সাইবার হয়রানি বেশি হয় ইনস্টাগ্রামে

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যেই তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা তরুণদের হতাশ আর উদ্বিগ্ন করে তুলছে। সম্প্রতি সাইবার হয়রানিবিরোধী দাতব্য প্রতিষ্ঠান ডিচ দ্য লেবেলের এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির করা জরিপে ১০ হাজারের বেশি তরুণ-তরুণী অংশ নেয়।

গবেষণায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর প্রায় ৪০ শতাংশ জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা তাদের কোনো ছবি বা ঘটনায় কম ‘লাইক’ হওয়ার বিষয়টি বাজে অনুভূতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রায় ৩৫ শতাংশের কথা হচ্ছে, তাদের আত্মবিশ্বাস অনেকটাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের অনুসরণকারী কিংবা বন্ধুর সংখ্যার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।

এদিকে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি তিনজনের একজন জানায়, তারা সাইবার হয়রানির ভয়ে থাকে। তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা ছবি হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলার ভয়টাই সবচেয়ে বেশি। জরিপে প্রায় ৪৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলে, তারা তাদের জীবনের মন্দ দিকগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা করে না। তবে অধিকাংশই জানায়, তারা তাদের জীবনধারার সাজানো-গোছানো দিকটাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরে। অর্থাৎ নেতিবাচক বা খুব একটা সুখকর নয়, এমন বিষয়গুলো বাদ দিয়ে ভালো দিকগুলোই তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

ডিচ দ্য লেবেলের জরিপে অংশ নেওয়া সবাই ১২ থেকে ২০ বছর বয়সী। সাইবার হয়রানি অনেক বেশি ছড়িয়ে গেছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রায় ৭০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী স্বীকার করেছে, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্য মানুষের প্রতি হয়রানিমূলক আচরণ করে। আর ১৭ শতাংশের দাবি, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির শিকার হচ্ছে। গবেষণায় আরও জানানো হয়, ছবি শেয়ারিং অ্যাপ ইনস্টাগ্রামে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক মন্তব্য ব্যবহৃত হয়।

ডিচ দ্য লেবেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াম হ্যাকেট বলেন, বর্তমানে তরুণদের সম্মুখীন হতে হয়েছে এমন বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হয়রানি হলো সাইবার হয়রানি। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির চলমান অবস্থা নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমাদের শিশু-কিশোরেরা একটি বৈরী সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠছে।’ সাইবার হয়রানি কমাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা মন্তব্যগুলোর নজরদারিতে আরও বেশি কাজ করতে ও কোনো হয়রানিমূলক আচরণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পর তা নিয়ে আরও দ্রুত সাড়া দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে আহ্বান জানান হ্যাকেট।

চলতি মাসের শুরুর দিকে সাইবার হয়রানি নিয়ে অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের (ওএলএল) করা আরেক গবেষণায় অনেকটা বিপরীতধর্মী তথ্যই প্রকাশ হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার হয়রানির ঘটনা অনেকটাই কমে আসছে বলে জানানো হয় ওএলএলের গবেষণার ফলাফলে। এই গবেষণায় ১৫ বছর বয়সী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের বেশি প্রাধান্য দেয়। গবেষণাটিতে অংশগ্রহণকারীর ৩০ শতাংশ নিয়মিত হয়রানির শিকার এবং ৩ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছাড়াও হয়রানির শিকার হয় বলে জানায়।

একই বিষয় নিয়ে করা দুই প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দুই ধরনের ফলাফলে ভিন্নতার কারণ হিসেবে গবেষণার প্রশ্নের ধরনকে উল্লেখ করেন কিডস্কেপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লরেন সিগার স্মিথ। তিনি ডিচ দ্য লেবেলের গবেষণার ফলাফলই আশানুরূপ বলে জানান।

শাওন খান, সূত্র: বিবিসি