বাঘ-সিংহের ডেরায়

একটি বাঘশাবককে দুধ পান করাচ্ছেন লেখক। ছবি: সংগৃহীত
একটি বাঘশাবককে দুধ পান করাচ্ছেন লেখক। ছবি: সংগৃহীত

অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল আফ্রিকার জীবজন্তুর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এসে সেই ইচ্ছাটা পূরণ হলো। স্ত্রী ফারিয়া খানকে নিয়ে ৪ অক্টোবর রওনা হলাম বাগামোয়া ওয়াইল্ডলাইফ এস্টেটের পথে। বন্য প্রাণীর এই রাজ্য দক্ষিণ আফ্রিকার ব্লুমফন্টেইনে। সেখানে গিয়ে বিরল এক অভিজ্ঞতাই হলো সেদিন।

বন্য প্রাণীর ডেরায় স্ত্রী ফারিয়া খানের সঙ্গে
বন্য প্রাণীর ডেরায় স্ত্রী ফারিয়া খানের সঙ্গে

সে রাজ্যে ঢুকতেই আমাদের স্বাগত জানাল দুটি সিংহ আর একটি বেঙ্গল টাইগার! রনেল ফাউচ, যিনি জীবজন্তু ও এই বাংলোর দেখাশোনা করেন, আমাদের নিয়ে গেলেন কটেজের ভেতরে। একটু বিশ্রাম নিয়ে জানালার কাছে যেতেই নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না!

বন্য প্রাণীর ডেরায় স্ত্রী ফারিয়া খানের সঙ্গে
বন্য প্রাণীর ডেরায় স্ত্রী ফারিয়া খানের সঙ্গে

খুব কাছেই মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে চারটা বিশাল আকারের সিংহ। কটেজের সামনে ওরা ‘নট অ্যালাউড’—রাতে নিজের হাতের সুস্বাদু খাবার পরিবেশনের সময় বললেন রনেল। তখন পর্যন্ত তিনিই আমাদের মূল সঙ্গী। কিছুটা ভয় আর রোমাঞ্চ নিয়ে গেলাম ঘুমাতে। খুব ভোরে ঘুম ভাঙল বাঘ-সিংহের হুংকারে! পরে শুনলাম, এখানে দিন শুরুই হয় পশুদের ডাকে।
নাশতার পর দেখা গেল অনিন্দ্যসুন্দর এক দৃশ্য। ফিডারে করে দুধ খাওয়ানো হচ্ছে বাঘশাবকদের। বাঘ, সিংহ, কুকুর, বিড়াল—সব প্রাণীর শাবকেরা থাকে ফার্মের মালিকের বাসার ভেতরে। রনেল প্রথমে নিয়ে গেলেন দুটো চিতার খাঁচায়। কিন্তু শুরুতেই ফারিয়ার ‘না’! সেখানে ঢুকতে ও রাজি নয়। তবে আমি নাছোড়। খানিক পর ফারিয়াও সাহস সঞ্চয় করল আমাকে দেখে। সাহসটা পরে তার আরও বেড়ে গেল। ফার্মের মালিক শেরিন বার্নাড আমাদের নিয়ে ঢোকালেন বিশাল বাঘ ও সিংহের খাঁচায়! ওরা তখন মাংস খাওয়ায় ব্যস্ত। রোমাঞ্চকর আর দুঃসাহসিকতায় ভরা একটা দিন কাটালাম দুজনে।

বার্নাডের বিশাল বাংলোর পেছনে সিংহ ও বাঘের সঙ্গে একটু খেলাধুলাও হলো আমাদের। আমাদের গা ঘেঁষে শুয়ে-বসে রয়েছে ‘ভয়ংকর’ জন্তুরা। অদ্ভুত সব দৃশ্য দেখতে দেখতে কেটে গেল পুরোটা দিন। তবে সিংহ-বাঘদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে একটি বিষয় অনুভব করলাম, ভালোবাসা দিয়ে জয় করা যায় সব কঠিনকে। এই প্রাণীগুলোকেও ভালোবাসা দিয়েই বড় করা হয়েছে এখানে। হিংস্রতার ছিটেফোঁটা নেই ওদের মধ্যে। তবে বাঘ-সিংহের কথা বলতেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে ভয়ংকর সব প্রাণীর ছবি, তাদের খুব কাছ থেকে দেখতে তাই সাহস লাগে! জীবনে আর কখনো এমন সাহসিকতা দেখাতে পারব বলে মনে হয় না! এটা নিশ্চিত, অবিশ্বাস্য আফ্রিকার এই বিরল অভিজ্ঞতা সারা জীবন জ্বলজ্বল করবে স্মৃতির পাতায়।
লেখক: ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার এবং সাবেক ক্রিকেটার