জগন্নাথের এক যুগ

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে রং খেলায় মেতেছিলেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: পল্লব বিশ্বাস
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে রং খেলায় মেতেছিলেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: পল্লব বিশ্বাস

শোভাযাত্রার একদম প্রথম সারিতে ছিলেন একদল তরুণী। তাঁদের পরনে লাল-সাদা শাড়ি, হাতে নকশা আঁকা কুলা। কুলাগুলোর গায়ে লেখা একেকটি বর্ণ। সব বর্ণ একত্র করলে হয় ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ২০১৭’। ২২ অক্টোবর শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এভাবেই এক যুগ পূর্তি উৎসব উদ্যাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শোভাযাত্রায় যাঁরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তাঁদেরই একজন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা কুম যূথী। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর অধীর আগ্রহ নিয়ে এই দিনের জন্য অপেক্ষা করি। যতই দিন ঘনিয়ে আসে, ততই যেন আগ্রহ বাড়তে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসটা আমার খুব ভালো লাগে। বিশেষ করে এই শোভাযাত্রা।’
প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস এবং এক যুগ পূর্তি উদ্যাপনের শুভ উদ্বোধন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান। তাঁর নেতৃত্বেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। হাতে ব্যানার আর ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ লেখা রঙিন কাগজের টোপর মাথায় পরে শিক্ষার্থীরা নাচে-গানে মাতিয়ে ফেলেন মুহূর্তেই। শোভাযাত্রা যত এগোতে থাকে, আনন্দের মাত্রা বাড়ে তত। সেলফি তোলার পাশাপাশি দু-একজন আবার ফেসবুক লাইভে গিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করেন ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে। রায়সাহেব বাজার মোড় ঘুরে শোভাযাত্রা ক্যাম্পাসে ফিরে এলে যুক্ত হয় নতুন আমেজ। কাঁঠালতলা থেকে শুরু করে নতুন ভবন পর্যন্ত পুরো এলাকায় শুরু হয় রং মাখানোর খেলা। আলোকচিত্রীরাও ঝটপট ক্যামেরাবন্দী করে ফেলেন রঙিন মুহূর্তগুলো।
এরপর বিজ্ঞান ভবনের সামনে তৈরি মঞ্চে শুরু হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। আলোচনা অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের পাশাপাশি বক্তব্য দেন উপাচার্য মীজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এবারের অনুষ্ঠান এতটা জাঁকজমকপূর্ণ হওয়ার কথা ছিল না। আপনারা জানেন, এ বছর এই আয়োজনের বাজেটের একটা বড় অংশ মানবতার খাতিরে আমরা রোহিঙ্গাদের সেবায় দান করেছি। কিন্তু তারপরেও অনুষ্ঠান আয়োজনে আমরা কোথাও কিছু বাদ দিইনি।’ অনুষ্ঠান সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে সার্বিক সহযোগিতা করায় সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে উপাচার্য তার বক্তব্য শেষ করেন। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা বেলা দুইটা পর্যন্ত গান পরিবেশন করেন।
তিনটা বাজার কিছুক্ষণ পর অনুষ্ঠানের আনন্দে যোগ হয় নতুন মাত্রা। শিক্ষার্থীদের দল বেঁধে ছুটে যাওয়া দেখেই সবাই অনুমান করে নেন, এসে গেছে ‘দলছুট’। হ্যাঁ, দলছুট ব্যান্ডের পরিবেশনা ছিল অনুষ্ঠানের অন্যতম মূল আকর্ষণ। মুহূর্তেই পুরো সায়েন্স ভবনের মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাতিয়ে রেখে বিদায় নেয় দলছুট। শেষ হয় এবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবস।