ওয়েব উন্মুক্ত হোক সবার জন্য

মার্ক সারমেন। ছবি: খালেদ সরকার
মার্ক সারমেন। ছবি: খালেদ সরকার

মুক্ত সফটওয়্যার আর উন্মুক্ত ওয়েব নিয়ে প্রায় দুই দশক ধরে কাজ করছেন মার্ক সারমেন। এখন তিনি ওয়েবসাইট দেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার ফায়ারফক্সের নির্মাতা মজিলা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক। সম্প্রতি তিনি ঢাকা ঘুরে গেলেন। ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় তিনি প্রজন্ম ডট কমকে সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নুরুন্নবী চৌধুরী
বাংলাদেশে স্বাগত। কেমন লাগছে?
মার্ক সারমেন: এটা আমার দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ সফর। আট-নয় বছর আগে আমি ঢাকায় এসেছিলাম। এবার দেখলাম, এর মধ্যে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও উন্নত প্রযুক্তির স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়েছে, ইন্টারনেটের ব্যবহারও বেড়েছে। এ ছাড়া আমাদের মজিলা কমিউনিটির স্থানীয় সদস্যরা ভালো ভালো কাজ করছেন।
বাংলাদেশের তরুণদের সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
মার্ক সারমেন: এক কথায় দারুণ। মজিলা বাংলাদেশের তরুণ সদস্যরা অসাধারণ সব কাজ করছেন। লোকালাইজেশন-সংক্রান্ত কাজে অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলা ভাষায় তাই ফায়ারফক্স কিংবা ফায়ারফক্স অপারেটিং সিস্টেমের (ওএস) স্মার্টফোন পাওয়া যাবে। আরেকটি বিষয়, বাংলাদেশের তরুণেরা অনেক মেধাবী ও পরিশ্রমী। এটা খুব জরুরি।
ফায়ারফক্স ওএস-চালিত স্মার্টফোন বাজারে আনার উদ্দেশ্য কী? কারা মূলত এর ব্যবহারকারী?
মার্ক সারমেন: একসময় একটি ওয়েব ব্রাউজারের ওপর সবার নির্ভর করতে হতো। সেটি পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে একাধিক ব্রাউজার রয়েছে। মুক্ত সোর্স আর উন্মুক্ত ওয়েব-সুবিধা আরও বাড়াতে এবং বাজারে একাধিক ওএসে স্মার্টফোনের সুযোগ তৈরি করে দিতেই ফায়ারফক্স ওএসের স্মার্টফোন বাজারে আনা হয়েছে। এ ফোনের ব্যবহারকারী যে কেউ হতে পারে। কারণ মুক্ত ওয়েবের দারুণ এক সেবা পাওয়া যাবে এই স্মার্টফোনে।
কয়েকটি দেশে ফায়ারফক্স স্মার্টফোন ছেড়েছেন আপনারা। সাড়া কেমন?
মার্ক সারমেন: কিছুদিন আগে ভারতে এ স্মার্টফোন ছাড়া হয়েছে। আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছি। অন্যান্য দেশেও এ ফোনের চাহিদা রয়েছে।
বাংলাদেশের বাজারে এ স্মার্টফোন কবে আসবে?
মার্ক সারমেন: বাংলাদেশের বাজারে এ স্মার্টফোন খুব শিগগিরই পাওয়া যাবে। আমরা এ ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশের বাজারে মোবাইল ফোনের চাহিদা বেশ ভালো। কিন্তু দাম তুলনামূলক বেশি। ফায়ারফক্স অনেক কম দামে স্মার্টফোন আনার ঘোষণা দিয়েছে। এ দেশের বাজারে কেমন সাড়া পড়বে বলে মনে করছেন?
মার্ক সারমেন: বাংলাদেশে এখন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ইন্টারনেট-সুবিধা বাড়ার ফলে অনেকেই উন্নত স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন। তবে আরও সুবিধাসহ মুক্ত মাধ্যমের সুবিধাযুক্ত কম দামি ফোন মানুষকে টানতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
প্রযুক্তি ও ব্যবহারকারীদের দিক বিবেচনায় এ স্মার্টফোনের বিশেষত্ব কী? সাধারণ ব্যবহারকারীরা কেন কিনবে এই ফোন?
মার্ক সারমেন: একটা বিষয় কিন্তু জরুরি। আমরা যে মুক্ত সোর্স বলি, সেটি কিন্তু শুধু মুক্ত সোর্সই নয়, বরং মুক্ত ইন্টারনেট। এ ছাড়া মুক্ত সোর্স সফটওয়্যার দিয়ে সাধারণ মানুষ নানাভাবে উপকৃতও হয়। দ্রুত, নিরাপদ, ডেভেলপারদের পছন্দ ইত্যাদি ফায়ারফক্সে ইতিমধ্যে আছে। সে বিষয়গুলো যুক্ত হয়েছে ফায়ারফক্স ওএসেও। মুক্ত ওয়েবের ধারণার সঙ্গে স্থানীয় বিষয়বস্তু তৈরি, সব মিলিয়ে এ স্মার্টফোনটি ব্যবহারকারীদের নানা কিছুর সমন্বয় দেবে একটি ফোনেই। কম দাম আরেকটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা।

.
.

ফায়ারফক্স এবং ফায়ারফক্স ওএস সম্পূর্ণ বাংলায় রয়েছে। ফায়ারফক্স ফোনেও বাংলা কি-বোর্ড যুক্ত হয়েছে। এ বিষয়ে কিছু বলুন।
মার্ক সারমেন: আগেই বলেছি, আমাদের স্থানীয় কমিউনিটি সদস্যরা অসাধারণ সব কাজ করছেন, যার মধ্যে লোকালাইজেশন অন্যতম। এর ফলে ফায়ারফক্স ব্রাউজার যেমন সম্পূর্ণ বাংলায় পাওয়া যায়, তেমনি ফায়ারফক্স ফোনও বাংলায় পাওয়া যাবে। আর বাংলাদেশি এক তরুণের সহায়তায় বাংলা কি-বোর্ড যুক্ত হয়েছে। এটাও ব্যবহারকারীদের জন্য দারুণ এক পাওয়া হবে। মজিলা যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়, তার মধ্যে একটি হচ্ছে স্থানীয় ভাষায় মজিলার সেবাগুলো পাওয়া।
মজিলা বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যরা কী কী কাজ করছেন?
মার্ক সারমেন: লোকালাইজেশন, উন্মুক্ত ওয়েব নিয়ে সচেতনতা, ফায়ারফক্স ওএসের মার্কেটপ্লেসে অ্যাপস তৈরি, তৈরির প্রক্রিয়া ইত্যাদি কাজ দারুণভাবে করছেন এ কমিউনিটির সদস্যরা।
বাংলাদেশের তরুণেরা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে বেশ আগ্রহী। তাদের উদ্দেশে কিছু বলুন।
মার্ক সারমেন: মুক্ত সোর্সের দুনিয়ায় নানা ধরনের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সাধারণ কাজ (যেমন লোকালাইজেশন) থেকে শুরু করে ডেভেলপারদের (যেমন অ্যাপ নির্মাণ) নানা ধরনের কাজ করার উন্মুক্ত এবং বড় সুযোগ রয়েছে। স্থানীয় ভাষায় অনেকেই সেবা পেতে চায়। তাই চাইলে স্থানীয় ভাষায় কন্টেন্ট তৈরি, অ্যাপ তৈরি—এসব কাজেও দারুণ সুযোগ রয়েছে। আমি তরুণদের বলব এসব উন্মুক্ত সোর্সভিত্তিক কার্যক্রমে যুক্ত হতে।
আপনার শিক্ষা, পরিবার সম্পর্কে কিছু বলুন। আপনার আগ্রহ কোন বিষয়ে?
মার্ক সারমেন: আমি কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরোন্টো থেকে হিস্ট্রি অব কমিউনিটি মিডিয়া বিষয়ে স্নাতক করেছি। বর্তমানে টরোন্টোতে আমার স্ত্রী টনিয়া সারমেন, ছেলে থ্রিস্টান ও ইথানকে নিয়ে আছি।
মজিলার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কিছু বলুন।
মার্ক সারমেন: মজিলার যাত্রা যখন শুরু হয়, তখন আমেদের কর্মীসংখ্যা ছিল খুবই কম। আজ সারা বিশ্বে আমাদের বিশাল কমিউনিটি রয়েছে, যাঁরা মজিলার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। উন্মুক্ত ওয়েবের শক্তি কেমন, সেটি আমরা দেখাতে চাই। ডিজিটাল এই জীবনধারায় কীভাবে সব মুক্ত সোর্সে আরও উন্মুক্ত রাখা যায়, সেটি নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মজিলা সব সময়ই স্বাধীনতার বিষয়টিকে বড় করে দেখে। তাই আমরা বলি, ওয়েব হোক উন্মুক্ত, সবার জন্য।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মার্ক সারমেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।