ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর বিজ্ঞাপন প্রচারে কাজে লাগাচ্ছে ফেসবুক

ফেসবুক
ফেসবুক

ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য কাজে লাগিয়ে অর্থ আয় করছে ফেসবুক। এ কাজে ব্যবহারকারীর দেওয়া ফোন নম্বর তাদের আরও সুবিধা করে দিচ্ছে। অথচ ফেসবুক দাবি করে, তারা ব্যবহারকারীর কাছ থেকে পাওয়া মোবাইল ফোন নম্বর নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন দেখাতে ব্যবহার করে না। তারা অ্যাকাউন্ট নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ফেসবুকের ওই দাবি ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ইস্টার্ন ও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক পরীক্ষা করে দেখেছেন, ব্যবহারকারীর মোবাইল ফোন নম্বর নিয়ে ফেসবুক প্রতারণামূলক অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে। ফেসবুক নিরাপত্তা দেওয়ার অজুহাতে টার্গেটেড বিজ্ঞাপনের জন্য ফোন নম্বর সংগ্রহ করছে। দুটি পদ্ধতিতে ফেসবুক এ কাজ করছে। একটি হচ্ছে টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (টুএফএ) ফোন নম্বর এবং আরেকটি হচ্ছে ‘শ্যাডো’ কন্টাক্টের তথ্য।

যখন কোনো ব্যবহারকারী ফেসবুককে অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার খাতিরে টুএফএ সেট করতে ফোন নম্বর দেন বা তাঁদের অ্যাকাউন্টে নতুন লগইন সম্পর্কে সতর্ক বার্তা পান, তখন তাঁর ফোন নম্বরটি ফেসবুক যাচাই করে নিতে পারে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যাচাই করা বা প্রকৃত অ্যাকাউন্টটি ফেসবুকের কাছে হয়ে ওঠে ‘সোনার খনি’। তারা বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে ফোন নম্বর দিয়ে যাচাই করা প্রকৃত অ্যাকাউন্ট হিসেবে সেটি উপস্থাপন করতে পারে। ফেসবুক টুএফএ ফোন নম্বরের অপব্যবহার অনেক আগে থেকেই করে আসছে।

তবে একে টুএফএ নিরাপত্তাব্যবস্থার ত্রুটি বলা যায় না। অর্থাৎ অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে এ পদ্ধতিকে অবহেলা করা বা এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়। কারণ, সমস্যা টুএফএ পদ্ধতিতে নয়। সমস্যা হচ্ছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের ব্যবহারকারীর তথ্য ব্যবস্থাপনায়। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা ও প্রাইভেসিসংক্রান্ত আস্থা নষ্ট করছে ফেসবুক।

কয়েক ধরনের টুএফএ পদ্ধতি চালু আছে। এর মধ্যে এসএমএসভিত্তিক টুএফএ পদ্ধতিতে ফোন নম্বরে একটি কোড গ্রহণ করেন ব্যবহারকারী, যা ফেসবুকে লগইন করতে ব্যবহার করতে হয়। অন্য পদ্ধতিগুলোর মধ্যে আছে অ্যাপ অথেনটিকেটর ও হার্ডওয়্যার টোকেন। এতে অবশ্য ফোন নম্বরের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু কয়েক মাস আগে ফেসবুক সব ধরনের টুএফএ পদ্ধতিতে ফোন নম্বর বাধ্যতামূলক করেছে।

শ্যাডো কন্টাক্ট বা ছায়া নম্বর–সম্পর্কিত তথ্য নিয়েও ফেসবুক আস্থা নষ্ট করছে। বন্ধুদের কাছ থেকে ফেসবুক কন্টাক্ট লিস্টের তথ্য সংগ্রহ করে। যদি কেউ ফেসবুকে তার কন্টাক্ট নম্বর শেয়ার করেন, তখন তাঁর কন্টাক্টের তালিকায় থাকা অন্য নম্বরে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সুযোগ করে দেয় ফেসবুক। এক মাস পর থেকেই এ শ্যাডো কন্টাক্ট–সুবিধা নিতে শুরু করে ফেসবুক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেসবুক যেভাবে মোবাইল ফোন নম্বরের ছায়া প্রোফাইল তৈরি করে, তা স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নয়। ব্যবহারকারীদের পক্ষে ওই ছায়া কন্টাক্ট নম্বর খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। এমনকি ইউরোপের কঠিন নিয়মকানুনের মধ্যেও ফেসবুক এভাবে ফোন নম্বর কাজে লাগিয়ে যাচ্ছে।

তবে এখন অনেকেই সচেতন হয়েছেন। সম্প্রতি ফেসবুক থেকে তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনা ও কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির পর ব্যবহারকারীদের আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এ কাজে তাদের আগে নিজেদের স্বচ্ছ হতে হবে এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। টুএফএ নম্বর মুছে দেওয়া ও ছায়া নম্বর–সম্পর্কিত তথ্য বাজে কাজে লাগানো ঠেকানোর উদ্যোগ দিয়ে শুরু করতে পারে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। তথ্যসূত্র: জেডডিনেট, টেকক্রাঞ্চ।