জাকারবার্গের মতো লোকসান আর কার হয়েছে?

ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ
ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ

জাকারবার্গের সম্পদ যেমন ধপ করে বেড়েছে, তেমনি ধুপ করে কমেও গেছে। একজনের কত টাকা লোকসান হলে গায়ে লাগতে পারে? অনেকে সামান্য লোকসানেই চোখে অন্ধকার দেখেন। সে হিসাবে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গকে তো ২০১৮ সালের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বলা যায়। ২০১৮ সালে জাকারবার্গের ব্যক্তিগত লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি যা লাওস, সেনেগাল বা জ্যামাইকার মতো দেশগুলো বার্ষিক জিডিপির সমান। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, বিশ্বের যে ৪৯৯ জন ধনী রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি অর্থ খুইয়েছেন জাকারবার্গ।

ব্যবসাবিষয়ক ওয়েবসাইট ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে বলছে, এ বছরের শেষ নাগাদ জাকারবার্গ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ খোয়াবেন। এ বছর ১৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন অর্থ খোয়াচ্ছেন তিনি। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৫২ দশমিক ৯ বিলিয়ন। ব্লুমবার্গের সূচকে তিনি বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের সাত নম্বরে নেমে গেছেন। অথচ গত ১ জানুয়ারি জাকারবার্গের সম্পদ দাঁড়িয়েছিল ৭২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এ বছরের জুলাই মাসের ২৫ তারিখ জাকারবার্গের মোট সম্পদ সবচেয়ে বেশি হয়েছিল। তিনি ৮৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদের মালিক হয়ে যান। কিন্তু বছর শেষ না হতেই ভিন্ন চিত্র। গত কয়েক মাসেই ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ লোকসান হয়েছে তাঁর।

সিএনবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দারুণভাবে বছর শুরু হলেও জাকারবার্গের ২০১৮ সালের শেষটা ভালো হচ্ছে না। ফেসবুকের তথ্য ফাঁস, তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনায় ফেসবুকের শেয়ারের দাম পড়ে গেছে। অথচ এ বছরের জুলাই মাসে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তৃতীয় স্থানে উঠে আসেন জাকারবার্গ। ব্লুমবার্গের তালিকা অনুযায়ী, তাঁর সামনে ছিল কেবল বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের সিইও ওয়ারেন বাফেট ও মাইক্রোসফটের অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রযুক্তি জগতের বিলিয়নিয়ারদের চলতি বছরটি খুব একটা ভালো যায়নি। বিশেষ করে গত কয়েক মাস খুব বাজে অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছেন তাঁরা। এ কারণে অনেক শীর্ষ ব্যক্তিত্ব তাঁদের আগের অর্থ ধরে রাখতে পারেননি। অর্থ খোয়ানোর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। এ বছর হয়তো তিনি ভুলেই যেতে চাইবেন। বছরের শুরু থেকেই গ্রাহকদের তথ্য চুরি, তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে তথ্য শেয়ার, তথ্য অপব্যবহার ইত্যাদি কারণে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ফেসবুক, যা এখনো চলমান।

একের পর এক বিতর্ক ফেসবুকের গ্রহণযোগ্যতা যেমন কমিয়েছে, তেমনই এর প্রতিষ্ঠাতা জাকারবার্গকে করেছে কোণঠাসা। অনেক ব্যবহারকারী ফেসবুক ছেড়ে অন্য মাধ্যম ব্যবহার শুরু করেছেন। আর এসবের প্রভাব পড়েছে ফেসবুকের আয়ে। এর মধ্যেই নিউইয়র্ক টাইমস এক বোমা ফাটানো প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই ফেসবুক অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে তথ্য সরবরাহ করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতাকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে যেতে বলেন। এর আগে শেয়ারের দরপতনের সময় বিনিয়োগকারীরাও তাঁকে সরে যেতে বলেছিলেন।

২০১৮ সাল সবচেয়ে ভালো গেছে আমজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের। বিশ্বের শীর্ষ ধনী হিসেবে আমাজনের প্রধান নির্বাহী সম্পদ এ বছর ২২ দশমিক ৭ বিলিয়ন বেড়েছে। তাঁর বর্তমান সম্পদ ১২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।