পল আমার জীবন বদলে দিয়েছে

>নিজের ব্লগসাইটে প্রিয় বন্ধু, সহকর্মী এবং ব্যবসায়িক অংশীদার পল অ্যালেনের (১৯৫৩-২০১৮) সঙ্গে কাটানো স্মৃতি রোমন্থন করেছেন বিল গেটস। সেখানে কীভাবে তাঁদের দেখা হলো, কীভাবে কলেজ ছেড়ে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করলেন, কেমন ছিলেন পল, সর্বোপরি তাঁদের সম্পর্কের নানা দিক উঠে এসেছে।
যেকোনো কঠিন বিষয় বিল গেটসকে সহজে বুঝিয়ে দিতেন বন্ধু পল অ্যালেন (বাঁয়ে)। ছবি: সংগৃহীত
যেকোনো কঠিন বিষয় বিল গেটসকে সহজে বুঝিয়ে দিতেন বন্ধু পল অ্যালেন (বাঁয়ে)। ছবি: সংগৃহীত

আমার পুরোনো বন্ধুদের একজন এবং প্রথম ব্যবসায়িক অংশীদার পল অ্যালেন আর নেই। আমি তাঁর বোন জোডি, পরিবারের অন্য সদস্য এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সহকর্মীদের প্রতি সমবেদনার হাত বাড়িয়ে দিতে চাই।

সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় পলের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় এবং সেটাই আমার জীবন বদলে দিয়েছে।

আমি সরাসরি তাঁর দিকে তাকালাম। স্কুলে তিনি আমার চেয়ে দুই ক্লাস ওপরে ছিলেন। বেশ লম্বা। কম্পিউটারে দুর্দান্ত মেধা ছিলেন। পরে বেশ সুন্দর দাড়ি রেখেছিলেন, আমি যা কোনো দিনই পারিনি। আমরা একসঙ্গে সময় কাটাতাম, বিশেষ করে স্কুলে যখন প্রথম কম্পিউটার এল। হাতে কোনো কাজ না থাকলে সামনে যে কম্পিউটার পেতাম, সেটা নিয়েই ঘাঁটাঘাঁটি করতাম।

স্কুলে থাকতেই পল বুঝেছিলেন কম্পিউটার পৃথিবী বদলে দেবে। আমরা তখন জানতামই না পার্সোনাল কম্পিউটার কী। তিনি ঠিকই বুঝেছিলেন, কম্পিউটারের প্রসেসর একদিন খুব শক্তিশালী হবে, যা নতুন এক শিল্পের জন্ম দেবে। আমরা একসঙ্গে যা কিছু করেছি, তা পলের এই দূরদর্শিতার ওপর ভিত্তি করেই করেছি।

সত্যি বলতে কি, পল না থাকলে মাইক্রোসফটের জন্মই হতো না। ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরের কথা। আমরা দুজনই বোস্টন (যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে) এলাকায় থাকতাম। তিনি চাকরি করতেন আর আমি কলেজে পড়তাম। একদিন দৌড়ে এসে বললেন আমি যেন তাঁর সঙ্গে কাছের পত্রিকার দোকানে যাই। যখন গেলাম, আমাকে তিনি পপুলার ইলেকট্রনিকস-এর জানুয়ারি সংখ্যার প্রচ্ছদ দেখালেন। অলটেয়ার ৮৮০০ নামের শক্তিশালী প্রসেসরের কম্পিউটার নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করা হয়েছিল। আমার দিকে তাকিয়ে পল বললেন, ‘আমাদের ছাড়াই এটা হচ্ছে (কম্পিউটার-বিপ্লব)!’ ঠিক সে মুহূর্তেই আমার কলেজজীবনের ইতি এবং মাইক্রোসফট নামে নতুন এক প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। পল ছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল।

প্রথম ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে পল এমন একটা মানদণ্ড দাঁড় ঠিক করেছিলেন, যা খুব কম মানুষই ছুঁতে পারত। তাঁর মন ছিল সুদূরপ্রসারী। জটিল বিষয় সহজে ব্যাখ্যা করতে পারতেন। যেহেতু ছোট থেকেই তাঁকে জানার সৌভাগ্য হয়েছে, বাকি বিশ্বের আগেই তাঁর এই গুণ আমি দেখেছি। কৈশোরে গোটা দুনিয়ায় শুধু গ্যাসোলিন নিয়ে আমার আগ্রহ ছিল। পরিশোধন মানে কী? আমার জানা সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষটার কাছে গেলাম। বিষয়টি পল খুব মজার ও পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করলেন। পরবর্তী কয়েক দশকে আমাদের অসংখ্য মজার আলোচনার ছোট্ট একটা উদাহরণ এটি।

পল আমার চেয়ে চৌকস ছিলেন। কৈশোরেই জিমি হেনড্রিক্সের (মার্কিন গিটারিস্ট) ভক্ত ছিলেন। এখনো মনে আছে, আমার জন্য আর ইউ এক্সপেরিয়েন্সড? (জিমি হেনড্রিক্সের প্রথম অ্যালবাম) বাজাতেন তিনি। তখন এসবের তেমন কিছু আমি জানতাম না। তবে পল আমার সঙ্গে চমৎকার এই সংগীত ভাগাভাগি করতেন। তিনি ঠিক এমন মানুষই ছিলেন। তিনি জীবনকে ভালোবেসেছেন, মানুষকে ভালোবেসেছেন, এবং তা প্রকাশও করেছেন।

খেলাধুলাতেও খুব আগ্রহ ছিল পলের। বন্ধুদের সঙ্গে তা নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসতেন। পরবর্তী বছরগুলোতে আমাকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর পছন্দের পোর্টল্যান্ড ট্রেইল ব্লেজার্সের (মার্কিন বাস্কেটবল দল) খেলা দেখতে যেতেন এবং খুব ধৈর্য ধরে মাঠের প্রতিটি বিষয় বুঝিয়ে দিতেন।

যখন পলকে নিয়ে ভাবি, আমার চোখে খুব আবেগী একজন মানুষ ভেসে ওঠে যিনি তাঁর পরিবার ও বন্ধুদের ভালোবেসেছেন। খুব মেধাবী এক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ এবং মানবপ্রেমীকেও দেখি, যিনি জীবনে অসাধারণ সব কাজ করতে চেয়েছেন, এবং করেছেন।

জীবনের কাছে আরও সময় পাওনা ছিল পলের। আমি জানি, সে সময়টাও তিনি কাজে লাগিয়ে চমৎকার কিছু করতেন। আমি তাঁকে খুব মিস করব।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মেহেদী হাসান