শৈশবে নির্যাতনের শিকার হলে ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য-সংকট তৈরি হয়

শিশুদের ওপর নির্যাতনের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হয়।
শিশুদের ওপর নির্যাতনের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হয়।

নিগ্রহ বা নির্যাতন সার্বিকভাবে মানুষের মনোজগতের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তবে শিশুদের ওপর এর প্রভাব পড়ে আরও বেশি। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শৈশবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, ভবিষ্যৎ জীবনে তারা নানা স্বাস্থ্য-সংকটে ভোগে।

ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু নির্যাতনের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হয়। অবহেলিত বা নির্যাতনের শিকার হওয়া শিশুরা বড় হওয়ার পরেও বিষণ্নতার মতো নানা মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারে। ক্যানসার বা স্ট্রোকের মতো সমস্যাও এ থেকে সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব আরও দীর্ঘমেয়াদি হয়। সম্প্রতি গবেষকেরা দেখেছেন, শৈশবের দুর্ব্যবহারের প্রভাব প্রজন্ম ধরে প্রবাহিত হতে পারে। ভুক্তভোগীর সন্তান থেকে শুরু করে তা নাতি-নাতনি পর্যন্ত এর শিকার হতে পারে।

এটা ঠিক কীভাবে ঘটে, তা অবশ্য জানা যায়নি। কারণ, মানুষের ওপর জটিল পরীক্ষা চালানো কঠিন বলে মনে করেন গবেষকেরা। এ জন্য তাঁরা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালান। তবে এবারে যুক্তরাষ্ট্রের টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ল্যারি ফেইগ ও তাঁর সহকর্মীরা মানুষের ওপর গবেষণা করেন। তাঁরা দেখেছেন, মানসিক চাপের বিষয়টি ইঁদুরের মতোই মানুষের শুক্রাণুর ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনে।

গবেষণা-সংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ‘ট্রান্সলেশনাল সাইক্রিয়াট্রি’ সাময়িকীতে।

গবেষকেরা বলেন, জিনের মাধ্যমে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয়। জিনে প্রোটিন সংকেত থাকে আর প্রোটিনে থাকে জৈব সংকেত। এটা সত্যি বলে ধরা হয়। কিন্তু এর বাইরেও অনেক কথা থাকে। এই জৈব রাসায়নিক জিনের জীবনকাল নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন পরিস্থিতির প্রয়োজনে এসব জিনকে সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় করতে ভূমিকা রাখে। এ ধরনের কোনো এপিজেনিটিক ঘটনা ঘটতে পারে। এতে প্রাণীর জীবনে এমন কোনো ঘটনা থাকতে পারে, যা তার সন্তানসন্ততিতে স্থানান্তরিত হতে পারে।

গবেষক ফেইগ তাঁর গবেষণার জন্য ২৮ জন পুরুষ স্বেচ্ছাসেবীর কাছ থেকে তাঁদের ছেলেবেলার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শোনেন। তাঁদের কাছ থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করেন। তাঁরা এরপর মাইক্রো আরএনএ নিয়ে তাতে সাধারণ এপিজেনিটিক পদ্ধতির খোঁজ করেন। এরপর গবেষকেরা ইঁদুরের ওপরেও গবেষণা চালান।

গবেষক ফেইগ দেখেন, চাপে থাকা পুরুষ ইঁদুরের মেয়েশিশু বেশি উদ্বেগে ভোগ এবং কম মিশুক হয়। চাপে থাকা বাবার সন্তানেরাও চাপে থাকা মেয়েশিশুর জন্ম দেয়। তিন প্রজন্ম পর্যন্ত প্রভাব থাকে।
প্রাথমিক পর্যায়ে এ ফল পাওয়ার পর গবেষকেরা এ নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা করার পরিকল্পনা করছেন।