স্টিফেন হকিংয়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিজ্ঞান বক্তৃতা

স্টিফেন হকিংয়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী এবং আইনস্টাইনের ১৪০তম জন্মদিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর একটি বক্তৃতা আয়োজন করে। প্রথম আলোর সভাকক্ষে বক্তৃতাটি অনুষ্ঠিত হয়।
স্টিফেন হকিংয়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী এবং আইনস্টাইনের ১৪০তম জন্মদিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর একটি বক্তৃতা আয়োজন করে। প্রথম আলোর সভাকক্ষে বক্তৃতাটি অনুষ্ঠিত হয়।

স্টিফেন হকিংয়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী এবং আইনস্টাইনের ১৪০তম জন্মদিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর একটি বক্তৃতা আয়োজন করে। প্রথম আলোর সভাকক্ষে বক্তৃতাটি অনুষ্ঠিত হয়। আগে নিবন্ধনের মাধ্যমে সব বয়সের জন্য উন্মুক্ত এ বক্তৃতায় অংশ নেন শতাধিক শ্রোতা। ‘আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং ও মেরেলিন মনরো’ শীর্ষক বক্তৃতাটি প্রদান করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান।

মুনির হাসান বক্তৃতায় গত এক শ বছরের বিজ্ঞানের গতিধারা তুলে ধরেন। তিনি দেখান, আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে যে বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলো করেছিলেন, তার পূর্ণতা পায় ১৯১৬ সালে। তাঁর ওই সময়ের বৈপ্লবিক ধারণাগুলো বিজ্ঞানের গতিপথই পাল্টে দেয়, অজানা অনেক রহস্য উন্মোচন করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আইনস্টাইনই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিন্তার ক্ষেত্রে ঔদার্য হারিয়ে ফেলেন। তাই ১৯২৭ সালের সলভে কনফারেন্সে তিনি তৎকালীন বিজ্ঞানের একদম নতুন ধারণাগুলো, যেমন হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি মানতে পারেননি। এমনকি নিজের সাধারণ আপেক্ষিকতা থেকে উদ্ভূত মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের ধারণারও তিনি বিরোধিতা করেন। পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হয়, মহাবিশ্বের আসলেই সম্প্রসারণ হচ্ছে।

আরও বিজ্ঞানীর উদহারণ দিয়ে মুনির হাসান বোঝানোর চেষ্টা করেন, বিজ্ঞানীদের যুগান্তকারী চিন্তাগুলো তাঁদের তরুণ বয়সের গবেষণারই ফল। এই কথাটা স্টিফেন হকিং তরুণ বয়সেই বুঝতে পারেন। এ জন্য তিনি সচেতনভাবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারুণ্য ধরে রাখার চেষ্টা করেন। এ জন্যই মেরেলিন মনরোর প্রতি স্টিফেন হকিংয়ের ছোটবেলার মুগ্ধতা কখনোই শেষ হয়নি। এমনকি মৃত্যুর আগেও স্টিফেন হকিংয়ের রুমে আইনস্টাইন ছাড়া মেরেলিন মনরোর পোস্টারও টাঙানো ছিল।

মুনির হাসান তাঁর বক্তৃতায় আইনস্টাইনের কাজ এবং স্টিফেন হকিংয়ের কাজের সংযোগ নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় অবধারিতভাবে উঠে আসে হকিংয়ের বন্ধু বাংলাদেশের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলামের কথা। স্টিফেন হকিং কাজ করেন মহাবিশ্বের শুরু নিয়ে, অপরদিকে জামাল নজরুল ইসলাম কাজ করেন মহাবিশ্বের পরিণতি নিয়ে। হকিং এবং জামাল নজরুল একে অপরকে কীভাবে প্রভাবিত করতেন তা এই বক্তৃতায় উঠে আসে।

স্টিফেন হকিং মানবজাতির জন্য কিছু হুঁশিয়ারি দিয়ে গিয়েছেন। তাঁর মতে, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য আশংকার বিষয় হলো, একসময় মানুষ সবকিছু আবিষ্কার করে ফেলবে। সবকিছু জেনে গেলে হয়তো মানুষ বেঁচে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। অপরদিকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করতে গিয়ে হয়তো এমন কোনো প্রাণী সৃষ্টি করা হবে, যা মানুষের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনবে। তাই সব সময় স্টিফেন হকিং মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অন্য গ্রহে যাওয়ার পথ খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছেন।

মুনির হাসান তাঁর বক্তৃতা শেষ করেন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা দিয়ে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবও যে আইনস্টাইন-স্টিফেন হকিংদের মতো বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সংযুক্ত বিষয় তা-ই তুলে ধরার চেষ্টা করেন তিনি। সবশেষে উপস্থিত শ্রোতাদের প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে আয়োজনটি শেষ হয়।