২৩ বছরের অপেক্ষা ঘুচল তাদের

নেপাল দলের হাতে ট্রফি তুলে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা।
নেপাল দলের হাতে ট্রফি তুলে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা।

এ যেন এক টুকরো কাঠমান্ডু! দশরথ স্টেডিয়াম ভেবে কেউ ভুল করলেও অবাক হওয়ার ছিল না। চারদিকে শুধুই নেপাল-নেপাল আওয়াজ! বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে আসা নেপালি শিক্ষার্থীরা তো ছিলেনই, বোনাস হিসেবে বাংলাদেশিরাও গলা ফাটিয়েছে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে তাই ‘হোম অ্যাডভানটেজ’ পেয়েছে নেপালই। ‘স্বাগতিকদের’ সুবিধা পাওয়া সেই নেপালই এবারের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে চ্যাম্পিয়ন। আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ফাইনালে ৩-০ গোলে নেপাল হারিয়েছে বাহরাইনকে। গোল করেছেন বিমল ঘারতি মাগার, বিশাল রায় ও নবযুগ শ্রেষ্ঠা।

১৯৯৩ সালে এই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই সর্বশেষ কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট জেতে নেপাল। সেবার দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের ফুটবলের ফাইনালে ভারতকে হারিয়েছিল তারা। ওই দলের খেলোয়াড় ছিলেন আজকের নেপালের কোচ বালগোপাল মহারজন। এবারও তিনি চ্যাম্পিয়ন দলে, শুধু মাঠের বদলে ডাগআউটে দাঁড়িয়ে। ২৩ বছর পর আবারও ইতিহাস গড়ল নেপাল।

সেমিফাইনাল থেকেই এই টুর্নামেন্টের দর্শক বাংলাদেশ। ফাইনালটা তাই শূন্য গ্যালারিতেই হবে, এমন আশঙ্কাও জেগেছিল অনেকের মনে। কিন্তু ফুটবল-পাগল বাংলাদেশের দর্শকেরা ঘরে বসে থাকেনি। বিকেল ৫টায় খেলা শুরু হওয়ার আগেই স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রায় হাজার পনেরো দর্শক। যদিও গত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশ ফাইনালে ওঠায় ছিল উপচে পড়া দর্শক। কিন্তু এবারও একেবারে কম হয়নি।

ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই এগিয়ে গিয়েছিল নেপাল। বক্সের সামান্য বাইরে থেকে অঞ্জন বিসতার হেড, প্রথম চেষ্টায় বাহরাইন গোলরক্ষক মাহবুব আলদোসরি ধরতে পারেননি। তাঁর মুঠো ফসকে বেরিয়ে যাওয়া বলে দুর্দান্ত প্লেসিংয়ে গোল করেন বিমল। দ্বিতীয়ার্ধে যেন আরও উজ্জীবিত নেপাল। ৫৩ মিনিটে দারুণ একটা সুযোগ নষ্ট করে সেমিফাইনালে নেপালের হ্যাটট্রিক নায়ক নবযুগ।


বক্সের মধ্যে বাহরাইন গোলরক্ষক মাহবুব আলদোসেরিকে একা পেয়েও বাইরে মারল। খেলায় ফেরার চেষ্টা করেছে বাহরাইন। ম্যাচের ৫৬ মিনিটে বাহরাইনের অধিনায়ক আবদুল আজিজের জোরালো শট দুর্দান্তভাবে ঝাঁপিয়ে বাঁচান নেপাল গোলকিপার বিকেশ। ম্যাচের ৮৮ মিনিটে অঞ্জন বিসতার ক্রস থেকে বিশাল করেন দ্বিতীয় গোল। শেষ মিনিটে নবযুগ কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকেছেন।

শীতের সন্ধ্যায় মাঠেও দুই দলের খেলোয়াড়রাও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। মাঠের মধ্যেই তর্কাতর্কি, মারামারিতে তিন তিনটি লাল কার্ড দেখেছেন খেলোয়াড়রা! ৮০ মিনিটে বাহরাইনের আহমেদ আল তোয়ানি যেন কুস্তি লড়লেন বিক্রম লামার সঙ্গে! কিন্তু রেফারি প্রাঞ্জল ব্যানার্জি কার্ড দিলেন আল থুয়ানি ও সুমন লামাকে। এরপর ম্যাচের শেষ মিনিটে বাহরাইন অধিনায়ক আবদুল আজিজ লাল কার্ড দেখেছেন।

ম্যাচ শেষে মাঠে নেপালের পতাকা নিয়ে ল্যাপ অব অনার দিলেন খেলোয়াড়রা। ম্যাচ পাতানো কেলেঙ্কারিতে টালমাটাল নেপাল যেন নবযুগদের হাত ধরে নতুন যুগেই শুরু করতে যাচ্ছে!
আর এই নেপালকে দেখে হয়তো হতাশায় পুড়ছেন মামুনুলরা!