জাহিদের হ্যাটট্রিকে সেমিতে চট্টগ্রাম আবাহনী

দারুণ হ্যাটট্রিকের পর জাহিদ। ছবি: শামসুল হক
দারুণ হ্যাটট্রিকের পর জাহিদ। ছবি: শামসুল হক

সেমিফাইনালে পা রাখতে চট্টগ্রাম আবাহনীর সামনে ছিল একটা শর্ত—করাচি ইলেকট্রিকের বিপক্ষে জিততেই হবে। দারুণভাবে সেই শর্ত পূরণ করল চট্টগ্রাম আবাহনী। জাহিদের হ্যাটট্রিকে করাচির দলটিকে ৪-২ গোলে হারিয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের সেমিফাইনালে পা রাখল স্বাগতিকেরা। 
তিন ম্যাচে দুই জয় চট্টগ্রাম আবাহনীর। প্রতিপক্ষের জালে দিয়েছে ছয় গোল, হজম করেছে চারটি। প্লাস দুই গোল গড় নিয়ে গ্রুপ ‘বি’ থেকে প্রথম দল হিসেবে শেষ চারের টিকিট এখন চট্টগ্রাম আবাহনীর হাতের মুঠোয়। কিছুক্ষণ পরই শুরু হতে যাওয়ার ঢাকা আবাহনী-কলকাতা ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের যেকোনো এক দল সেমিফাইনালে সঙ্গী হবে চট্টগ্রাম আবাহনীর। শেষ চারে জায়গা পেতে ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে ঢাকা আবাহনীকে জিততে হবে অন্তত দুই গোলের ব্যবধানে।
বড় জয়ের নেশায় শুরুতেই অলআউটে গেল শফিকুল ইসলাম মানিকের দল। করাচি ইলেকট্রিকের রক্ষণে আক্রমণের ঢেউ তুলে কোণঠাসা করে ফেলল প্রতিপক্ষকে। ৯ মিনিটে এমিলি দারুণভাবে বল নামিয়ে দেন নাইজেরিয়ার স্ট্রাইকার এলিটা কিংসলেকে। কিংসলের শটে জাল খুঁজে পেলেও ততক্ষণে বেজে উঠেছে অফসাইডের বাঁশি! তবে গোলের জন্য আর এক মিনিটও অপেক্ষা করতে হয়নি। ১০ মিনিটেই কিংসলে-জাহিদের যুগলবন্দীতে ১-০। কিংসলের ক্রসে জাহিদের শট প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে জালে। 
গোল পেয়ে উজ্জীবিত স্বাগতিকেরা ১৩ মিনিটেই করে ফেলল ২-০। এবারও জাহিদ-কিংসলের দারুণ রসায়ন। জাহিদের থ্রু ধরে কিংসলের কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ হতেই আরেকবার নেচে উঠল এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের হাজার কয়েক দর্শক। দুই গোলে এগিয়ে কিছুটা গাছাড়া ভাবই বুঝি এসে গিয়েছিল চট্টগ্রাম আবাহনীর রক্ষণে। অনেকটা দাঁড়িয়ে খেয়ে বসল গোল! ২৬ মিনিটে হায়াতুল্লাহর ক্রসে মোহাম্মদ রসুলের হেডে ২-১। 
দুই গোল করে এক গোল খাওয়া চট্টগ্রাম আবাহনীকে অলক্ষ্যে একটা সতর্ক ধ্বনিই বেজে উঠল। বড় ব্যবধানে এই ম্যচ জিততে না পারলে সেমিফাইনালে ওঠা নিশ্চিত নয়—এটাই ধরে নিয়েছিলেন সবাই। পরিস্থিতির দাবি মেটাতে তৃতীয় গোলে সন্ধানে নেমে আবারও সফল স্বাগতিক দল। ৩৩ মিনিটেই ধরা দিয়েছে সেই ক্ষণ। ডান দিক থেকে দূরের পোস্টে আসে কিংসলের ফ্রি কিক, করাচি ইলেকট্রিকের এক খেলোয়াড় বল ক্লিয়ার করতে গিয়েও পারলেন না। আলতো টোকায় পোস্ট ঘেঁষে বল জালে পাঠিয়ে নিজের দ্বিতীয় ও দলের তৃতীয় গোলটা করলেন জাহিদ। 
নাটকের তখনো বাকি ছিল অনেক। ৪১ মিনিটে লম্বা এক বল চট্টগ্রাম আবাহনীর বক্সে উড়ে এল, স্বাগতিক ডিফেন্ডার ইউসুফ ইসা বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে হাতে লাগালে পেনাল্টি, যা থেকে সহজেই ৩-২ করে ম্যাচটা জমিয়ে তোলেন রসুল। এই টুর্নামেন্টে এটি তাঁর চতুর্থ গোল। 
দ্বিতীয়ার্ধের ম্যাচটা হয়ে পড়ল কিছুটা ম্যাড়ম্যাড়ে। চট্টগ্রাম আবাহনী ঘর সামলানোর দিকেই দিয়েছে বেশি মনোযোগ। তবে ৬৬ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে ইউসুফ ইসা লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে চট্টগ্রাম আবাহনী নেমে আসে দশজনের দলে। তবু প্রাণপণ লড়ে রক্ষণটা তারা অক্ষতই রাখে। ‘বোনাস’ হিসেবে ৮১ মিনিটে পেয়ে গেল চতুর্থ গোলের দেখা। জাহিদের কর্নারে রেজাকে বক্সে ফেলে দেন করাচি ইলেকট্রিকের এক ডিফেন্ডার। জাহিদের নেওয়া পেনাল্টি প্রথম চেষ্টায় করাচির গোলরক্ষক গুলাম নবী রুখে দিলেও ফিরতি বল জালে ঠেলে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন ম্যাচে নয়ন কড়া নৈপুণ্য দেখানো জাহিদ, টুর্নামেন্টে যেটি তাঁর চতুর্থ গোল। তবে জাহিদকে ছাপিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা এলিটা কিংসলের হাতে।
সেমিফাইনালে উঠে খুশি চট্টগ্রাম আবাহনী কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক। আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যেই বলে গেলেন, ‘ চট্টগ্রামবাসীকে ভালো খেলা উপহার দিতে পেরে ভালো লাগছে। এখন লক্ষ্য ফাইনালে ওঠা।’