কেন কেউ গুগল-ফেসবুককে বিশ্বাস করছে না?

গুগল ও ফেসবুকের মতো বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা হারাচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। বর্তমানে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি ব্যবহারকারীদের বিশ্বাস সবচেয়ে কম। এর কারণ কিছুদিন ধরে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা।

দিন দশেক আগে ফেসবুক স্বীকার করেছে যে তাদের কাছ থেকে পাঁচ কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়েছে। ফেসবুকের নিরাপত্তাত্রুটি কাজে লাগিয়ে ওই তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফেসবুকের ‘ভিউ অ্যাজ’ নামের একটি ফিচারের মাধ্যমে এই হামলার সুযোগ পেয়েছে হ্যাকাররা। ব্যবহারকারীরা ভিউ অ্যাজের মাধ্যমে অন্যদের কাছে তাদের অ্যাকাউন্টটি কেমন দেখায়, তা দেখতে পান। এই সুবিধার মাধ্যমে একজনকে ফেসবুক বন্ধুরা কীভাবে দেখে, তা জানা যায়। আক্রান্ত ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট আপনা–আপনি লগ–আউট হয়ে যায় এবং পুনরায় লগ-ইনের নির্দেশ পায়।

ফোর্বস অনলাইনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এসব ঘটনায় ব্যবহারকারীদের করণীয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে পারেনি এবং সাম্প্রতিক ঘটনায় তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কারা যুক্ত, তা বের করতে পারেনি। এমনকি, কী ধরনের তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেটিও বলতে পারেনি।

এ ধরনের ঘটনা অবশ্য এটাই প্রথম নয়। এর আগে গত এপ্রিলে ফেসবুক থেকে ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়। রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ফেসবুক থেকে অনৈতিকভাবে ওই তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানায় ফেসবুক। ওই তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনায় ব্যবহারকারীদের সতর্ক করেনি ফেসবুক।

ফেসবুকের ওই তথ্য কেলেঙ্কারির ঘটনায় খুব সতর্ক ছিল গুগল। তাই গত মার্চে গুগল প্লাসের নিরাপত্তাত্রুটির কথা জানলেও তারা প্রকাশ করেনি। গত সোমবার গুগল প্লাসের তথ্য বেহাত হওয়ার বিষয়টি জানা গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, গুগল প্লাস থেকে পাঁচ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়েছে। এর জের ধরে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট তাদের গুগল প্লাস সেবা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গুগল প্লাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাইরের শত শত ডেভেলপারের কাছে পাঁচ লাখের বেশি গুগল প্লাস ব্যবহারকারীর তথ্য চলে গেছে। তাই গুগল প্লাসের গ্রাহক সংস্করণ (কনজুমার ভার্সন) বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। গুগল প্লাস থেকে তথ্য বিনিময়বিষয়ক নীতিমালা আরও কঠিন করা হচ্ছে।

গুগল এখন বিষয়টি স্বীকার করলেও তা বেশ কিছুদিন ধরেই চেপে রেখেছিল। গুগল বলছে, তাদের সাইট থেকে কেবল ডেভেলপারদের তথ্য নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সফটওয়্যারত্রুটি কাজে লাগিয়ে সেখান থেকে দুর্বৃত্তরাও তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে।

সাধারণত ফেসবুক ও গুগলের মতো বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে অধীনে নিজেদের তথ্য নিরাপদ থাকবে—এমন প্রত্যাশা করেন ব্যবহারকারীরা। গুগলকে অবস্থানগত তথ্য ও ফেসবুককে নিজের পছন্দের খুঁটিনাটি জানিয়ে দেন তাঁরা। এতে গুগল ও ফেসবুক ব্যবহারকারীর পছন্দ অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দেখানোর সুযোগ পায়। কিন্তু এখন গুগল ও ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষিত রাখছে না বলেই প্রমাণ করেছে।

তাহলে এত বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিশ্বাস করা যাবে কাকে? আমাজন নিরাপত্তা দেওয়া নিয়ে নিজেরা গর্ব করে। নিরাপত্তা রক্ষায় অ্যাপলেরও সুনাম রয়েছে। গত এপ্রিল মাসে সার্ভে মাংকি ও রিকোডের করা এক সমীক্ষায় ব্যবহারকারীকে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় কোন প্রতিষ্ঠান বেশি বিশ্বস্ত, সে প্রশ্ন করা হয়। এতে মাত্র ২ শতাংশ ব্যবহারকারী অ্যাপল ও আমাজনের নাম করেন। সমীক্ষায় সবচেয়ে কম আস্থার প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফেসবুক ও গুগলের নাম উঠে আসে।

ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষার দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চকণ্ঠ অ্যাপলের কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।

এর বাইরে অ্যাপল ও আমাজনের ডিভাইসে চীনের ‘স্পাই চিপ’ ব্যবহারের কেলেঙ্কারির কথাও শোনা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার আক্রমণ ও হ্যাকের ঘটনা ঘটতে থাকবে। কিন্তু এর মধ্যে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থার সংকট তৈরি হতে দেখা যাচ্ছে। অ্যাপল, গুগল, ফেসবুক আমাজনকে যদি ব্যবহারকারীর আস্থা ধরে রাখতে হয়, তবে তাদের তথ্য সুরক্ষার বিষয়টি আগে নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ঘটনা ঘটলে ব্যবহারকারীকে দ্রুত জানাতে জবে। তবে এখন নিয়ন্ত্রকেরা অনেক বেশি জরিমানা করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে ব্যবহারকারীদের তথ্য সুরক্ষার বিষয়টি কিছুটা হলেও উন্নত হবে। তবে কোন প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা রাখবেন, সেটা নির্ভর করছে ব্যবহারকারীর ওপরই।