লালবাগে 'মানবতার দেয়াল'

পুরান ঢাকার লালবাগ স্পোর্টিং ক্লাব। খেলার পাশাপাশি সামাজিক কাজেও মন ক্লাব কর্মকর্তাদের। আর তাই ভবনের বাইরের দেয়ালে সাজিয়ে রাখা হয়েছে শীতের কাপড়। নিজের প্রয়োজনমতো যে কেউ সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কাপড় নিতে পারবেন। অনন্য এই উদ্যোগের নাম ‘মানবতার দেয়াল’। এখানে যে কেউ নতুন বা পুরোনো কাপড় অন্যের জন্য রেখে যেতে পারেন। আর প্রয়োজন হলে তিনি অপর একটি কাপড় সেখান থেকে নিয়েও যেতে পারবেন।

ঢাকেশ্বরী রোডের লালবাগ স্পোর্টিং ক্লাব। খেলার পাশাপাশি সামাজিক কাজেও জড়িত ক্লাবটি। লালবাগ, ঢাকা, ১৯ নভেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম
ঢাকেশ্বরী রোডের লালবাগ স্পোর্টিং ক্লাব। খেলার পাশাপাশি সামাজিক কাজেও জড়িত ক্লাবটি। লালবাগ, ঢাকা, ১৯ নভেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম

লালবাগের ঢাকেশ্বরী রোড দিয়ে লালবাগ কেল্লার দিকে যেতেই বাঁ পাশে পড়বে একতলার পুরোনো একটি বাড়ি। গোলাপি রঙের বাড়িতেই লালবাগ স্পোর্টিং ক্লাবের কার্যালয়। ১৯৬২ সালে যাত্রা শুরু হয় ক্লাবটির। সোমবার বিশেষ কারণে ক্লাবটি দৃষ্টি আকর্ষণ করল। ভবনের বাইরের দিকে ডান পাশের দেয়ালে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কিছু পুরোনো শীতের কাপড়। সেখান থেকে নিজের প্রয়োজনমতো একজন কাপড় নিয়ে গেলেন।
দেয়ালের নাম রাখা হয়েছে ‘মানবতার দেয়াল’। ব্যানারের এক পাশে লেখা, ‘আপনার অপ্রয়োজনীয় জিনিস এখানে রেখে যান’ এবং অন্য পাশে, ‘আপনার প্রয়োজনীয় একটি জিনিস এখান থেকে নিয়ে যান’।

বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লাবের কার্যকরী সদস্য মিজানুর রহমান সরদারের সঙ্গে কথা হলো। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমরা খেলাধুলার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। এরই ধারাবাহিকতায় এই উদ্যোগ। দুস্থ শীতার্ত মানুষের জন্য আমরা “মানবতার দেয়াল” নামের কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।’

ভবনের বাইরের দেয়ালে সাজিয়ে রাখা হয়েছে শীতের কাপড়। নিজের প্রয়োজন মতো যে কেউ সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কাপড় নিতে পারবেন। লালবাগ, ঢাকা, ১৯ নভেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম
ভবনের বাইরের দেয়ালে সাজিয়ে রাখা হয়েছে শীতের কাপড়। নিজের প্রয়োজন মতো যে কেউ সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কাপড় নিতে পারবেন। লালবাগ, ঢাকা, ১৯ নভেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম

শীতার্তদের মাঝে সরাসরি বিতরণ না করে এভাবে কেন কাপড় সাজিয়ে রাখা হয়েছে—মিজানুর রহমান সরদার বলেন, ‘অনেকে আছেন হাতে হাতে নিতে লজ্জা পান, তাঁরা যাতে যেকোনো সময়—বিশেষ করে রাতে এসে শীতের পোশাক সংগ্রহ করতে পারেন, সে জন্যই এ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’

ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক আসাদুর রহমান বলেছেন, ‘আমাদের এক ছোট ভাই আসাদ আশরাফ ফেসবুক থেকে এই আইডিয়া পায় এবং সে–ই প্রথম উদ্যোগ নেয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আরেক সংগঠন ঢাকাইয়া ঐক্যের মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এই কার্যক্রম আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই।’

ক্লাবের আরেক কার্যকরী সদস্য সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এই উদ্যোগে তরুণদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। আমাদের আগের বড় ভাইয়েরা এসব সামাজিক কাজ করছেন, এখন আমরা করছি এবং ভবিষ্যতে আমাদের ছোটরা করবে।’ ক্লাব সদস্যরা জানান, প্রতিদিন লোকজন আসছেন এবং তাঁদের পছন্দের শীতের কাপড় নিয়ে যাচ্ছেন, আবার অনেকে তাঁদের পুরোনো কাপড় দান করছেন আমাদের মানবতার দেয়ালে।

এখানে কেউ নতুন বা পুরোনো কাপড় অন্যের জন্য রেখে যেতে পারেন। প্রয়োজন হলে তিনি অপর একটি কাপড় সেখান থেকে নিয়েও যেতে পারবেন। লালবাগ, ঢাকা, ১৯ নভেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম
এখানে কেউ নতুন বা পুরোনো কাপড় অন্যের জন্য রেখে যেতে পারেন। প্রয়োজন হলে তিনি অপর একটি কাপড় সেখান থেকে নিয়েও যেতে পারবেন। লালবাগ, ঢাকা, ১৯ নভেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম

এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মো. হুমায়ুন বলেন, ‘পঞ্চায়েত কমিটির এই ক্লাব গরিব–দুঃখীদের জন্য সব সময় বিভিন্ন কাজ করে থাকে। এবারের উদ্যোগ দেখে আমার খুব ফুর্তি লাগছে।’

৫৬ বছরের বেশি সময় ধরে খেলাধুলা আর সামাজিক কাজে অবদান রাখছে প্রতিষ্ঠানটি। আইনজীবী আবুল হাশেম ও আবুল খায়ের ছিলেন ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা। ক্লাবের মূল কার্যক্রম ছিল ফুটবল ঘিরে। ক্লাবের ফুটবল টিমের প্রথম কোচ ছিলেন পাকিস্তান জাতীয় দলের ফুটবলার মালা। ষাটের দশকের জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট, শায়েস্তা খান কাপের আয়োজক ছিল লালবাগ স্পোর্টিং ক্লাব। স্বাধীনতার পর এই টুর্নামেন্ট বন্ধ হয়ে যায়।