বিমানের ই-টিকিটের এক দশক

লেখকের সংগ্রহে থাকা নানা এয়ারলাইনসের কাগুজে টিকিট
লেখকের সংগ্রহে থাকা নানা এয়ারলাইনসের কাগুজে টিকিট

‘আপনার কাছে যদি কাগুজে টিকিট থাকে, তবে রেখে আসুন জাদুঘরে।’ এক দশক আগে ঘোষণা দিয়েছিল আইয়াটা (ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন)। সে ঘোষণায় কেউ জাদুঘরে গিয়েছিল কি না, জানি না। তবে পরদিন থেকে বিমান ভ্রমণে কাগুজে টিকিটের একরকম বিলুপ্তি ঘটে। ২০০৮ সালের জুনের প্রথম দিন থেকে গোটা বিশ্বে বিমানের আসন রিজার্ভেশন-ব্যবস্থায় চালু হয় ইলেকট্রনিক টিকিট বা ই-টিকিট পদ্ধতি। প্রথম ই-টিকিটের প্রচলন অবশ্য তারও অনেক আগে। তবে ২০০৮ সাল থেকে শুরু হয় সর্বজনীন ব্যবহার।

শুরুটা হাতে লেখা টিকিট দিয়ে
বিমান ভ্রমণ সহজ করতে কাগুজে টিকিটের প্রচলন সেই ১৯২০ সালে। তবে একেক বিমান সংস্থা একেক নিয়মে চলতে থাকলে দেখা দেয় সমস্যা। প্রয়োজন পড়ে একক নীতিমালার। ১৯৩০ সালের দিকে আইয়াটা ট্রাফিক কমিটি এক টিকিটে একাধিক ভ্রমণের জন্য হাতে লেখা কাগুজে টিকিটের প্রচলন করে। সে নিয়মের পরিবর্তন আসে ১৯৭২ সালে, প্রবর্তন করা হয় অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার। সে সময়ে জাপানের টোকিওতে ট্রাভেল এজেন্টদের জন্য বিলিং এবং সেটেলমেন্ট প্ল্যান (বিএসপি) চালু করে আইয়াটা। এ সময় আইয়াটার লোগো জুড়ে দিয়ে সব এয়ারলাইনসের জন্য এক করে দেওয়া হয়। টিকিট-ব্যবস্থায় আবারও বড় পরিবর্তন আসে ১৯৮৩ সালে। টিকিটের পেছনে ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ লাগানো হয়। সব তথ্য স্ট্রিপে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়। সে টিকিটগুলো বোর্ডিং পাস হিসেবেও ব্যবহার করা যেত।
আইয়াটার সহায়তায় ১৯৯৪ সালে প্রথম ই-টিকিট ইস্যু করে মার্কিন বিমান সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারলাইনস। তবে কারিগরি দিক থেকে কিছুটা জটিল মনে হওয়ায় অন্যান্য বিমান সংস্থা সহজে ই-টিকিট গ্রহণ করেনি। ২০০৪ সাল নাগাদ বিমানের টিকিটের বড়জোর ২০ শতাংশ ছিল ই-টিকিট।

কেমন ছিল কাগুজে টিকিট?
কাগুজে বিমান টিকিট সাধারণত ৮ থেকে ১০ পাতার হতো, চওড়ায় ৮ আর লম্বায় ৩ দশমিক ২৫ ইঞ্চির মতো। বিমানে কী কী বহন করা যাবে আর কী কী করা যাবে না, তার বিবরণ থাকত কয়েক পাতাজুড়ে। মালামালে নাম-ঠিকানা লেখার জন্য গোটা তিনেক স্টিকার লাগানো একটা পাতা ছিল। বাকি পাতাগুলোয় থাকত বিমান ভ্রমণ-সংক্রান্ত নানা তথ্য।

কাগুজে টিকিটের বিলুপ্তি
২০০৪ সালে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আইয়াটার বার্ষিক সভায় কয়েকটি বিষয় উঠে আসে। এর একটি ছিল, ২০০৮ সালের মধ্যে কাগুজে টিকিট ছেড়ে শতভাগ
ই-টিকিট প্রণয়ন। সে লক্ষ্যমাত্রা সময়মতোই পূরণ করে আইয়াটা। ২০০৮ সালের ১ জুনের পর থেকে দূরবর্তী ছোট্ট কোনো দ্বীপের বিমানবন্দর থেকে শুরু করে আধুনিক সুবিধার বড় বিমানবন্দরেও ই-টিকিটের শতভাগ প্রচলন হয়েছিল। ২০০টি দেশের প্রায় ৬০ হাজার ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে ৩ কোটি ২০ লাখ কাগুজে টিকিট সংগ্রহ করে ধ্বংস করে আইয়াটা। সংঘটির তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিওভানি বিসিনানি ২০০৮ সালের ৩১ মে আনুষ্ঠানিকভাবে কাগুজে টিকিটের বিলুপ্ত ঘোষণা করেই তিনি বলেছিলেন, ‘আপনার কাছে যদি কোনো কাগুজে টিকিট থাকে, তবে তা এক্ষুনি জাদুঘরে দিয়ে দিন।’

>

বিমান বাংলাদেশেরও হলো এক দশক
আইয়াটার সদস্য হিসেবে বিমান বাংলাদেশ ই-টিকিট দেওয়া শুরু করে ২০০৮ সালের ৩১ মে। আইয়াটার নিয়ম মানতেই বিমানের সে উদ্যোগ। ই-টিকিট থেকে শুরু করে গত এক দশকে কতটা বদলেছে বিমান বাংলাদেশের টিকিট কেনার পদ্ধতি? বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে জানিয়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ।
বাংলাদেশে আইয়াটার একমাত্র সদস্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। সে সুবাদেই ই-টিকিট প্রচলনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সে সময় বিমানের বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে ফরাসি গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (জিডিএস) সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সিটা। কবে কোন ফ্লাইটের কোন আসন ফাঁকা আছে, তা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের নিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্ট জিডিএসের মাধ্যমে দেখতে পায়। শাকিল মেরাজ যেমন বললেন, ‘সিটার প্রযুক্তি এবং আইএটিএর পরামর্শ নিয়ে আমরা ই-টিকিটের জগতে প্রবেশ করি।’
ই-টিকিটের পরবর্তী ধাপে ২০১১ সালে অনলাইনে টিকিট বুকিং দেওয়ার কাজ শুরু করে বিমান বাংলাদেশ। অনলাইনে বিমানের প্রথম টিকিট কিনেছিলেন মার্কিন নাগরিক সামান্থা। আর সম্প্রতি মোবাইলফোনে টিকিট কাটার সুবিধা দেওয়া শুরু করে বিমান। বিমানের কল সেন্টারে ফোন করে জানাতে হবে কবে কোথায় যাবেন। সে অনুযায়ী প্রাথমিক টিকিট ইস্যু করা হয়।
জুন মাসে বিমান বাংলাদেশের স্মার্টফোন অ্যাপ চালুর কথা জানান শাকিল মেরাজ। গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর থেকে নামিয়ে ব্যবহার করা যাবে সে অ্যাপ। তখন অ্যাপেই টিকিট কাটা যাবে, মূল্য পরিশোধ করা যাবে, প্রয়োজনে ভ্রমণের তারিখও পরিবর্তন করা যাবে।

লেখক: স্মারক সংগ্রাহক