লিবরা আসবেই

ফেসবুকের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা। ছবি: এএফপি
ফেসবুকের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা। ছবি: এএফপি

ক্রিপটোকারেন্সি বা ভার্চুয়্যাল মুদ্রা লিবরা আনার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল ফেসবুক। নানা ত্রুটিবিচ্যুতি ও রাজনৈতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও গত সোমবার ফেসবুক আনুষ্ঠানিকভাবে লিবরাকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে। ফেসবুকের এ ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতা, নিয়ন্ত্রক ও রাজনৈতিক নেতারা গভীর সমালোচনা করছেন।

লিবরা মুদ্রা পরিচালনায় কাজ করবে অলাভজনক সংস্থা লিবরা অ্যাসোসিয়েশন। গত সোমবার এ সংস্থার ২৭ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিতে সই করেছেন। ১৪ অক্টোবর জেনেভায় লিবরা অ্যাসোসিয়েশন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম বৈঠক করে। শুরুতে লিবরা অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ছিল ২৭টি প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক সমালোচনার কারণে ৬টি প্রতিষ্ঠান লিবরা থেকে সরে দাঁড়ায়। সোমবারের ওই বৈঠকের আগে তাই লিবরার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। তবে ফেসবুক ওই বৈঠকে লিবরা নিয়ে তাদের জোরালো প্রচেষ্টার কথা বলেছে।

সম্প্রতি ভিসা, মাস্টারকার্ড, ও পেপ্যাল ফেসবুকের লিবরা উদ্যোগ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়।

ক্রস বর্ডার পেমেন্ট সিস্টেমের সুবিধাযুক্ত প্রাইভেট কারেন্সি তৈরিতে ফেসবুকের উদ্যোগ বিভিন্ন দেশে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হচ্ছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক লিবরা অ্যাসোসিয়েশন অবশ্য বলছে, ফেসবুকের কাছ থেকে এ উদ্যোগ তারা দূরে রাখবে। লিবরা ফেসবুকের মালিকানাধীন থাকবে না।

আইনপ্রণেতারা বলছেন, ফেসবুক যেখানে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত গোপনীয় বিষয়গুলো রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে লিবরার মতো মুদ্রা চালু হলে তা বিপদ ডেকে আনবে।

ইতিমধ্যে ইউরোপে লিবরার ব্যবহার বন্ধ করতে ফ্রান্স ও জার্মানি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। লিবরা প্রকল্প নিয়ে ২৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের হাউস ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কমিটির সামনে এক শুনানিতে অংশ নিতে হবে জাকারবার্গকে।

লিবরা কী?
ফেসবুকের লিবরা সবাইকে একটি ইলেকট্রনিক ওয়ালেটের সুবিধা দেবে। ফেসবুক বলছে, আন্তর্জাতিক সব মুদ্রার মূল্যমানের সঙ্গে সংগতি রেখে এই মুদ্রার মূল্যমান ধরা হবে। প্রচলিত মুদ্রা দিয়ে লিবরা কেনা যাবে। ফেসবুকের এক শ্বেতপত্রে বলা হয়, লিবরার সঙ্গে ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্যের যোগসূত্র থাকবে না বলে তাদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হবে না। তবে ফেসবুকের পক্ষ থেকে লিবরা পেমেন্টের সঙ্গে ফেসবুকের বিভিন্ন পণ্য যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে ফেসবুকের। ফেসবুকের এসব পণ্য কয়েক শ কোটি ব্যবহারকারী নিয়মিত ব্যবহার করছেন। বিটকয়েনের মতো ক্রিপটোকারেন্সির সঙ্গে এর পার্থক্য হবে সহজলভ্য ও সহজে ব্যবহার করার সুবিধা।

ফেসবুক বলছে, ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় ব্যাংক ডিপোজিট, স্বল্পমেয়াদি সরকারি নিরাপত্তার মতো বিষয় যুক্ত থাকবে। এতে অন্যান্য ক্রিপটোকারেন্সির মতো মুদ্রাস্ফীতি হবে না।

লিবরার উন্নয়নকারী ফেসবুকের ক্যালিব্রা বিভাগের প্রধান ডেভিড মার্কাস বলেন, ভবিষ্যতে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় তাঁরা নানা আর্থিক সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এর মধ্যে ঋণদানের মতো বিষয়ও রয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তাঁর অ্যাকাউন্টে যে লিবরা জমা রাখবেন, তার বিপরীতে ফেসবুক তাঁকে কোনো সুদ দেবে না।