নির্বাচনে সেনা মোতায়েন

‘নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা’ রক্ষায় ২৬ ডিসেম্বর থেকে সারা দেশে সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। নির্বাচনের সময় বাংলাদেশে সেনা মোতায়েনের রেওয়াজ রয়েছে এবং এতে সুফলও পাওয়া গেছে অতীতে। তবে এবারের নির্বাচন শুরু থেকেই এত প্রশ্নের মুখে পড়েছে যে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতাটিই এখন মূল ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি যে গুরুত্ব বহন করে, বর্তমান ক্ষেত্রে বিষয়টি তা নয়।
তবে ‘নির্বাচনকালীন’ বর্তমান সময়ে দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। প্রধান বিরোধী দল শুধু নির্বাচন বর্জনই করেনি, তারা এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। দিনের পর দিন টানা অবরোধ কর্মসূচিতে দেশ যেমন বিপর্যস্ত, তেমনি বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের নাশকতা চলছে। অব্যাহত সন্ত্রাস ও সহিংসতায় দেশের কয়েকটি জেলার অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব সন্ত্রাস ও সহিংসতা দমনে কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি।
দেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে সেনা মোতায়েন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬ ডিসেম্বর থেকে মোতায়েন হওয়া সেনারা ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। যদিও সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে ‘নির্বাচনকালীন পরিস্থিতিতে’ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, কিন্তু তা সামগ্রিকভাবে জনমনেও একধরনের স্বস্তির পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। আমরা দেখছি নির্বাচনী দায়িত্ব শুরুর আগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সেনাসদস্যরা মহাসড়কের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ শুরু করেছেন।
নির্বাচনের নানা আনুষ্ঠানিকতা এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ১৫৪টি আসনে নির্বাচনও করতে হবে না। এখন সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তও হয়েছে এবং ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিনটিও নিশ্চয়ই পার হয়ে যাবে এবং আনুষ্ঠানিক নির্বাচনও হবে। কিন্তু নির্বাচনে সব নিয়মকানুন বা আনুষ্ঠানিকতা পালন করলে বা মেনে চললেই কি তা নির্বাচন হয়ে যায়? কিন্তু এ ধরনের একটি নির্বাচন ও নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নির্বাচন মানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রধান প্রধান দলের অংশগ্রহণ, জনগণের প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সে রকম কিছু হচ্ছে না। দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে ভোট দিতেই হচ্ছে না। এ ধরনের নির্বাচনের প্রতি কোনো মহলেই আগ্রহ থাকার কথা নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, এই নির্বাচনে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে না। ফলে এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে এ ধরনের একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক।
আমরা আবারও বলি, দেশের ও জনগণের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। সংবিধান মেনে নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করে প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া হয়তো একটি নির্বাচন করা যাবে, কিন্তু গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নটি থেকেই যাবে, যা সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পরিস্থিতিই সৃষ্টি করবে।