গাড়িটি এখন কোথায়?

ম্যাপ দেখে কোথাও যাওয়া বা কোনো কিছুর অবস্থান খুঁজে বের করতে কষ্ট করতে হয় না এখন। এর পেছনে রয়েছে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) প্রযুক্তি। জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সহজেই আপনার গাড়ির অবস্থান থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটার বা মুঠোফোনের মাধ্যমে জানতে পারবেন। এতে গাড়ি বা মোটরসাইকেল চুরি যেমন ঠেকানো যায়, তেমনি নিরাপদ রাখা যায় পরিবারকে।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায় জিপিএস যন্ত্রের বাজার ক্রমেই বাড়বে। ২০২৩ সাল নাগাদ জিপিএস যন্ত্র বা ডিভাইসের বাজার দাঁড়াবে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকায়। প্রতিবছর ১১ দশমিক ৯ শতাংশ হারে এ বাজার বড় হচ্ছে। জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইসের বাজার মূলত ভেহিকল ট্র্যাকিং বা যানবাহনের অবস্থান জানার মতো বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে বেড়ে চলেছে।

কোনো গতিশীল বস্তুর অবস্থানগত তথ্য ট্র্যাকিং ডিভাইসের ভেতরে সংরক্ষণ করে রাখা যায় বা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে (সেন্ট্রাল কন্ট্রোল ইউনিট) তথ্য পাঠানো যায়। জিপিএস ট্র্যাকারে একটি জিপিএস যন্ত্র থাকে, যা সংকেত গ্রহণ করে। পদ্ধতিটি বেতার, কৃত্রিম উপগ্রহ বা সেলুলার মডেম ব্যবহার করে থাকে, যন্ত্রে যা সহজে ধরা পড়ে। এতে ছোট আকারের মোবাইল ফোনের মতো বস্তুও শনাক্ত করা যায়। জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইসের অবস্থান জ্যামিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ম্যাপের ওপর বস্তুর অবস্থান দেখাতে পারে। জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেমকে বেসিক, ইন্টারমিডিয়েট ও অ্যাডভান্সড—এ তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

দেশে জিপিএস ট্র্যাকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা জানান, স্মার্টফোন বা ট্যাব ব্যবহারের ফলে জিপিএস যন্ত্রের চাহিদা বাড়ছে। এর মাধ্যমে যেকোনো ধরনের আবহাওয়াতেই কোনো বস্তুর অবস্থানকে নিখুঁত ও নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করা যায়। অবস্থান চিহ্নিত করার এ সুবিধাকে ব্যবহার করে জিপিএসকে প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা যায়। যেকোনো ধরনের স্মার্টফোন এবং বিনা মূল্যের অনেক অ্যাপই এসব কাজের জন্য যথেষ্ট।

দেশেও জিপিএস যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। গাড়ি বা মোটরসাইকেল চুরি ঠেকাতে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে ভেহিকল ট্র্যাকার প্রযুক্তি। এটি এমন এক প্রযুক্তির সমন্বয়, যার ব্যবহারের মাধ্যমে গাড়ির মালিক ঘরে বসেই নিজের গাড়ির গতি ও চলাচল সম্পর্কে তথ্য পান। ভেহিকল ট্র্যাকার যন্ত্রটি দেখতে মুঠোফোনের মতো। অনেক সময় ক্যামোফ্লেজ তৈরি করতে যন্ত্রের আকার একেক রকম হয়ে থাকে। গাড়ির ইঞ্জিনের একটা অংশে এ যন্ত্র বসানো থাকে। এতে গাড়িটি কোথায় কত গতিতে যাচ্ছে, তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই জানা যায়। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গাড়ি চলাচলের জন্য এলাকাও নির্ধারণ করে দেওয়া যায়।

দেশে যানবাহনের অবস্থান শনাক্ত করার সুবিধা দেয় মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন, রবিসহ আরও কটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। গ্রামীণফোনের একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ভেহিকল ট্র্যাকিং সুবিধা পেতে হলে গাড়িতে বিশেষ ধরনের জিপিএস যন্ত্র বসাতে হবে। এটি জিপিআরএসের মাধ্যমে ওয়েব ও সংশ্লিষ্ট সার্ভারে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে থাকে। ব্যবহারকারীরা ওয়েবসাইট, মোবাইল এসএমএস এবং নির্দিষ্ট কল সেন্টারের মাধ্যমে গাড়ির অবস্থান জানতে পারেন। এটি সমন্বিত প্রযুক্তি। এ যন্ত্রে সিম কার্ড ও মডিউল থাকে। কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে সেখান থেকে অবস্থানগত তথ্য (লোকেশন ডেটা) আসে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সার্ভারে তা জমা হয়। পরে তা নানা প্রক্রিয়ায় ওয়েব সার্ভিস বা এসএমএসে পাওয়া যায়।

জিপিএস ট্র্যাকিং সার্ভিস নেওয়াটা অনেকটাই সিম কেনার মতো প্রক্রিয়া। বিভিন্ন তথ্য পূরণ করে সংযোগ ও যন্ত্র কিনলে তা গাড়িতে ইনস্টল করিয়ে নেওয়া যায়। গ্রামীণফোন তিন ধরনের প্যাকেজে ডিভাইস বিক্রি করে থাকে। ডিভাইসের দাম ১১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। মাসিক ৬৯৬ থেকে ৩৪০ টাকা পর্যন্ত প্যাকেজের মাধ্যমে সেবা নেওয়া যাবে।

গ্রামীণফোন ছাড়াও বাজারে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভেহিকল ট্র্যাকিং সেবা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি ও নেটওয়ার্ক সেবাদাতা বিডিকমের এ ধরনের সেবা রয়েছে। সব প্রতিষ্ঠানের আলাদা ওয়েবসাইট রয়েছে। ওয়েবসাইটে মালিককে তাঁর ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে হয়। এরপরই তাঁর গাড়ির সম্পর্কে সব তথ্য জানা যায়। মোটরগাড়ি, বাস, ট্রাক, মিনিবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ সব ধরনের যানবাহনেই এ প্রযুক্তি কাজ করে।

বাজারেও ১ হাজার থেকে শুরু করে ৬ হাজার টাকার মধ্যে নানা রকম ট্র্যাকিং ডিভাইস কিনতে পাবেন। অনলাইনেও এ ধরনের যন্ত্র পাওয়া যায়। এসব ডিভাইসে লাইভ ট্র্যাকিং, লাইভ ভয়েস ট্র্যাকিং, ইঞ্জিন লক, গাড়ির গতিসীমা নির্ধারণ, প্যানিক অ্যালার্ম সুবিধাও পাবেন। এর বাইরে কোনো বস্তু নজরদারি করার জন্যও নানা আকারের ডিভাইস বাজারে পাওয়া যাবে। এগুলোর একেকটির কার্যকারিতা একেক রকম। তবে তথ্য নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে উন্নত ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের তৈরি ট্র্যাকার ডিভাইস কেনার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।