স্ন্যাপচ্যাটের জেদি এভান

স্ন্যাপচ্যাটের স্রষ্টা এভান স্পিগেল জয় করেছেন জনপ্রিয় মডেল মিরান্ডা কেরের মন। ছবি: সংগৃহীত
স্ন্যাপচ্যাটের স্রষ্টা এভান স্পিগেল জয় করেছেন জনপ্রিয় মডেল মিরান্ডা কেরের মন। ছবি: সংগৃহীত

ব্যবহারকারীর সংখ্যা যত বেশি, ঠিক ততটাই জনপ্রিয়—এমন একটা ধারণার ওপর গড়ে উঠেছে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তবে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৎকালীন শিক্ষার্থী এভান স্পিগেল দেখলেন ধারণাটি পুরোপুরি ঠিক না। বন্ধু তালিকায় হাজারো মানুষ থাকতে পারে, কিন্তু ব্যবহারকারীরা কাছের কিছু মানুষের সঙ্গেই বেশি সময় কাটান।

সে ধারণা থেকেই স্ট্যানফোর্ডের ডরমিটরিতে বন্ধু ববি মারফির সঙ্গে ২০১১ সালে এভান চালু করেন নতুন ধারার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘স্ন্যাপচ্যাট’। বর্তমানে তিনি স্ন্যাপচ্যাটের মূল প্রতিষ্ঠান স্ন্যাপ ইনকরপোরেটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। আর সারা বিশ্বের প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে তাঁর পরিচয়—প্রথার বাইরে অন্য রকম এক প্রযুক্তির উদ্যোক্তা তিনি।

যোগাযোগেরভিন্নধারা

স্ন্যাপচ্যাট মূলত বন্ধুদের সঙ্গে বার্তা ও ছবি ভাগাভাগির স্মার্টফোন অ্যাপ। বাস্তব দুনিয়ায় মানুষ যেভাবে কথোপকথন চালায়, স্ন্যাপচ্যাটেও তেমন রাখতে চেয়েছেন এভান ও ববি। তাই স্ন্যাপচ্যাটে পাঠানো বার্তা ও ছবি একটা নির্দিষ্ট সময় পরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যায়। এভানের ভাষ্যমতে, ‘আমার পরিচয় হলো, ঠিক এই সময়ে আমি কে।’

সর্বদাই বিনয়ী

এভানের বাবা জন স্পিগেল ও মা মেলিসা থমাস পেশায় দুজনই আইনজীবী। এর বাইরেও প্রচুর সম্পদের মালিক তাঁদের পরিবার। ধনাঢ্যদের শহর হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যাসিফিক প্যালিসেডসে বেড়ে উঠেছেন এভান। ছোট থেকে যেমন উন্নত জীবনযাপনে অভ্যস্ত তিনি, তেমনি শিশুকাল থেকে বিনয়ী হিসেবেও পরিচিত। স্ন্যাপচ্যাট প্রতিষ্ঠার পেছনে বলেছেন ভাগ্যের সহায়তার কথা, নিজের উদ্যোগ-নেতৃত্ব-পরিশ্রমের কথা এড়িয়ে গেছেন সব সময়। এক সাক্ষাৎকারে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের নির্বাহী চেয়ারম্যান এরিক স্মিট এভানের সম্পর্কে বলেছিলেন, তিনি বিনয়ী, যা তিনি পেয়েছেন তাঁর মায়ের কাছ থেকে। ব্যবসার প্রাথমিক ধারণা অবশ্য পেয়েছিলেন খুব কম বয়সেই, তাঁর বাবার ফোনের কথোপকথন শুনে শুনে।

ব্যর্থতা এসেছে, কিন্তু থেমে থাকেননি

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পণ্য নকশা (প্রোডাক্ট ডিজাইন) বিষয়ে স্নাতক করার সময়েই ববি মারফির সঙ্গে বেশ কিছু ব্যবসায়ের উদ্যোগ নেন তিনি। সেগুলো সফলতার মুখ দেখেনি। তবে এই সময় এমন কিছু মানুষের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়, যাঁরা পরবর্তী সময়ে অনেক কিছু শিখিয়েছেন এভানকে। এঁদের মধ্যে ইনটুইটের প্রধান নির্বাহী স্কট কুক ও এরিক স্মিট উল্লেখযোগ্য। এভান স্পিগেলকে মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ও ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গে তুলনা করে এরিক বলেছিলেন, ‘(তিনি) পরবর্তী গেটস কিংবা জাকারবার্গ।’

তাঁর দেখার চোখ

স্ন্যাপচ্যাটের যাত্রা শুরু হলে স্ট্যানফোর্ড থেকে স্নাতক শেষ করার অপেক্ষায় থাকেননি এভান। কাজে লেগে পড়েন পুরোদমে। তাঁর কাছের মানুষেরা বলেছেন, এভানের মধ্যে একরকম জেদ কাজ করেছে সব সময়। সেটা তাঁর ভালো দিক।

ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে ২০১৩ সালে স্ন্যাপচ্যাট কিনে নিতে ৩০০ কোটি ডলার সেধেছিলেন ফেসবুক প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি এভান। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আইভিপি যখন স্ন্যাপচ্যাটে বিনিয়োগে রাজি হয়, তখনো এভান আইভিপির শর্তাবলি মানতে রাজি হননি। প্রতিষ্ঠানটির অংশীদারদের বলেছিলেন, আপনি যদি প্রথাগত শর্তাবলি চাপাতে চান তো প্রথাগত প্রতিষ্ঠান খুঁজে নিন। তাতে অবশ্য আইভিপি সটকে পড়েনি, ২০১৩-এর মধ্যে তৃতীয় দফায় বিনিয়োগ করেছে স্ন্যাপচ্যাটে। সব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিলিকন ভ্যালিকেন্দ্রিক হওয়ারও সমালোচনা করেছেন এভান। তাই হয়তো ক্যালিফোর্নিয়ার ভেনিস বিচে নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেছেন এই প্রযুক্তিবিদ।

মিরান্ডা কেরের সঙ্গে গাঁটছড়া

লস অ্যাঞ্জেলেসের ফ্যাশন, শিল্প ও সংগীতে আগ্রহ আছে এভান স্পিগেলের। সে সূত্রেই এক নৈশভোজে জনপ্রিয় মডেল মিরান্ডা কেরের সঙ্গে পরিচয়। এরপর বন্ধুত্ব এবং প্রেম। তাঁরা বিয়ে করেছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে গত মাসেই।

এবং স্ন্যাপচ্যাট

কীভাবে একটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গড়ে তোলা ও তা থেকে আয় করা যায়—এ নিয়ে সব সময় ভিন্ন ধারায় চিন্তা করেন এভান। ব্যবসায় পরিচালনার প্রতি ধাপে রয়েছে এর ছাপ। যেখানে অন্য সব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সাধারণত প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে থাকতে চায়, সেখানে এভান সব সময় বলেছেন, একটা ব্যবসার লক্ষ্য হওয়া উচিত পাবলিক কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা। চলতি বছর মার্চেই আইপিওর মাধ্যমে বাজারে শেয়ার ছেড়েছে স্ন্যাপ ইনকরপোরেটেড। এতে তরুণ বয়সেই বিলিয়নিয়ারে পরিণত হয়েছেন তিনি।

স্ন্যাপচ্যাটের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হোঁচট খাচ্ছে ফেসবুক। আর তাই অনেকটা নিষ্ঠুরভাবেই স্ন্যাপচ্যাটের সুবিধাগুলো একের পর এক নকল করে ব্যবহারকারীদের দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম। এতে স্ন্যাপচ্যাটের কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা পরিমাপের সুযোগ যদিও হয়নি, তবে জনপ্রিয়তায় স্ন্যাপচ্যাটের একটুও ভাটা পড়েনি।

সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমসফরচুন ম্যাগাজিন