রাজিলের জালে।
২৩ থেকে ২৯; এই সাত মিনিটের মধ্যেই ব্রাজিলকে রীতিমতো লজ্জায় ডুবিয়েছেন জার্মান ফুটবলাররা। ২৩ মিনিটে ইতিহাসগড়া গোল করেছেন মিরোস্লাভ ক্লোসা। এটি ছিল ম্যাচে জার্মানির দ্বিতীয় গোল। এই গোল করে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদোকেও ছাড়িয়ে গেছেন ক্লোসা। ১৬ গোল নিয়ে এককভাবেই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে গেছেন এই জার্মান স্ট্রাইকার।
পরের চার মিনিটের মধ্যেই ব্যবধান ৪-০ করে দিয়েছেন টনি ক্রুস। ২৪ ও ২৬ মিনিটের মাথায় দুইটি গোল করেছেন এই জার্মান মিডফিল্ডার। তিন মিনিট পরে সবাইকে হতবাক করে দিয়ে ব্রাজিলের জালে আরও একবার বল জড়িয়ে দিয়েছেন সামি খেদিরা। ২৯ মিনিট পরেই স্কোরলাইন: ব্রাজিল ০-৫ জার্মানি। প্রথমার্ধটা শেষ হয়েছিল এই স্কোরলাইন নিয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধে গোল করার খুব বেশি আগ্রহও যেন ছিল না জার্মানির। অন্যদিকে ব্রাজিল বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু সেগুলো কাজে লাগাতে পারেননি বার্নার্ড-ফ্রেড-অস্কাররা।
৬৯ মিনিটে উল্টো ব্রাজিলের জালেই আরেকবার বল জড়িয়ে দেন আন্দ্রে শুরলে। ১০ মিনিট পর আরও একটি গোল করেন এই জার্মান ফরোয়ার্ড। ৭-০ গোলে এগিয়ে যায় জার্মানি।
খেলা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ব্রাজিলের পক্ষে সান্তনাসূচক গোলটি করেছেন অস্কার।