কেমন হচ্ছে অ্যাপলের নতুন ক্যাম্পাস?

ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাপল ক্যাম্পাস ২
ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাপল ক্যাম্পাস ২

গোলাকার স্পেসশিপ বা মহাকাশযানের মতো নকশায় প্রধান কার্যালয় তৈরি করছে বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। চলতি বছর থেকেই নতুন কার্যালয়ে কার্যক্রম শুরুর কথা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানটির। ২০১৩ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০১৫ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। কারণ, অ্যাপল সবকিছু ‘নিখুঁত’ করতে চেয়েছে। কোথাও রাখতে চায়নি সূক্ষ্মতম ত্রুটিও। ‘নিখুঁত’ ভবন নির্মাণকাজে বাড়তি সময় লেগেছে কর্মীদের। ৭ ফেব্রুয়ারি স্টিভ জবসের ‘অ্যাপল ক্যাম্পাস ২’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনোতে তৈরি হচ্ছে অ্যাপলের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসটি। এক নজরে দেখে নিন ক্যাম্পাসটির কিছু তথ্য:

*১৭৬ একর ক্যাম্পাস এলাকা

*অফিসের জায়গার জন্য বরাদ্দ ২৮ লাখ বর্গফুট

*সাইট এলাকায় পৃথক গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র

*এক লাখ বর্গফুট ফিটনেস সেন্টার

*আন্ডারগ্রাউন্ডে এক হাজার সিটের অ্যাপল থিয়েটার অডিটোরিয়াম

*শতভাগ নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার

*ফসটার্স প্লাস পার্টনার্স থেকে প্রকল্প নির্মাতা নিয়োগ

*২০১৭ সালে কার্যালয় চালু

*খরচ ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার

ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাপল ক্যাম্পাস ২
ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাপল ক্যাম্পাস ২


স্টিভ জবসের সর্বশেষ প্রকল্প:

২০০৬ সালে স্টিভ জবসের কাছ থেকে নতুন ক্যাম্পাসের ঘোষণা আসে। ১৭৬ একর জায়গার ওপর ক্যাম্পাস ২ নির্মাণকাজ ২০১৩ সালের শেষ দিকে শুরু হয়। এ বছরে প্রকল্প শেষ হলে প্রায় ১২ হাজার কর্মীকে নিয়ে ওই ক্যাম্পাস চালু করবে প্রতিষ্ঠানটি। কুপারটিনোর বর্তমান প্রধান কার্যালয়ের এক মাইল পূর্বে অবস্থিত কার্যালয়টিকে এর বৃত্তাকার নকশার জন্য ‘স্পেসশিপ’ বলা হয়।

অ্যাপলের নতুন ক্যাম্পাস নিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বসন্তে অ্যাপল ক্যাম্পাস ২-এর যাত্রা শুরুর লক্ষ্যে কাজ প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছে অ্যাপল।

ওই প্রতিবেদনে অ্যাপলের ভবনের নকশার খুঁটিনাটি বর্ণনাও দেওয়া হয়েছে। যেমন ভবনে কোনোরূপ আলোর প্রতিফলন ঘটবে না। আইফোনের হার্ডওয়্যারের নকশা যেভাবে হয়, ঠিক সেভাবে এর ফিটিংসের কাজ হবে। অ্যাপলের সাবেক ব্যবস্থাপকদের ভাষ্য, টয়লেটের মসৃণ ডিজাইনের ক্ষেত্রেও আইফোনের মতো নকশা ব্যবহার করা হয়েছে।

অ্যাপলের নতুন ভবনে যেসব নকশা করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই অ্যাপলের তৈরি বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের নকশার মতো করে করা হয়েছে। এমনকি এলিভেটরের বাটন করা হয়েছে আইফোনের হোম বাটনের মতো।

ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাপল ক্যাম্পাস ২
ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাপল ক্যাম্পাস ২

অ্যাপল কর্তৃপক্ষ তাদের পণ্যের মানের কথা মাথায় নিয়ে এখানকার সব নকশা তৈরি করেছে। এমনকি এখানে কাঠ ব৵বহারের জন্য যে নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে, সেটি ৩০ পাতার। সূক্ষ্ম উপাদান যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য কর্মীদের দস্তানা ব্যবহার করে কাজ করতে হয়েছে।

ভবনের সিলিং প্যানেল তৈরিতে পলিশড কংক্রিট ব্যবহার করেছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এমনকি দরজার হাতল তৈরিতেও এমন সূক্ষ্ম মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, যাতে এক ন্যানোমিটার খুঁত না থাকে। একজন ব্যবস্থাপকের ভাষ্য, মান ঠিক রাখার জন্য দরজার হাতল তৈরিতে দেড় বছর লেগেছে।

অ্যাপলের সাবেক এক ব্যবস্থাপকের ভাষ্য, সাধারণের চোখে যা ধরা পড়বে না, অ্যাপলের কাছে তার গুরুত্বও অনেক।

ভবনের অগ্নিনির্বাপণসংক্রান্ত নিরাপত্তার জন্যও অ্যাপল আলোচনার পর আলোচনা করেছে। জরুরি মুহূর্তে এ ভবন নিরাপদ কি না, তা নিশ্চিত করেছে অ্যাপল। তবে ভবনের কোথায় কী চিহ্ন বসানো হবে, তা নিয়ে ১৫ বার সভা করেছে অ্যাপল।

এমন ভবন নির্মাণে খরচ কত? অ্যাপলের এক ব্যবস্থাপক বলেছেন, ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার এ ভবনের পেছনে খরচ করছে অ্যাপল। এর মধ্যে শুধু ১০০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ হচ্ছে এর ইন্টেরিয়র নকশায়। তথ্যসূত্র: রয়টার্স, নাইন টু ফাইভ ম্যাক।