মানুষের চোখ এখন মঙ্গলে

ঠিক ৫০ বছর আগে চাঁদের বুকে পা এঁকেছিল মানুষ। চন্দ্রবিজয়ের সেই অভিযানের সফলতা মানবজাতির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। মানুষ প্রমাণ করেছে, তাঁর পক্ষে অসম্ভব কিছুই নেই। তবে চাঁদে বসতি গড়া খরচের ব্যাপার বলে মানুষের ভাবনায় এখন মঙ্গল গ্রহ। চন্দ্র বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘বিজ্ঞানচিন্তা-মেটাল ২০১৯-২০’ শীর্ষক বিজ্ঞান বক্তৃতানুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষকেরা এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানটি হয়। মাসিক সাময়িকী বিজ্ঞানচিন্তা ও কৃষি প্রযুক্তি, পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দ্য মেটাল লিমিটেড এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

আলোচকেরা বলেন, ১৯৬৯ সালে চাঁদের বুকে প্রথম পা রেখেছিল নাসার অ্যাপোলো-১১ নভোযান। ওই মিশনে ছিলেন মাইকেল কলিন্স, নীল আর্মস্ট্রং এবং এডউইন অলড্রিন। চাঁদের বুকে প্রথম পা রেখে ইতিহাস গড়েন নীল আর্মস্ট্রং। তবে চন্দ্রজয়ের পর মানুষের চোখ আরও ওপরে উঠেছে। গত এক দশকে বেশ কিছু নভোযান মঙ্গল গ্রহের আবহাওয়া ও প্রতিবেশ পরীক্ষা করে দেখেছে। মানুষ এখন ভাবছে মঙ্গল গ্রহ জয়ের কথা।

চন্দ্রজয়ের ঐতিহাসিক দিনটি স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন বলেন, অনেকে ভাবত, চাঁদে গেলে হয়তো মানুষের মধ্যে নানা পরিবর্তন আসবে। কিন্তু, মানুষ প্রমাণ করল, চাঁদে গিয়ে মানুষের কোনো পরিব্যক্তি (মিউটেশন) হয় না। মানুষ শুধু চাঁদে পা-ই রাখেনি, সেখানে যাওয়াতে বিজ্ঞান গবেষণায় মানুষের অনেক জ্ঞান বেড়েছে।

চাঁদে গিয়ে মানুষের অনেক লাভ হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎকৌশল ও ইলেকট্রনিকস বিভাগের অধ্যাপক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী। তিনি বলেন, অ্যাপোলো-১১ মিশনের পর মানুষ ছয়বার চাঁদে গিয়েছে। সেখানকার মাটি, পাথর নিয়ে গবেষণা করেছে। তবে চাঁদে বসতি গড়া খুবই ব্যয়বহুল হবে বলে মানুষ এখন মঙ্গল গ্রহ জয়ের দিকে নজর দিয়েছে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খলিলুর রহমান বলেন, মানুষ মেধাবী ও শক্তিশালী এটা প্রমাণ করতেই চন্দ্র অভিযানে তাঁর অনেক আগ্রহ ছিল। চাঁদে গিয়ে মানুষের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। মানুষ প্রমাণ করেছে, তাঁর পক্ষে অসম্ভব কিছুই আর নেই। তিনি আরও বলেন, চাঁদে যাওয়ার ফলে এলইডি, সৌর-প্যানেল, পোর্টেবল কম্পিউটার, ডিজিটাল ক্যামেরা, জিপিএস-ম্যাপ, স্মোক ডিটেক্টরসহ অসংখ্য উদ্ভাবন গবেষণা মানুষ করেছে। কারণ, চাঁদে পাঠাতে হবে বলে তারা সবকিছু ছোট করে বানিয়েছে। এর সুফল মানুষ এখনো ভোগ করছে।

বিজ্ঞান চিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘বিজ্ঞানের যে অগ্রগতি হচ্ছে দিনকে দিন তাতে আগামী ৫০ বছরে আমরা কোথায় যাব তা ভাবার বিষয়।’

দ্য মেটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এম এম ফরহাদ বলেন, বিজ্ঞানকে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের আরও বিজ্ঞানমনস্ক করতে তাদের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ থাকবে।

অনুষ্ঠানে আলোচনা শেষে ছিল কুইজ প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ১২ শিক্ষার্থী পুরস্কার পেয়েছে। বই, বিজ্ঞানচিন্তা সাময়িকী ও ছয় মাসের বিনা মূল্যে বিজ্ঞানচিন্তা পাওয়া কুপন তাদের হাতে তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা।