কারাগারের সামনে জাহালমের ভাই, আদালতের আদেশ এলেই মুক্তি

কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে জাহালমের ভাই শাহনুর। ছবি: দীপু মালাকার
কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে জাহালমের ভাই শাহনুর। ছবি: দীপু মালাকার

হাইকোর্টের আদেশ আজ রোববারের মধ্যেই জাহালমকে মুক্তি দিতে হবে। প্রায় তিন বছর পর কারাগার থেকে বের হবেন নির্দোষ জাহালম। মুক্ত ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরবেন এমন আশায় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে এসেছেন জাহালমের ভাই শাহনুর।

আজ দুপুরে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশ এখনো কারাগারে এসে পৌঁছায়নি। কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আদেশ এসে পৌঁছালেই মুক্তি পাবেন জাহালম।

সোনালী ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের করা সব মামলা থেকে নিরীহ জাহালমকে অব্যাহতি দিয়ে আজই মুক্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, ‘এক নির্দোষ লোককে এক মিনিটও কারাগারে রাখার পক্ষে আমরা না।’

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত এই ভুল তদন্তের সঙ্গে কারা জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। না হলে আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন বলে জানান।

সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেকের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা হয়। এর মধ্যে ২৬টিতে জাহালমকে আসামি আবু সালেক হিসেবে চিহ্নিত করে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। চিঠি পাওয়ার পর দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে পাঁচ বছর আগে জাহালম বলেছিলেন, তিনি সালেক নন। বাংলায় লিখতে পারলেও ইংরেজিতে লিখতে জানেন না। কিন্তু নিরীহ পাটকলশ্রমিক জাহালমের কথা সেদিন দুদকের কেউ বিশ্বাস করেননি।

এরপর ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের এসব মামলায় জাহালম গ্রেপ্তার হন। তিনি জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন।

গত ৩০ জানুয়ারি প্রথম আলোয় ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি সেদিন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। শুনানি নিয়ে আদালত জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করেন। একই সঙ্গে নিরীহ জাহালমের গ্রেপ্তারের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্রসচিবের প্রতিনিধি ও আইনসচিবের প্রতিনিধিকে ৩ ফেব্রুয়ারি (আজ) সকাল ১০টায় সশরীরে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে দুদকের মহাপরিচালক (তদন্ত), মামলার বাদী আব্দুল্লাহ আল জাহিদ, স্বরাষ্ট্রসচিবের (সুরক্ষা) প্রতিনিধি যুগ্ম সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন এবং আইন সচিবের প্রতিনিধি সৈয়দ মুশফিকুল ইসলাম আদালতে হাজির হন।

শুনানির শুরুতে দুদক চেয়ারম্যানের পক্ষে আদালতে বক্তব্য দেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি আদালতকে জানান, জাহালমের বিরুদ্ধে ২৬টি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। পরে এসব মামলায় বিচারিক আদালতে বিচার শুরু হয়। তবে গত বছর দুদকের নজরে আসে জাহালম প্রকৃত আসামি আবু সালেক নন। মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকেও বিষয়টি জানানো হয়। তখন দুদকের অধিকতর তদন্ত ওঠে আসে জাহালম নির্দোষ। আসল আবু সালেকের ঠিকানা খুঁজে বের করা হয়। তখন দুদকের পক্ষ থেকে জাহালমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য বিচারিক আদালতে আবেদন করা হয়।

আদালত বলেন, ‘জাহালমের কারাগারের মেয়াদ এক দিন বাড়বে, তো আপনার (দুদক) ওপর কমপেনসেশন (ক্ষতিপূরণ) বাড়বে। কমপেনসেশন করতে হবে। দুদক করেন বা ব্যাংক করেন।’

শুনানির শেষ পর্যায়ে আদালতে উপস্থিত এক উপকারামহাপরিদর্শকে আদালত বলেন, ‘আপনারা আজই জাহালমকে রিলিজ করে দেবেন। দুদক এর খরচ দেবে।’