ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন লতিফ

রশিদ লতিফ
রশিদ লতিফ

ক্রিকেটে ফিক্সিংয়ের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার রশিদ লতিফ। ১৯৯৪ সালে ক্রিকেটে ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগ প্রথম তুলেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক এই অধিনায়ক। ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে সোচ্চার লতিফ এবার পাকিস্তান দলের বিরুদ্ধে ওঠা ফিক্সিংয়ের অভিযোগটা ভালো চোখে দেখছেন না। এর পেছনে ‘ষড়যন্ত্রের’ গন্ধ পাচ্ছেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সদ্যসমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজটি পাতানো ছিল বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ‘ডেইলি মেইল’। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটির কথা। সেন্ট লুসিয়ায় উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটি শেষ হয়েছিল টাই দিয়ে। খেলাটি টাই হবে—এই ফলাফলের ওপর নাকি অস্বাভাবিক হারে বাজি ধরেছিলেন জুয়াড়িরা। অভিযোগ উঠেছে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি নিয়েও। সেখানে ২৩৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম পাঁচ ওভারে একটি রানও সংগ্রহ করতে পারেননি দুই পাকিস্তানি ওপেনার। এ সময়ে আসা পাঁচটি রানই ছিল অতিরিক্ত থেকে পাওয়া। দুটি ম্যাচই আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটের কর্মকর্তারা তদন্ত করে দেখবেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
পিসিবির অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান নজম শেঠি ‘ডেইলি মেইল’-এর প্রতিবেদনকে ‘জঘন্য’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে অভিযোগটা ‘গুরুতর’ হিসেবেই দেখছেন রশিদ লতিফ, ‘এসব গুরুতর অভিযোগ। অবশ্যই ব্যাপারটার তদন্ত হওয়ার দরকার। পত্রিকাটিকে অবশ্যই তাদের বক্তব্যের সপক্ষে প্রমাণ দিতে হবে।’

প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হলে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডটির বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও দিয়েছেন পাকিস্তানের হয়ে ৩৭টি টেস্ট ও ১৬৬টি ওয়ানডেতে অংশ নেওয়া এই উইকেটরক্ষক, ‘পত্রিকাটি যদি প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে পিসিবির উচিত হবে ব্যাপারটা আদালতে নিয়ে যাওয়া। ওরা মামলা না করলে আমি নিজে তা করব।’

লতিফের অভিযোগ, পাকিস্তান ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা চলছে। ফিক্সিংয়ে শুধু পাকিস্তান নয়, অনেক দেশই জড়িত। অথচ একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে শুধু পাকিস্তানকে নিয়ে। গত জুন মাসে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রসঙ্গ টেনে নিজের ক্ষোভটা উগড়ে দিলেন ৪৪ বছর বয়সী লতিফ, ‘আইসিসির একজন কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছিলেন, “এ” গ্রুপের একটি ম্যাচ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু কেন এ সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হলো না? এটা সত্যি, আমাদের খেলোয়াড়দের অনেকে ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে ধরা খেয়েছে। কিন্তু কেন শুধু পাকিস্তানকে নিয়েই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়?’

গত এক দশকে ফিক্সিং কেলেঙ্কারি বেশ ভুগিয়েছে পাকিস্তানকে। দীর্ঘ দুই বছরের বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ২০০০ সালে সাবেক অধিনায়ক সেলিম মালিক ও পেসার আতাউর রহমানকে নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান। ২০১০ সালে লর্ডস টেস্টে স্পট ফিক্সিং করায় সালমান বাটকে ১০, মোহাম্মদ আসিফকে সাত ও মোহাম্মদ আমিরকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি। অবৈধভাবে অর্থ লেনদেন করায় এই তিন ক্রিকেটার যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও খাটেন। এখানেই শেষ নয়। কাউন্টিতে খেলতে গিয়ে ফিক্সিং করায় দানিশ কানেরিয়া ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেটে আজীবন নিষিদ্ধ হয়েছেন। পাকিস্তান ক্রিকেটেও নিষিদ্ধ আছেন একসময়কার এই তারকা লেগস্পিনার।

কানেরিয়ার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অবশ্য আপত্তি আছে লতিফের। তাঁর অভিযোগ, কানেরিয়ার বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে ওঠা অভিযোগের সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি ইসিবি। এর পরও তাঁকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইংল্যান্ড ফিক্সিং থেকে মুক্ত—নিজেদের এই ইমেজ তুলে ধরতেই ইসিবি এমনটা করেছে বলে বিশ্বাস ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো লতিফের।