'তোমার জায়গা কেউ নিতে পারবে না'

২০১৪ সালের ৩০ জুন অ্যাসপেন আইডিয়াজ ফেস্টিভালে দ্য আটলান্টিককে দেওয়া সাক্ষাৎকার থেকে সংগৃহীত অংশবিশেষ

আজ থেকে প্রায় ১৪ বছর আগের কথা। সে সময় আমাকে অনেক রাত পর্যন্ত অফিসে থাকতে হতো। পেপসিকোর তখনকার চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী যিনি ছিলেন, রাত সাড়ে নয়টার দিকে তিনি আমাকে ফোন করলেন। বললেন, ‘ইন্দ্রা, আমরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে তোমার নাম ঘোষণা করতে যাচ্ছি। বোর্ড অব ডিরেক্টরদের মধ্যেও আমরা তোমাকে চাই।’
প্রস্তাবটা শুনে আমার আনন্দে অভিভূত হওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। আমি যে জায়গা থেকে এসেছি, সেখানকার একটা মেয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এত বড় একটা প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট হওয়া সহজ কথা নয়। অতএব অবশ্যই এটা আমার জন্য একটা বিশেষ দিন। ঠিক করলাম, সেদিনের মতো ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরব আর পরিবারের সঙ্গে এই সুখবরের আনন্দটা ভাগাভাগি করে নেব। রাত ১০টায় যখন বাড়ির গ্যারেজে পা রেখেছি, মা তখন সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। তাঁকে দেখেই আমি বললাম, ‘মা, একটা দারুণ খবর আছে!’ আমাকে থামিয়ে দিয়ে মা বললেন, ‘খবরটাকে অপেক্ষা করতে দাও। আগে জলদি যাও, দোকান থেকে দুধ কিনে আনো।’ গ্যারেজে আমার স্বামীর গাড়ি দেখে বুঝলাম, সে বাড়ি আছে। মাকে বললাম, ‘তুমি ওকে কেন দোকানে পাঠাচ্ছো না?’ মা বললেন, ‘সে খুব ক্লান্ত।’ আমাদের বাড়ির কাজে সাহায্য করার জন্য কয়েক জন লোক আছেন। জিজ্ঞেস করলাম, ‘তাঁদের কেন বলোনি?’ মা বললেন, তিনি ভুলে গিয়েছিলেন। সকালে নাশতার সময় আমাদের দুধ লাগবে, রাতেই সেটা না আনলে হচ্ছে না। অতএব বাধ্য মেয়ের মতো আমাকে দায়িত্বটা পালন করতে হলো।
দোকান থেকে ফিরে সশব্দে দুধের প্যাকেটটা টেবিলের ওপর রাখলাম। বললাম, ‘তুমি জানো কী খবর নিয়ে এসেছি? খুব শিগগিরই আমি পেপসিকোর বোর্ড অব ডিরেক্টরদের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছি। আর তুমি কিনা এখনো আমাকে দুধ আনতে পাঠাচ্ছো। কেমন মা তুমি?’ মা বললেন, ‘তুমি পেপসিকোর প্রেসিডেন্ট হতে পারো। বোর্ড অব ডিরেক্টরদের মধ্যে তোমার নাম থাকতে পারে। কিন্তু যখন ঘরে পা রাখবে, তখন তুমি একজন সন্তান। একজন স্ত্রী। বাড়ির বউ। একজন মা। এগুলোই তোমার পরিচয়। এখানে তোমার জায়গা কেউ নিতে পারবে না। অতএব তোমার পদবিটা গ্যারেজেই রেখে এসো।’
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো. সাইফুল্লাহ