ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্কস্টেশন: কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ডিজিটাল বিপ্লব

ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্কস্টেশন কাজের সুবিধা বাড়িয়েছে
ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্কস্টেশন কাজের সুবিধা বাড়িয়েছে

জরুরি অবস্থায় প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মচারীদের সুরক্ষা কীভাবে নিশ্চিত করবে—কোভিড-১৯ সৃষ্ট এই অনাকাঙ্ক্ষিত সময়ে এই সরল প্রশ্নটি ঘুরেফিরে সবার মনেই ঘুরছে। তবে দুঃখজনকভাবে এর কোনো সদুত্তর নেই। এর সমাধান হিসেবে বড় প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিগুলো বেছে নিয়েছে ঘর থেকে কাজ সম্পন্ন করার সুপরিসর ব্যবস্থাপনা।কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, আদৌ কি এই ব্যবস্থাপনায় ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে পারবে? ভাইরাসসৃষ্ট প্রভাব সারা বিশ্বের চাকাকে থমকে দিয়েছে। বর্তমান সময়ে ছোট-বড় সব কোম্পানিকে যেকোনো সময়ের থেকে ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্কস্টেশনের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছে।

আপাতদৃষ্টিতে ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্কস্টেশনের ধারণা বর্তমান সমস্যার সমাধান হিসেবে মনে হতে পারে। কিন্তু সঠিক অ‌্যাপ্লিকেশনের অভাবে ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্কস্টেশনের ধারণা বাস্তবে বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসতে পারে। যেখানে সবাই বাড়ি থেকে কাজ সম্পাদন করা সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে, সেখানে সংস্কৃতিটি সঠিক অ‌্যাপের অভাবে ব্যর্থ হতে পারে কি না, সে প্রশ্নও উঠছে।
ইচ্ছাশক্তি বা সদিচ্ছা, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সমস্যা, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হওয়া, তদারকির অভাব, যোগাযোগে ফাঁক থাকা বা ব্যাহত হওয়া, লক্ষ্য বিচ্যুত হওয়া—এ সবকিছুই সমষ্টিগতভাবে ঘর থেকে কাজ করার সংস্কৃতিকে নষ্ট করে দিতে পারে।
ঘর থেকে কাজ করার পেছনে দুই ধরনের ধারণা কাজ করে। এক পক্ষ মনে করে, ঘরে বসে কাজ করতে গেলে কোনো কিছুই অর্জিত হবে না। বিপরীত ধারণা পোষণকারী গ্রুপ মনে করে, এর মাধ্যমে কর্মীরা থাকবেন উৎফুল্ল, হবেন অধিক উৎপাদনক্ষম। বাস্তবতা হচ্ছে, সবকিছুই নির্ভর করে কী ধরনের মানসিকতা নিয়ে একজন ব্যক্তি তাঁর ওপর অর্পিত কাজ সম্পন্ন করে। আসলে এখন মতবাদ তৈরি হচ্ছে, ঘর থেকে কাজ সম্পন্ন করার পক্ষে, যেখানে ফলাফলভিত্তিক বাস্তবতার নিরিখে উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত হয়। সাম্প্রতিক বেশ কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ঘরে থেকে কাজ সম্পাদনায় কর্মীরা হন অধিক উৎপাদনক্ষম এবং থাকেন ধকলবিহীন। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যেসব কোম্পানি বাড়ি থেকেই কাজ করায় উৎসাহিত করছে এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমর্থন দিচ্ছে, সেসব কোম্পানি আর্থিকভাবে পরিশেষে লাভবান হচ্ছে।
কীভাবে তা সম্ভব? এর উত্তর হয়েছে ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্কস্টেশনকে সঠিক অ‌্যাপ দিয়ে পরিচালনার মাধ্যমে তা সম্ভব। বহু প্রতিষ্ঠান তাদের ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্কস্টেশন সিস্টেমকে সুরক্ষিত ডিজিটাল পরিবেশের সঙ্গে সমন্বিত করেছে । এর মুখ্য ভূমিকায় রয়েছে উন্নত প্রযুক্তির অ‌্যাপ্লিকেশন, যা সফলভাবে ব্যবস্থাপনা সিস্টেমকে পরিচালিত করে। এতে কর্মীরা যেকোনো স্থান থেকে তাঁদের কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পারবেন। কর্মীরা এখন যোগাযোগ রাখতে পারবেন, কোনো ধরনের ডিজিটাল নিরাপত্তার ঝুঁকি ছাড়াই সংবেদনশীল তথ্যে প্রবেশ করতে পারবেন। তাই আমাদের সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার । ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্কস্টেশনের এক সুরক্ষিত ডিজিটাল পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে ব্যবসায়িক সাফল্য।
ওয়ার্কোপোলো অ‌্যাপ্লিকেশন
ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্কস্টেশন দ্বারা ব্যবহারকারীর কাজ সম্পন্ন করা এক জিনিস; কিন্তু যাঁদের সেই প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার ডিভাইসটি নেই, যা দিয়ে হাজারো কর্মী তাঁদের কাজ বাড়ি থেকে সম্পন্ন করবেন, তাঁরা কী করবেন? উদাহরণ হিসেবে আমরা বর্তমান পরিস্থিতিকেই ধরতে পারি যখন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাইরাস দ্বারা আমরা গৃহবন্দী হয়ে রয়েছি এবং প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ কর্মীকে ঘর থেকে কাজ করতে হচ্ছে। ওয়ার্কোপোলো এখানে হতে পারে একটি উৎকৃষ্ট সমাধানের উদাহরণ। বর্তমানে বেশ কিছু কোম্পানি ওয়ার্কোপোলো ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্কস্টেশন সিস্টেমকে পরিচালিত করছে। এই অ‌্যাপ্লিকেশনের একটি বড় সুবিধা হলো এর দাম, যা যেকোনো ধরনের ব্যবসার আর্থিক সামর্থ্যের মধ্যে পড়ে। এটি সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়নযোগ্য।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বি-ট্র্যাক সল্যুশনের একটি সফল প্রোডাক্ট হলো ওয়ার্কোপোলো। ওয়ার্কোপোলো একটি মোবাইল ও ওয়েবভিত্তিক অ‌্যাপ্লিকেশন, যা ম্যানেজার ও তাঁর অধীন টিম মেম্বারদের মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থাকে সহজ ও মসৃণ করেছে। এই অ‌্যাপ্লিকেশন সুপারভাইজারদের তাঁদের দলের কর্মলক্ষ্য নজরদারির মধ্যে রাখতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাঁর কর্মদিবসের যাবতীয় কর্মদায়িত্বকে নির্দিষ্ট সময় দ্বারা নির্ধারিত করতে পারবেন, যা একজন কর্মীকে করে উৎপাদনক্ষম এবং রাখে লক্ষ্যের প্রতি অবিচল। বর্তমানে প্লে স্টোর ও অ‌্যাপ স্টোর—উভয় প্ল্যাটফর্মেই পাওয়া যাচ্ছে।

ওয়ার্কোপোলো অ্যাপ
ওয়ার্কোপোলো অ্যাপ

ওয়ার্কোপোলোর বিশেষ বৈশিষ্ট‌্যের মধ‌্যে রয়েছে সময় ব্যবস্থাপনা ও সব কার্যপ্রণালি নথিভুক্ত রাখা। প্রতিটি কার্যপ্রণালিকে চেক-ইন/চেক-আউট দ্বারা নথিভুক্ত রাখা। নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ও সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রিয়েল টাইম মনিটরিং পদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কর্মচারীর সঠিক অবস্থানকে চিহ্নিত করা। অফিস স্টেশনের বাইরে থাকা কর্মচারীরা দূরবর্তী অবস্থান থেকে তাঁর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারবে। ঠিকানাসহ কাস্টমারের তালিকা নথিভুক্তের সুবিধা। সাপ্তাহিক রেটিং দ্বারা একজন ম্যানেজার/সুপারভাইজার তাঁর দলের প্রতিটি সদস্যের পারফরম্যান্সকে মূল্যায়িত করতে পারে, যা দীর্ঘ মেয়াদে পারফরম্যান্স মূল্যায়নে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। কোম্পানির সব হালনাগাদ কর্মীকে অবহিত করা হয় অ‌্যাপ্লিকেশনের নোটিশ বোর্ডের সাহায্যে। প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসের সব ধরনের স্টক পরিচালনা। ড্যাশবোর্ড কোম্পানির সব কর্মচারীর গড় পারফরম্যান্স ও বাস্তবিক অবদানকে সুচারুরূপে তুলে ধরে। মানবসম্পদ বিভাগ ফর্ম ও পলিসি শেয়ার করার মাধ্যমে সব কর্মচারীর সব ধরনের নির্দেশনা ও নীতিমালার ব্যাপারে অবহিত করতে পারে । যেকোনো প্রসঙ্গের ও বিষয়ের অথবা মিটিংয়ের যেকোনো ফাইল সংরক্ষণ করতে পারবে।
একটি সঠিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্কস্টেশন উৎপাদনশীলতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। জরুরি অবস্থার মধ্যেও কোম্পানির আর্থিক অবস্থানে অবদান রাখতে পারে। সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত করে। তাই এই ডিজিটাল বিপ্লবকে উপেক্ষা করার মতো অবকাশ আর একদমই নেই।