ফেসবুকের মাথার ওপর বসছে 'মাতব্বর'

ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। ছবি: রয়টার্স।
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। ছবি: রয়টার্স।

ফেসবুক কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে তার দায়িত্ব বিশেষ একটি প্যানেলকে দিতে চাইছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ওই প্যানেলের হাতে ফেসবুকের পরিচালনা পর্ষদের ভুল সিদ্ধান্ত শোধরানোর ক্ষমতা থাকবে। এ প্যানেল স্বাধীনভাবে কাজ করবে। সম্প্রতি এমনই একটি প্যানেল তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। খবর বিবিসি অনলাইনের।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে ফেসবুকের বিশেষ এ প্যানেল প্রথম শুনানি করবে। বিতর্কিত উপাদান ও নতুন নীতিতে প্রভাব–সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে এ প্যানেলের কাছে। এ ধারণাটিকে ‘ফেসবুকের সুপ্রিম কোর্ট’ বা ফেসবুকে সর্বোচ্চ আদালত বলা হচ্ছে। বিশ্বের ৪০ জন সদস্যকে নিয়ে এ প্যানেল তৈরি হবে। তবে প্রাথমিকভাবে এর সদস্যসংখ্যা কম থাকবে।

ফেসবুকের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশেষজ্ঞরা অবশ্য ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষ করে ফেসবুকের উদ্দেশ্য ও প্যানেলের সদস্যদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো বার্নি হোগান বলেছেন, ফেসবুকের কোনো আদালত নেই। সেখানে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারহোল্ডার বা মার্ক জাকারবার্গের ভোট প্রাধান্য পায়। ফেসবুকের সর্বোচ্চ আদালত নাগরিকদের কোনো দায়িত্ব ছাড়াই প্রকৃত বিচারিক অনুশীলনের সব আড়ম্বরপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।

ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শুরুতে ১১ জনের মতো খণ্ডকালীন সদস্য নিয়ে প্যানেল তৈরি করা হবে। প্যানেলের সদস্যদের নাম ও তাঁদের সব বক্তব্য প্রকাশ্যে জানানো হবে। ওই প্যানেলের সদস্যরা ফেসবুকের তৈরি বিশেষ ট্রাস্টের মাধ্যমে বেতন পাবেন।

মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, ‘প্রতিদিন আমাদের নীতিমালা প্রয়োগ করার পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে লাখ লাখ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। তবে আমি মনে করি না, আমাদের মতো প্রাইভেট কোম্পানিগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে পারি।’

ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের তৈরি প্যানেলের মূল কাজ হবে ফেসবুকের কনটেন্ট সিদ্ধান্তের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা। প্রয়োজন পড়লে ফেসবুকের সিদ্ধান্ত বদলে দেওয়া। ফেসবুকের বাইরে স্বাধীন কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেসবুকের হাতে যে বিশাল ক্ষমতা এসে গেছে তার কিছুটা ভারসাম্য রক্ষা করতেই এ পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা। এ ছাড়া ক্ষমতার সঙ্গে ফেসবুকের ওপর বিভিন্ন দেশে নিয়ন্ত্রণের যে বিষয়গুলো উঠে আসছে তা থেকে মুক্তি পেতেও এ ধরনের পদক্ষেপের দিকে হাঁটতে পারে তারা।

হোগান বলেন, কোনো কিছু করার উদ্যোগ থেকেই ফেসবুকের প্যানেল সৃষ্টি, তবে তা কতটুকু পার্থক্য গড়বে সেটাই দেখার বিষয়।