ঈদের ছুটিতেই ব্যাগ গোছাচ্ছে কৃষ্ণা -সানজিদারা

দেশের পতাকা এভাবেই উর্ধ্বে তুলে ধরতে চায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৬ মহিলা ফুটবল দল। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু  স্টেডিয়াম থেকে তোলা ছবি।   –প্রথম আলো
দেশের পতাকা এভাবেই উর্ধ্বে তুলে ধরতে চায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৬ মহিলা ফুটবল দল। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম থেকে তোলা ছবি। –প্রথম আলো

গত রোজার ঈদটা ওরা বাবা-মায়ের সঙ্গে করতে পারেনি। এ জন্য ওদের মনে একটু হলেও হতাশা কাজ করছিল। ১৫-১৬ বছর বয়সে পরিবারের কাছ থেকে অন্তত ঈদের দিনে দূরে থাকা একটু বেশিই কষ্টকর। সেই ত্যাগ ওরা করেছিল এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্বে ওঠার স্বার্থে। সানজিদা, মার্জিয়াদের সেই শ্রম সার্থক হয়েছে। ওরা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ নিয়েই বাড়িতে গিয়েছিল বাবা মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে।

যদিও ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের নয় মেয়ে ফুটবলার যাওয়ার পথে বিড়ম্বনায় পড়ছে, সহযাত্রীদের কটু কথা শুনেছে লোকাল বাসে। এ নিয়ে তোড় পাড় হয়ে গিয়েছিল গত সপ্তাহে। সেই ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে আগামী পরশু ঢাকায় মেয়েদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। পরদিন ফেডারেশন ভবনে ওঁদের সংবর্ধনা দেওয়ার কথা পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের পক্ষ থেকে। এ জন্য মেয়েরা ঈদের ছুটিতেই ব্যাগ গোছাচ্ছে। নিচ্ছে ঢাকায় ফেরার প্রস্তুতি।

আগামী সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে এই এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতি এখনই শুরু করে দেবে ফুটবল ফেডারেশন। এশিয়ার সেরা আটের ওই প্রতিযোগিতায় অস্ট্রেলিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানের মতো দেশগুলো খেলবে। দারুণ এক রোমাঞ্চকর একটা ব্যাপার মেয়েদের জন্য! এ ছাড়া নভেম্বরে জাতীয় দলের সাফ টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ভারতে।

তাই অনূর্ধ্ব-১৬ ও জাতীয় দল—দুটির জন্যই মেয়েদের ক্যাম্প চলবে একসঙ্গে। আপাতত ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকার প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে মেয়েদের। লম্বা সময়, তাই প্রস্ততিটাও সেভাবে চলছে। ঢাকার আশপাশের মেয়েরা হয়তো ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসবে। অন্যরা এর আগেই রওনা দিতে পারে। তবে খাগড়াছড়ির দুই যমজ বোন আনআই মোগিনী ও আনুচিং মোগিনী এবং একই জেলার মনিকা চাকমা নাকি বাসের টিকিট পায়নি। এটা ফেডারেশনে ওরা জানিয়েছে। টিকিট পেলেই ঢাকার বাসে উঠবে।
অন্যরাও কম বেশি সমস্যায় আছে ফেরার ব্যাপারে। কীভাবে আসবে, কী করবে, এসব একটা বড় চিন্তা ওঁদের। ময়মনসিংহের মেয়েরা যেমন কীভাবে ফিরবে এখনো জানে না। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ দলের অন্যতম ফুটবলার সানজিদা ময়মনসিংহ থেকে ফোনে বলল, ‘কীভাবে যাব সেটা বলতে পারব না। মনে হয় স্কুল থেকে কোনো ব্যবস্থা করেছে।’ ব্যবস্থা যেটিই হোক, মেয়েরা চায় নিরাপদে ফিরতে।
সেই আকাঙ্ক্ষা সঙ্গী করে ঢাকায় ফেরার এই তোড়জোড়ের মধ্যেই ঈদ উদ্‌যাপন করছে মেয়েরা। সানজিদা যেমন বলল,‘ ঈদ তো ভালোই কাটিয়েছি, কিন্তু এখন ঢাকায় আসতে হবে। কাপড়-চোপড় গোছাচ্ছি।’ ঈদে কী কী করা হয়েছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ দলের দলের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের কথা, ‘অনেক মজা করেছি সবাই মিলে।’ মজা বলতে কলসিন্দুরের নয় মেয়েই ঈদের দিন বিকেলে তাদের প্রিয় কলসিন্দুর স্কুলের মাঠে গিয়েছে। সানজিদার বর্ণনায়,‘ ঈদের দিন সবাই আমরা স্কুল মাঠে অনেক আনন্দ করেছি। শামসুন্নাহার, মারিয়া, মার্জিয়া, তহুরা, শিউলি, মাজেদা সবাই এসেছে। মোবাইলে ছবি তুলেছি, স্কুল মাঠে দৌড়াদৌড়ি করেছি, খাওয়া-দাওয়া করেছি। আমাদের অনেক ভালো লেগেছে।’

সানজিদা বলতে হয়তো ভুলে গেছে, ঈদের দিন টিভিতে সাক্ষাৎকারও দিতে হয়েছে। ওরা এখন তারকা। তবে কথাবার্তায় এখনো স্বচ্ছন্দ নয় কেউই। মার্জিয়া যেমন মুঠোফোনে ঈদ উদ্‌যাপনের কথাটা বলতে গিয়ে কোনো শব্দই খুঁজে পাচ্ছিল না। বারবার বলছিল, ‘ঈদ ভালো কেটেছে, অনেক মজা করেছি।’ তাদের এই আনন্দের সঙ্গী হয়েছেন স্কুলের একজন শিক্ষকও। কলসিন্দুর স্কুল মাঠে তাঁকে পেয়ে মেয়েদের আনন্দটা বেড়ে যায় আরও।
মৌসুমি, স্বপ্নাদের কাছেও ঈদটা হয়ে এল একটু অন্যরকম। অমন কীর্তি গড়ার পর ঈদটা তো অন্যরকমই হওয়ার কথা! সব খেলোয়াড়ই নিজের এলাকায় মনোযোগ পেয়েছে আশপাশের সবার। যা আগে সেভাবে পেত না। অধিনায়ক কৃষ্ণা রানি সরকার যেমন বলল,‘ ঈদের এই সংক্ষিপ্ত ছুটিতে বাড়িতে এসে সবার অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। তবে সবাই বলছে আরও ভালো করতে।’ সেই ‘চাপ’ নিয়েই ঈদের ছুটির ফাঁকে নতুন মিশনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত কৃষ্ণা-সানজিদারা।