অশরীরী কল

চোখে মিশ্র বাস্তবতার হলোগ্রাফিক কলে সামনের ফাঁকা জায়গায় (নিচে) দেখা যাবে অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে (ওপরে)
চোখে মিশ্র বাস্তবতার হলোগ্রাফিক কলে সামনের ফাঁকা জায়গায় (নিচে) দেখা যাবে অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে (ওপরে)

মঞ্চ খালি। তবে জনতা উৎসুক। নতুন প্রযুক্তির মহড়া দেখবে বলে অপেক্ষা করছে সবাই। এমন সময় ভোজবাজির মতো মঞ্চে কোত্থেকে যেন হাজির হলেন স্টেফ হটন। ইংলিশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের এই অধিনায়ক খানিকক্ষণ বল নিয়ে কসরত দেখালেন। দর্শকসারির এক ভক্ত মঞ্চে এগিয়ে গেলে তাঁকে কিছু কলাকৌশলও শিখিয়ে দিলেন। তবে সবশেষে যখন তাঁরা হাত মেলাতে গেলেন, তখনই ধরা পড়ল প্রযুক্তির কেরামতি।

পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক ফাইভ-জির মাধ্যমে হলোগ্রাফিক ভিডিও কল দেখার জন্য যুক্তরাজ্যের নিউবারিতে জনতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল মোবাইল ফোন সেবাদাতা ভোডাফোন। স্টেফ হটন তখন প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে ম্যানচেস্টারে। সেখান থেকেই থ্রিডি হলোগ্রাম প্রযুক্তি মানে হলোগ্রাফিক কলের মাধ্যমে হাজির হয়েছিলেন নিউবারির মঞ্চে।

 শুরুটা বেশ আগে

বাণিজ্যিকভাবে মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু হয় আশির দশকে। ২০০১ সালে থ্রি-জি ইন্টারনেটের চল শুরু হলে ছড়িয়ে পড়ে ভিডিও কল। তবে ভিডিও টেলিফোনির ধারণা কিন্তু ঢের আগের। সেই ১৮৭০ সালে চালু হয়ে পরবর্তী ছয় বছরে বিষয়টি জনপ্রিয়তাও পেয়েছিল। যদিও তা বর্তমানের মতো সহজসাধ্য ছিল না, তবে ভিডিও কল প্রযুক্তিটি শত বছরের পুরোনো। সেই প্রযুক্তিরই আধুনিক সংস্করণ হলো থ্রিডি লাইভ হলোগ্রাম প্রযুক্তি। এরই মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়ায় প্রদর্শনী হয়েছে।

 হলোগ্রাফিক কল কী

হলোগ্রাফিক কল মূলত ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটি প্রযুক্তির উন্নত সংস্করণ। এই প্রযুক্তির প্রধান অংশ তিনটি—ধারক, বাহক ও গ্রাহক। প্রথমে ৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও ক্যামেরায় কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর লাইভ ত্রিমাত্রিক ছবি ধারণ করে তা দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে পাঠানো হয়। মিক্সড রিয়্যালিটি হেডসেটের মাধ্যমে সরাসরি সে ব্যক্তির অবয়ব ফুটে ওঠে চোখের সামনে। ব্রডব্যান্ডের বাইরে এই হলোগ্রাফিক কল শুধু ফাইভ-জি ইন্টারনেটের মাধ্যমেই সম্ভব, তা-ও উন্নত মানের।

 প্রথম প্রদর্শনী দক্ষিণ কোরিয়ায়

বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক হলোগ্রাফিক কলের প্রদর্শনী হয় গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে। দক্ষিণ কোরিয়ার টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান কোরিয়া টেলিকম এবং যুক্তরাজ্যের ভেরাইজন জোট বেঁধে এই হলোগ্রাফিক কলের সূচনা করে। সেটাই ছিল ফাইভ-জি ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রথম হলোগ্রাফিক কল। এরপর চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইভ-জির মাধ্যমে হলোগ্রাফিক ভিডিও কলের প্রদর্শনী করে ভোডাফোন। আর অক্টোবরে রাশিয়ায় ভিম্পেলকমের সহযোগিতায় হলোগ্রাফিক কল করে দেখায় চীনা টেলিযোগাযোগ পণ্যনির্মাতা হুয়াওয়ে।

 চোখ আগামী পাঁচ বছরে

হলোগ্রাফিক কল অনেকটা হুমায়ূন আহমেদের ‘হাত ভর্তি চাঁদের আলো’র মতো। যে আলো ধরা যায় না, শুধু দেখতে হয়। সেটা ভিন্ন অর্থেও। মানে কোরিয়া-যুক্তরাজ্যে দেখানো হলেও বাংলাদেশে কবে নাগাদ তা সহজলভ্য হবে, বলা কঠিন। তবে যুক্তরাজ্যে প্রদর্শনীর পর হলোগ্রাফিক কল নিয়ে হইচই পড়েছে। কারণ, সেটিই ছিল প্রথম পূর্ণাঙ্গ হলোগ্রাফিক কলের নমুনা। বলা হচ্ছে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্যের সর্বত্র ফাইভ-জি যেমন ছড়িয়ে দেওয়া হবে, তেমনই ছড়িয়ে পড়বে হলোগ্রাফিক কল। বাংলাদেশেও ফাইভ-জির পরীক্ষা হয়েছে। তবে হলোগ্রাফিক কলের মতো উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেনি।

 বর্তমান হলোগ্রাফিক কলের সমস্যা

হলোগ্রাফিক কলের প্রযুক্তি সবে শুরু হয়েছে। বর্তমানের প্রযুক্তিতে কল করতে এখনো ভারী আয়োজনের প্রয়োজন। উন্নত ৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও ক্যামেরা, আর সেই ক্যামেরায় ধারণ করা সচিত্রের রেন্ডারিং অর্থাৎ সঞ্চালনের জন্য মিক্সড রিয়্যালিটি গ্লাসের ব্যবহার বেশ ঝামেলার। তবে হলোগ্রাফিক পর্দার স্মার্টফোনের দেখাও মিলেছে। হলোগ্রাফিক কল করার সুবিধাযুক্ত স্মার্টফোন বাজারে এলেই সহজে ব্যবহার করা যাবে এই প্রযুক্তি।