এ কোন গুগল!

কয়েক বছর ধরে গুগল তার পথ বদলে নিতে শুরু করেছে। ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা প্রদানকারী এই প্রতিষ্ঠান এখন বাস্তবেই যেন বেশি মনোযোগী। প্রতিবছরের শেষের দিকে বিশ্বের প্রায় শীর্ষ প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই নিজেদের সর্বোৎকৃষ্ট পণ্য বাজারে ছেড়ে প্রতিযোগিতায় নামে। গত কয়েক বছরে এই প্রতিযোগিতায় দেখা মিলছে গুগলেরও। নিজেদের স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ভার্চ্যুয়াল সহকারী, ক্যামেরা, ভিআর থেকে শুরু করে হেডফোন পর্যন্ত প্রযুক্তিপণ্য বাজারে টিকিয়ে রাখতে রীতিমতো প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গুগল। হার্ডওয়্যার পণ্য তৈরিতে অতীতে খুব বেশি সাফল্য না পেলেও বিষয়টি নিয়ে গুগল এবার জোরদার কাজ শুরু করছে। প্রযুক্তি অঙ্গনে আধিপত্য যেন চায়-ই গুগলের।

কয় সপ্তাহ আগে গুগল ‘মেড বাই গুগল’ অনুষ্ঠানে পিক্সেল ২ স্মার্টফোনসহ নতুন বেশ কয়েকটি প্রযুক্তিপণ্য উন্মোচন করে। ওই অনুষ্ঠানে গুগলের হার্ডওয়্যার নিয়ে পরিকল্পনার কথা খানিকটা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুন্দর পিচাই। গুগল শিগগিরই তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারকে একত্র করবে এমনটাই বলেছেন তিনি। উন্মোচিত গুগলের নতুন পিক্সেল ২ ফোনটিও তেমন সাক্ষ্য দেয়। ফোনটিতে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট নামের যে ভার্চ্যুয়াল সহকারী ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি বাজারের শীর্ষ ভার্চ্যুয়াল সহকারী অ্যাপলের সিরি ও অ্যামাজনের অ্যালেক্সাকে টেক্কা দিতে সক্ষম। গুগল মূলত তাদের হার্ডওয়্যার প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে নিজেদের কৃত্রিম প্রযুক্তির ব্যবহারকে জনসাধারণের কাছে সহজলভ্য করে তুলছে। সাম্প্রতিক কালে অধিকাংশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকেই প্রযুক্তি পণ্যের চেয়ে অগমেন্টেড রিয়েলিটি কিংবা ভার্চ্যুয়াল সহকারীর মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতি বেশি আগ্রহী হতে দেখা যাচ্ছে। আর সেই আগ্রহকে পুঁজি করে গুগল মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সব ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে।

হার্ডওয়্যারের দুনিয়ায় গুগলের বয়স মাত্র কয়েক বছর। তবে এরই মধ্যে প্রযুক্তিপণ্য তৈরির দক্ষতায় শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এর মূলে রয়েছে গুগলের ইন্টারনেট সেবা। অন্যান্য ভার্চ্যুয়াল সহকারী যেখানে তথ্য জোগাড় করতে গুগলের শরণাপন্ন হয়, গুগল সেখানে নিজের তথ্যভান্ডার নিজেই ব্যবহার করছে। এ কারণেই গুগলের প্রযুক্তিপণ্য দ্রুততার সঙ্গে পারদর্শিতা দেখিয়ে চলছে। যদিও গুগলের মূল আয়ের প্রধান উৎস অনলাইনে বিজ্ঞাপন প্রচার। তবে গুগল পিক্সেল ২ ফোনটির জনপ্রিয়তা প্রতিষ্ঠানটিকে হার্ডওয়্যারের প্রতি আরও মনোযোগী হতে উৎসাহী করছে। সেই সঙ্গে শিগগিরই গুগল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংবলিত আরও প্রযুক্তিপণ্য বাজারে আনবে বলে ধারণা করছেন প্রযুক্তি বাজার বিশ্লেষকেরা। সেই সঙ্গে এলজি, সনি বা প্যানাসনিকের মতো শীর্ষ স্মার্ট পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকেও গুগল তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে তুলছে। তাই নিকট ভবিষ্যতে প্রযুক্তি অঙ্গনে নতুন এক গুগলকে দেখা যাবে বলে আশা করা যেতে পারে।

শাওন খান, সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার