গুগলের রোবট সেনাবাহিনী তৈরির প্রকল্প!

রোবট সেনা
রোবট সেনা

রোবট-প্রাণী, চালকবিহীন বিমান কিংবা রোবট সেনাবাহিনী এসব তৈরি করতে সক্ষম গুগল বর্তমানে গোপনে রোবোটিক্স প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদ বিশ্লেষণে উঠে এসেছে গুগলের রোবট সেনাবাহিনী তৈরির কথা।
যাঁরা হলিউডের টার্মিনেটর চলচ্চিত্রটি দেখেছেন তাঁরা ভালো করেই জানেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট মানুষের জীবনে কতখানি প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু এত দিন যা ছিল কেবল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে তা এখন বাস্তব রূপ নিতে যাচ্ছে। বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গুগল, আমাজন, মাইক্রোসফট ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষণা শুরু করেছে। মার্কিন প্রযুক্তি-গবেষকেরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমান যন্ত্রের সঙ্গে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যত্ নিয়ে বসবাস করবে মানুষ। আর সেই প্রক্রিয়ায় একধাপ অগ্রসর হয়েছে গুগল। রোবট সেনাবাহিনী তৈরির সব সম্ভাবনাই গুগলের রয়েছে। শুধু এ বছরেই রোবট প্রযুক্তির আটটি প্রতিষ্ঠান কিনে নিয়েছে গুগল।
গুগল সম্প্রতি দ্রুতগতির রোবট ‘চিতা’র নির্মাতা বোস্টন ডাইনামিকস নামের প্রতিষ্ঠানটিকে কিনে নেওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে গুগলের রোবট সেনাবাহিনী তৈরির সম্ভাব্যতা নিয়ে নানা আলোচনা। বোস্টন ডাইনামিকস মার্কিন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। গুগল রোবট নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান কিনলেও কত টাকায় এবং কী ধরনের প্রকল্পের জন্য এ লেনদেন করছে, সে বিষয়ে এখনো মুখ খোলেনি।
এদিকে, বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইন্টারনেট কোম্পানির জন্য রোবট নির্মাতা প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান কেনার ব্যাপারটা বেশ কৌতূহল জাগিয়েছে।

প্রযুক্তি-বিশ্লেষকেরা বলছেন, গুগলের যে ধরনের প্রযুক্তি-সক্ষমতা ও দক্ষ প্রকৌশলী রয়েছে তা দিয়ে সহজেই ড্রোন বা চালকবিহীন বিমান তৈরি করা সম্ভব। আর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথেই রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

মার্কিন প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগামীতে রোবট, ড্রোন বা চালকবিহীন বিমানের যুগ আসছে। গোয়েন্দাগিরি, জরুরি অবস্থায় প্রয়োজনীয় সাহায্য পৌঁছে দেওয়া, দুর্গম স্থানে সহজে যোগাযোগ সব কাজেই রোবট ও ড্রোনের ব্যবহার বাড়বে। তবে প্রযুক্তি-প্রতিষ্ঠান আমাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস অনলাইনে পণ্য ক্রেতাদের কাছে সহজে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য ড্রোন ব্যবহারের কথা জানানোর পর এ নিয়ে গুগলের প্রসঙ্গটিও উঠে এসেছে।

রোবট সেনা
রোবট সেনা

গুগল ও রোব
গুগল এর মধ্যেই রোবট গবেষণায় জোর দিয়েছে। গত কয়েক বছরের মধ্যেই নতুন প্রজন্মের রোবট তৈরি করতে পারে এমন সাতটি প্রতিষ্ঠান কিনেছে গুগল। গুগলের জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড যাঁর হাত দিয়ে এসেছিল সেই অ্যান্ডি রুবিন এই রোবট প্রকল্পের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।সম্প্রতি গুগলের রোবট নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে গুগলের কর্মকর্তা অ্যান্ডি রুবিন জানিয়েছেন ড্রোন নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনার কথা। অবশ্য, গুগল তাদের রোবট নিয়ে সম্ভাবনার কথা জানালেও এ নিয়ে ভবিষ্যত্ পরিকল্পনার কথা কঠোরভাবে গোপন রেখেছে। বিষয়টি নিয়ে একেবারেই মুখ খুলতে নারাজ তারা। প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা রোবট প্রকল্পে গুগলের বিনিয়োগ দেখে ধারণা করছেন আগামী এক দশকের মধ্যে নতুন কিছু উপহার দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি।
এ প্রসঙ্গে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ডিজিটাল ব্যবসাবিষয়ক গবেষক অ্যান্ড্রু ম্যাকাফি জানিয়েছেন, গুগলের ক্ষেত্রে রিটেইল ব্যবসা ও পণ্য উত্পাদনের ক্ষেত্রে রোবোটিক্স প্রযুক্তিতে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর।
গুগলের রোবট প্রকল্প নিয়ে অবশ্য প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ল্যারি পেজ বেশ উচ্ছ্বসিত। তিনি সম্প্রতি গুগল প্লাসে এক বার্তায় জানিয়েছেন,  ‘অ্যান্ডি রুবিনের পরবর্তী প্রকল্প নিয়ে আমি খুবই আনন্দিত ও উত্তেজিত। অ্যান্ড্রয়েড যেমন বিস্ময়কর একটা ধারণা ছিল তেমনি রোবট নিয়েও পরবর্তী প্রকল্প বিস্ময়কর ও সফল হবে।’

আদতে কী করতে যাচ্ছে গুগল?

রোবট সেনা
রোবট সেনা


এ বছর বোস্টন ডাইনামিকসসহ আটটি রোবট নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান কেনার পর প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন রোবট নিয়ে বড় ধরনের পরিকল্পনা করছে গুগল। কিন্তু কী সেই পরিকল্পনা?
গুগলের ‘এক্স ল্যাব’ নামে একটি গোপন পরীক্ষাগারের অস্তিত্বের কথা প্রায়ই শোনা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, গুগলের এক্স ল্যাবে নতুন কিছু তৈরি হচ্ছে। এই গোপন পরীক্ষাগার থেকেই এসেছে স্মার্টগ্লাস, স্মার্ট কার। সেখানে স্পেস এলিভেটরের মতো ধারণা নিয়ে কাজ চলছে বলেও ধারণা করা হয়। অবশ্য মার্কিন গবেষকেরা ধারণা করছেন, রোবট নিয়ে ভিন্ন কোনো পরিকল্পনা রয়েছে গুগলের। সেই পরিকল্পনা বিষয়টি জানতে হলে নজর দিতে হবে গুগলের বিশেষত্বের দিকে।
প্রযুক্তি-বিশ্লেষক কেভিন ও’রেইলি জানিয়েছেন, গুগল সম্ভবত উন্নত সেন্সর প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে চায়। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যেসব উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নত সেন্সর ও সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করে সেগুলোকেই কিনেছে  গুগল।
এ গুগল নতুন ধরনের ড্রোন বা চালকবিহীন বিমান তৈরি করতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ড্রোনের সম্ভাবনা সম্পর্কে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে অ্যান্ডি রুবিন গুগলের চালকবিহীন গাড়ির প্রসঙ্গ তুলে আনেন। তাঁর মতে, ২০০৯ সালে গুগল যখন স্বয়ংক্রিয় গাড়ি বা চালকবিহীন গাড়ি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল তখনো এ বিষয়টিকে অনেকেই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি বলেই ভাবতেন। কিন্তু এখন এটি মানুষের হাতের নাগালে চলে এসেছে। রুবিন জানান, বুদ্ধিমান রোবট তৈরির ক্ষেত্রে সফটওয়্যার ও সেন্সরের উন্নয়ন করার প্রয়োজন পড়বে। একদিন এ ক্ষেত্রটিতেও গুগল নজর দেবে বলে আশা করছেন রুবিন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ‘প্রাইম এয়ার’ নামে ড্রোন বা চালকবিহীন বিমানের অভিনব ব্যবহারের কথা প্রকাশ করেন অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার মার্কিন প্রতিষ্ঠান আমাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস। ক্ষুদ্র চালকবিহীন এ ড্রোনকে বলা হচ্ছে ‘অক্টোকপ্টার’ যা ছোট ছোট পণ্যের প্যাকেট মাত্র আধ ঘণ্টায় ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বোস্টন ডাইনামিকসকে কিনে নেওয়ার পর ধারণা করা হচ্ছে নতুন কোনো স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করবে গুগল। গুগলের সম্ভাব্য পরিকল্পনা সম্পর্কে সঠিক ধারণা না পেলেও একটি বিষয় পরিষ্কার যে, গুগলের অধীনে রোবট সেনা তৈরির একটি শাখা যুক্ত হয়েছে। তবে আর যা-ই হোক গুগলের করপোরেট নীতিমালা হচ্ছে ‘ডোন্ট বি ইভিল’। গুগলের কাছ থেকে ইতিবাচক কিছু আশা করতে দোষ কী?

আরও পড়ুন: