আয়েবালীর ভালোবাসা

রাজধানীতে জাতীয় সংসদ ভবনের কাছে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে রিকশা, গাড়ি ছুটছে। হঠাৎই চোখে পড়ে চার চাকায় ভর করে খুট খুট করে একটি নৌকা চলছে। পথচারীরা খানিকটা উৎসুক হয়ে ওঠেন। দু-একজন কাছে এসে নৌকায় চড়ে বসেন। বাঁশের বইঠা দিয়ে নৌকা চালানোরও চেষ্টা করেন। নৌকার মাঝি ও মালিক আয়েবালী সিকদার চা, বিড়ি খাওয়ার ফাঁকে খানিক গল্পও করেন। তবে একটু পরেই নৌকা নিয়ে রওনা দেন।

জাতীয় নির্বাচন এলেই নৌকা নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন পথ ও অলিগলি ঘুরে বেড়ান আয়েবালী।
জাতীয় নির্বাচন এলেই নৌকা নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন পথ ও অলিগলি ঘুরে বেড়ান আয়েবালী।

আজ সোমবার বিকেলে আয়েবালী প্রথম আলোকে জানালেন, নৌকার কোনো গন্তব্য নেই। নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ান রাজধানীর বিভিন্ন পথ ও অলিগলি। নির্বাচনের পর্যন্ত চলবে এটা।

বাগেরহাটের আয়েবালী রাজধানীতে রিকশা চালান। নৌকা নিয়ে ঘোরার কারণে রিকশা চালাচ্ছেন মাত্র তিন ঘণ্টা। বাকি সময় কেটে যায় নৌকা নিয়ে। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন। সবাই যাতে নৌকা প্রতীকে ভোট দেন, এটাই তাঁর চাওয়া। এর বাইরে আর কিছু চাওয়া-পাওয়া নেই।

বাঁশের বইঠা নিয়ে চারচাকায় ভর করে রাজপথে চলছে নৌকা।
বাঁশের বইঠা নিয়ে চারচাকায় ভর করে রাজপথে চলছে নৌকা।

আয়েবালী নিজ খরচে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা খরচ করে এ নৌকা বানিয়েছেন বলে জানালেন। নৌকার ছাউনি বানানো হয়েছে লাল-সবুজ কাপড় দিয়ে। নৌকায় বাঁশের খুঁটি বানিয়ে তাতে টানানো হয়েছে বড় একটি পতাকা। নৌকার সামনে রাখা হয়েছে ফুল দিয়ে সাজানো ছোট্ট আরেকটি নৌকা। এ ছাড়া ছোট ছোট পতাকা ও প্লাস্টিকের কিছু নৌকাও সাজিয়ে রাখা। নৌকায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার একটি পোস্টারের পাশাপাশি এবার নির্বাচনে অংশ নেওয়া কোনো কোনো প্রার্থীরও পোস্টার রাখা।

যে প্রার্থীদের পোস্টার নৌকায় রাখা সেই প্রার্থীরা নৌকা নিয়ে ঘোরার জন্য কোনো টাকা দিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে আয়েবালী জানালেন, তিনি কারও কাছে এ কাজের জন্য কোনো সহায়তা চান না বা নেন না। অনেকই নৌকা প্রার্থীর পোস্টার তাঁর নৌকায় রেখে গেলে আয়েবালী তা নিয়ে আপত্তি করেন না। কেননা, তাঁর মূল আহ্বান তো নৌকায় ভোট চাওয়া।

একজন উৎসুক পথচারী নৌকা চালাতে বসে যান
একজন উৎসুক পথচারী নৌকা চালাতে বসে যান

আয়েবালীর নৌকায় (কিছু কিছু ভুল বানান) লেখা-জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু। আমি দলকে ভালোবাসি। আমার বাপ-দাদা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে গেছে। আমিও বুঝমান থেকে বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি।

আয়েবালী জানালেন, শুধু এবারই না, প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীককে জেতানোর জন্য তিনি তাঁর সাধ্যমতো কিছু না কিছু করার চেষ্টা করেন। বিএনপি দলটির প্রতি তাঁর ক্ষোভ আছে। আয়েবালীর অভিযোগ, বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির কর্মীরা তাঁর নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছিলেন।

নৌকার গায়ে কাগজে সাটা বঙ্গবন্ধুর প্রতি আয়েবালী ভালোবাসা ও নিজের কথা।
নৌকার গায়ে কাগজে সাটা বঙ্গবন্ধুর প্রতি আয়েবালী ভালোবাসা ও নিজের কথা।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি কী পেয়েছেন এ প্রশ্নের উত্তরে আয়েবালী দৃঢ়ভাবেই জানালেন, তিনি সেভাবে কিছু চান না। তবে শুধু রিকশা চালিয়ে সংসারে সাতজন মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া, ছেলে মেয়েদের পড়ানো একটু কষ্ট হয়ে যায়। তাই বর্তমান সরকারের এক মন্ত্রীর কাছে মেয়ের জন্য একটি চাকরির জন্য গিয়েছিলেন। ওই মন্ত্রী মেয়ের চাকরির জন্য সুপারিশও করেছিলেন। কিন্তু তারপরও মেয়ের চাকরি হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ নেই। স্পষ্টভাবে আয়েবালী জানিয়ে দিলেন-‘আমি বঙ্গবন্ধুর জন্য মরতে হলে মরতেও রাজি আছি।’

আয়েবালী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সদস্য-এমন একটি কার্ড লেমিনেটিং করে যত্ন করে রেখে দিয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস-সোনার নৌকা দেশবাসীর কাছে নিয়ে গেলে খালি হাতে ফেরত আসতে হবে না। আয়েবালীর গল্প করার মতো ফুসরত নেই, তাই আদা দিয়ে লাল চা খাওয়া শেষ করেই বইঠা বাইতে শুরু করলেন।