ট্রেন দুটির দূরত্ব কত?

প্রথমে আসুন আমরা গণিতের কয়েকটি সাধারণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। বলুন তো ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোর মধ্যে ১ অঙ্কটি (ডিজিট) কতবার আছে? কাগজ–কলম নিয়ে একটু হিসাব করতে হবে। কারণ, ১১-এর মধ্যে ১ আছে দুবার। আবার ১০ থেকে ১৯ পর্যন্ত প্রতিটি সংখ্যাই ১ আছে। তাই মনোযোগ দিয়ে হিসাব করে বলা যায়, ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোর মধ্যে মোট ২১টি ১ আছে।
আরেকটি মজার বিষয় দেখুন। যদি প্রশ্ন করি, ২, ৩, ৫, ৭ ও ১০ সংখ্যাগুলোর প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট্য কী? আপনি কী বলবেন? সাধারণ কতগুলো বৈশিষ্ট্য আমরা সবাই জানি। যেমন, ২ একটি জোড় সংখ্যা। যেকোনো জোড় সংখ্যা ২ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য। কিন্তু এর আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য আছে। ২-ই হলো একমাত্র জোড় মৌলিক সংখ্যা। আর সব মৌলিক সংখ্যাই বিজোড়। অবশ্য এখানে বলা দরকার, সব বিজোড় সংখ্যা কিন্তু মৌলিক সংখ্যা নয়। যেমন ২১ বিজোড়, কিন্তু মৌলিক সংখ্যা নয়, এটি ৩ ও ৭ দিয়ে বিভাজ্য। এর চেয়ে ২ কম বা বেশি দুটি সংখ্যা ১৯ ও ২৩ বিজোড় ও মৌলিক সংখ্যা। বাইনারি সংখ্যা গণনার ভিত্তি ২। এই ২-ভিত্তিক গণনাব্যবস্থায় কম্পিউটার যাবতীয় কাজ করে। এরপর আসি ৩-এ। ধরা যাক, কোনো একটি বিষয়ে আপনাদের কয়েকজন বন্ধুর মধ্যে বিতর্ক হচ্ছে। আপনারা ঠিক করলেন, হ্যাঁ-না ভোটে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। ভোটদানে বিরত থাকার নিয়ম রাখলেন না। সে ক্ষেত্রে অন্তত তিনজন বন্ধু না থাকলে আপনারা কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন না। সে জন্য ৩ একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা। ৫-এর গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রথমত, এটি এমন একটি মৌলিক সংখ্যা, যা শুধু নিজেই মৌলিক সংখ্যা, অন্য যেকোনো সংখ্যার শেষে ৫ থাকলে সেটা আর মৌলিক সংখ্যা হতে পারে না। কারণ, কোনো সংখ্যার শেষে ৫ থাকলে সেটা ৫ দিয়ে অবশ্যই বিভাজ্য, তাই মৌলিক সংখ্যা নয়। ৫ ফিবোনাচ্চি (Fibonacci) সিরিজের পঞ্চম পদ। ফিবোনাচ্চি সংখ্যাগুলো হলো ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩...প্রভৃতি; যার প্রতিটি পদ ঠিক পূর্ববর্তী দুটি পদের যোগফল। আমাদের হাতে ৫ আঙুল। দুই হাতে ১০ আঙুল। এখান থেকেই এসেছে ১০-ভিত্তিক গণনাপদ্ধতি। আবার দেখুন, ২, ৩, ৫, ৭ হলো চারটি ক্রমিক মৌলিক সংখ্যা। আর ১০-এর কথা তো বললামই। ১০-ভিত্তিক গণনাপদ্ধতি ছাড়া বিশাল অঙ্কের জটিল গণিতের হিসাব-নিকাশ করা কঠিন হতো।
এ সপ্তাহের ধাঁধা
বেলা তিনটায় সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দিল। গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। একই সময়ে মহানগর গোধূলি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। ধরা যাক, কুমিল্লার কাছাকাছি এই দুই বিপরীতমুখী ট্রেন একে অপরকে অতিক্রম করল। এখন বলুন তো এই অতিক্রমের এক ঘণ্টা আগে ট্রেন দুটি একে অপরের থেকে কত কিলোমিটার দূরে ছিল?
একটু বুদ্ধি খাটাতে হবে। খুব সহজ। অনলাইনে মন্তব্য আকারে অথবা [email protected] ই-মেইলে উত্তর পাঠিয়ে দিন। সঠিক উত্তর জানার জন্য দেখুন আগামী রোববার অনলাইনে।
গত সপ্তাহের ধাঁধার উত্তর
ধাঁধাটি ছিল, একটি বইয়ের দাম তার দামের এক-তৃতীয়াংশের চেয়ে ২৫০ টাকা বেশি হলে বইটির দাম কত?
উত্তর
বইটির দাম ৩৭৫ টাকা।
মিলিয়ে দেখুন, ৩৭৫-এর এক-তৃতীয়াংশ = ১২৫ টাকা। শর্ত অনুযায়ী, এর সঙ্গে আরও ২৫০ টাকা যোগ করলে বইটির দাম (১২৫ + ২৫০) = ৩৭৫ টাকা।
খুব সহজ প্রশ্ন ছিল। সবাই সঠিক উত্তর দিয়েছেন। সবাইকে ধন্যবাদ। তবে যাঁরা মনে মনে হিসাব করে কয়েক মিনিটের মধ্যে উত্তর বের করতে পেরেছেন, তাঁদের আরও বেশি ধন্যবাদ।
কীভাবে উত্তরটি বের করলাম
গণিতের জটিল হিসেব না গিয়ে মনে মনে আমরা হিসাব করেই দাম বের করতে পারি। খুব সহজ। যেহেতু বইটির দাম তার দামের এক-তৃতীয়াংশের চেয়ে ২৫০ টাকা বেশি, তাই আমরা বলতে পারি বইটির দামের দুই–তৃতীয়াংশ নিশ্চয়ই ২৫০ টাকার সমান। তাহলে এক-তৃতীয়াংশ = ১২৫ টাকা। সুতরাং, মোট দাম (১২৫ + ২৫০) = ৩৭৫ টাকা।
বীজগণিতের নিয়মেও আমরা উত্তর বের করতে পারি। শর্ত অনুযায়ী, বইটির দাম = (বইয়ের দামের এক-তৃতীয়াংশ + ২৫০)। এখন সমীকরণের দুই পাশের দুই অংশকে ৩ দিয়ে গুণ করলে আমরা যে নতুন সমীকরণটি পাব, সেটি হলো, (৩ × বইটির দাম) = ৩ × (বইয়ের দামের এক-তৃতীয়াংশ + ২৫০)। অর্থাৎ, বইটির দামের তিন গুণ = বইটির দাম + ৭৫০ টাকা। সমীকরণের দুপাশ থেকে একটি বইয়ের দাম বাদ দিয়ে আমরা বলতে পারি, বইটির দামের দ্বিগুণ = ৭৫০ টাকা। তাহলে বইটির দাম = ৭৫০/২ = ৩৭৫ টাকা।