রাজধানীর হাতিরঝিলের মহানগর প্রজেক্টের চক্রাকার বাস কাউন্টারে টিকিটের জন্য লম্বা সারি। কিন্তু এক যাত্রী টিকিট না কেটেই বাসে উঠে গেলেন। টিকিট কেটে বাসে উঠে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। গুলশানের এক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সৈয়দ আরমান হোসেন। টিকিট ছাড়া বাসে ওঠার ঘটনা জানতে চাইলাম। বললেন, ‘প্রতিদিন এ রুটে চলাচল করতে হয়। প্রায় সময় টিকিট কাটার জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কাউন্টারে। এতে অনেক সময় লাগে। তাই কাগজের টিকিটের বদলে ডিজিটাল টিকিট (র্যাপিড পাস) নিয়ে নিয়েছি।’
পুলিশ প্লাজা কনকর্ডের চক্রাকার বাসের কাউন্টার থেকে র্যাপিড কার্ড কিনতে পারবেন যাত্রীরা। যাত্রীদের পাস দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছেন র্যাপিড বাসস্টপ অপারেটর আবদুল মালেক। তিনি বলেন, যেকোনো নাগরিক র্যাপিড পাস নিতে পারবেন। কার্ড নিতে হলে যাত্রীদের একটা ফরম পূরণ করতে হবে, গুনতে হবে ৪০০ টাকা। যাত্রীর নাম, ফোন নম্বর, জন্ম তারিখ এবং স্বাক্ষর নিয়ে ফরমটি আমাদের কাছে জমা দিতে হবে। আমরা এ তথ্যগুলো একটি সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত করি। সব ঠিকঠাক হলে যাত্রীকে আমরা একটি র্যাপিড কার্ড দিই।
র্যাপিড পাসধারী যাত্রীরা গাড়িতে ওঠার সময় কার্ডটি মেশিনে স্পর্শ করেন। আরেকবার নামার সময়। কার্ড মেশিনে স্পর্শ করলেই ভাড়া পরিশোধ হয়ে যাবে। কার্ডটি নামার সময় যন্ত্রে স্পর্শ করলে একটা টোকেন চলে আসবে। সে টোকেনে যাত্রার বিস্তারিত লেখা থাকবে। টোকেনে ভাড়ার পরিমাণ, কাউন্টারের নামসহ সবকিছু লেখা থাকবে। সময়মতো কার্ড রিচার্জ করারও ব্যবস্থা রয়েছে। কার্ডে টাকা না থাকলেও একবার ভ্রমণের সুযোগ পাওয়া যাবে। রিচার্জের পর বকেয়া টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হবে।
কয়েকটি কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে র্যাপিড কার্ডের বিষয়ে ভালো আগ্রহ দেখাচ্ছেন যাত্রীরা। পুলিশ প্লাজা কনকর্ডের সামনের কাউন্টারে কথা হয় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না ইয়াসমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, র্যাপিড কার্ড ব্যবহারে অনেক ঝামেলা থেকে মুক্তি পেয়েছি। অনেক সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে গিয়ে বাস ছেড়ে দেয়। এ ছাড়া টাকা ভাংতির ঝামেলাসহ বিভিন্ন বিষয় তো আছেই।
গণপরিবহনব্যবস্থায় সমন্বিত ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালুর লক্ষ্যে ২০১৪ সালে সরকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এই প্রকল্পের আওতায় র্যাপিড পাস সেবা চালু করা হয়। এতে আর্থিক সহায়তা দেয় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বর্তমানে রাজধানীর মতিঝিল-আবদুল্লাহপুর রুটের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বিআরটিসি, হাতিরঝিলের চক্রাকার বাস এবং গুলশানের ঢাকা চাকা বাসে যাত্রীরা র্যাপিড পাস–সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।
কোথায় পাওয়া যাবে?
হাতিরঝিলের র্যাপিড পুলিশ প্লাজা এবং রামপুরা স্টপেজ থেকে কেনা ও রিচার্জ করা যাবে। এর মধ্যে ২০০ টাকা রিচার্জ হিসেবে কার্ডে জমা থাকবে আর বাকি ২০০ টাকা কার্ডে ডিপোজিট হিসেবে থাকবে। ব্যবহারকারীরা একবার সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ১০০ টাকা রিচার্জ করতে পারবেন।