এশিয়ায় সেরা বাংলাদেশ

রওনাক জাহীন ওয়াসি ও সাজিদ খন্দকার। ছবি: আহমেদ মোহতাসিম
রওনাক জাহীন ওয়াসি ও সাজিদ খন্দকার। ছবি: আহমেদ মোহতাসিম

এশিয়ান ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি (এবিপি) ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্ব চলছিল থাইল্যান্ডের ক্র্যাবি শহরে। ৬ অক্টোবর। যে চারটি দল বিতর্ক করছিল, তার মধ্যে একটি বাংলাদেশের। বাংলাদেশি বিতার্কিকেরা জানতেন, এর আগে আন্তর্জাতিক শিরোপা অর্জনের সুযোগ হলেও এবিপি ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফিটা অধরা রয়ে গেছে। তাই প্রতিযোগীদের লড়াইটা শুধু বিপক্ষ দলের বিরুদ্ধেই নয়, স্নায়ুর সঙ্গেও চলছিল। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে এবার কিন্তু সেই অধরা শিরোপাটিও এসেছে বাংলাদেশের ঘরে। কারা নিয়ে এল এই সুনাম? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে অংশ নেওয়া দল ‘আইবিএ ডিইউ ১’। প্রতিবছর ভিন্ন ভিন্ন দেশ ‘এশিয়ান বিপি কাউন্সিল’-এর এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। থাইল্যান্ডে এবার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে ১ থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য কি শুরু থেকেই ছিল? দলের সদস্য সাজিদ খন্দকার অকপটে স্বীকার করলেন, এতটা তাঁরা নিজেরাও প্রত্যাশা করেননি। ‘চ্যাম্পিয়নশিপ তো দূরের কথা, ফাইনালে ওঠাই অনেক বড় স্বপ্ন ছিল। কোয়ার্টার ফাইনাল বা সেমিফাইনালে উঠতে পারলেও সন্তুষ্ট থাকতাম। ভাবতে পারিনি আমরা এশিয়ার সেরা দল হয়ে ফিরব’, বললেন তিনি। আরেক সদস্য রওনাক জাহীন ওয়াসি অবশ্য জানালেন, তিনি এই অর্জনের অপেক্ষাতেই ছিলেন। আত্মবিশ্বাস ছিল ভালো কিছু হবে। মনের ভেতরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশাও কিছুটা ছিল। হেসে যোগ করলেন, ‘আমি আবার বরাবরই একটু বেশি আশাবাদী।’
বিশ্বদরবারে বিতর্ক করতে গেলে একটা বাড়তি চাপ ভর করে প্রতিযোগীদের ঘাড়ে। দেশের প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্বের ভার তো কম নয়! সাজিদ বললেন, ‘দেশের প্রতিনিধি হওয়ার অনুভূতি আর কোনো কিছুর সঙ্গে মেলানো যায় না। ছোটবেলা থেকেই এটা আমার স্বপ্ন ছিল।’ আর ওয়াসির বক্তব্য, ‘ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশের বিতর্ককে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, যেখানে আমরা একটা টুর্নামেন্টে শুধু প্রিলিমিনারি রাউন্ড পার করে নকআউটে যাওয়ার স্বপ্ন দেখব না। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিতর্ক অঙ্গনে এমন একটা অবস্থানে নিয়ে যাব, যেন সবাই আমাদের একনামে চেনে। এবার বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে যে সম্মান আমরা পেয়েছি, এটা তুলনাহীন।’
এর আগে বাংলাদেশের একটি দল এবিপি ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে গেলেও সেবার ট্রফিটা ছোঁয়া হয়নি। এ নিয়ে দেশের বিতার্কিকদের মনে আক্ষেপ ছিল অনেক দিন। এবার আক্ষেপ ঘুচল। তা ফাইনালের উত্তাপ কেমন ছিল? জানতে চাই ওয়াসির কাছে। বললেন, ‘একটু নার্ভাসই ছিলাম। যদিও আমরা ফাইনালে উঠেছি এ নিয়েই অনেকে খুশি ছিল। কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে, টুর্নামেন্টটা জিতে শেষ করতে না পারলে সারা জীবন আফসোস থাকবে। ফাইনালের শুরুতে লটারি হওয়ার পর আমরা পেলাম “ওপেনিং গভর্নমেন্ট” পজিশন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি বিতর্কে এটা খুবই চ্যালেঞ্জিং। বিপক্ষে ছিল এশিয়ার সেরা তিনটা দল। কিন্তু বিতর্ক শুরু হওয়ার পর যখন পোডিয়ামে উঠলাম, তখন কেন যেন আত্মবিশ্বাস ভর করল। মনে হলো, নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে এবার একটা কিছু হবে!’
কেবল কথার কথা নয়। ওয়াসি যে নিজের সেরাটা দিয়েছেন, এর প্রমাণ—সেরা বক্তার পুরস্কারও এসেছে তাঁর ঝুলিতে। শুরু থেকে আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়া ওয়াসির কণ্ঠ এবার একটু বিনয়ীই শোনাল, ‘আসলে এই পুরস্কারের অর্থ হলো একটা গুরুত্বপূর্ণ রাউন্ডে আমার বক্তব্য সবচেয়ে ভালো হয়েছে। আমার মনে হয়, ঠিক সেভাবেই অন্যান্য রাউন্ডে সাজিদের বক্তব্যও অনেক ভালো ছিল। তার সাহায্য না থাকলে মনে হয় না এটা সম্ভব হতো।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে রওনাক জাহীন ওয়াসি পড়ছেন চতুর্থ বর্ষে। স্নাতক প্রায় শেষ, বিতর্কের ক্যারিয়ারটা তাই আর খুব বেশি লম্বা না-ও হতে পারে। কিন্তু মাত্রই প্রথম বর্ষে পড়ুয়া সাজিদ খন্দকারের হাতে এখনো বেশ খানিকটা সময় আছে। আগামী বছরগুলোতে নতুন কাউকে সঙ্গে নিয়ে দেশের হয়ে এমন আরও অনেক অর্জন তো তাঁর কাছ থেকে আশা করাই যায়।