মানুষের সৃজনশীলতার কাছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরাজিত হবে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের জন্য হুমকি নয়। ছবি: রয়টার্স।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের জন্য হুমকি নয়। ছবি: রয়টার্স।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে উদ্বেগ। প্রশ্ন উঠছে—কৃত্রিম বুদ্ধিমান রোবট কি মানুষের জায়গা দখল করবে? এসব যন্ত্র কি কেড়ে নেবে মানুষের চাকরি আর তাতে বেকারত্ব বাড়বে? জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে ব্যাপক আকারে বেকারত্ব সৃষ্টির আশঙ্কা কম। কারণ, সৃজনশীলতার দিক থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমান যন্ত্রের থেকে এগিয়ে থাকবে মানুষ। পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ম্যাক্রো-অর্থনৈতিক নীতি এবং জব ইউনিটের পরিচালক এককাহার্ড আর্নেস্ট বলেছেন, উন্নত দেশগুলোতে উৎপাদন খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আশানুরূপ মুনাফা অর্জন করতে পারবে না। তবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে নির্মাণশিল্প, স্বাস্থ্য খাত ও ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে।

আইএলওর ওই বিশেষজ্ঞ বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে চাকরি হারানোর চেয়ে চাকরি ক্ষেত্রের রূপান্তর দেখা যাবে। এসব খাতের কর্মীরা তাঁদের প্রোফাইলে নতুন ধরনের কাজ যুক্ত করবেন যাতে কম্পিউটার, রোবট বা অন্যান্য যন্ত্রের সহযোগিতা লাগে। এসব কাজ রুটিনওয়ার্ক বা নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে এআই অ্যালগরিদম দিয়ে করা যাবে। একঘেয়েমি কাজগুলো সহজেই রোবট বা যন্ত্র করে ফেলবে। এতে মানুষ আরও ব্যক্তিকেন্দ্রিক, সামাজিক ও আন্তরিক দক্ষতার অংশ হতে পারবে।

আর্নেস্ট বলেন, উন্নত দেশগুলোতে কৃষি খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে সুবিধা পাওয়া যায়। এই প্রযুক্তি কৃষকদের সঠিক বাজারদর জানাসহ নানা কাজে সাহায্য করছে। এ ছাড়া জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আফ্রিকা অঞ্চলের জন্য একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে, যা পোকামাকড় শনাক্ত করতে পারে।

জাতিসংঘের ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, মানুষকে এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হতে হবে, যাতে যন্ত্রের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা না থাকে। যন্ত্রের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সাধারণ গাড়ির বা দরকারি কুড়ালের মতো সাধারণ যন্ত্র ভেবে এর ব্যবহার করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

আর্নেস্ট বলেন, মানুষের কেনাকাটার ধরন বদলে যাচ্ছে। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য বা যন্ত্র তৈরি করবে। সেই অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। মানুষ যন্ত্রের চেয়ে বেশি সৃজনশীল ও সাশ্রয়ে কাজ করতে পারে।

সম্প্রতি জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার বিভাগ (ইউএনডিইএসএ) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে একটি গবেষণা করেছে। তাতে দেখা গেছে, শ্রমবাজারে প্রযুক্তির দারুণ প্রভাব রয়েছে এবং এর মাধ্যমে বৈষম্য দূর করা যায়।

সবখানে যন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও রয়েছে। যেমন যন্ত্র চালানোর মতো দক্ষ জনবল, দুর্বল অবকাঠামো ও ব্রডব্যান্ড সেবা, দুর্বল যোগাযোগের নেটওয়ার্ক প্রভৃতি। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতের মতো স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এ ক্ষেত্রে নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয় রয়েছে। এতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে?