তরুণদের ভাবনায় পর্যটনশিল্প

মডেল ওআইসি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
মডেল ওআইসি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

আফ্রিকার দেশ মরক্কো। প্রতিবছর এক কোটির বেশি পর্যটক এই দেশে পা রাখেন। মরক্কোর পর্যটনশিল্পের অভিজ্ঞতা কীভাবে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের বিকাশে সহায়তা করতে পারে, এ প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল ফাতেমা তুজ জোহরার সঙ্গে। খোঁজখবর নিয়ে তিনি জেনেছেন, মরক্কোর জিডিপির ৩ শতাংশই আসে পর্যটন খাত থেকে। ফাতেমা বলছিলেন, ‘বাংলাদেশসহ জনবহুল অন্য মুসলিম দেশগুলোর কাছে পর্যটনশিল্পের বিকাশের জন্য মরক্কো উদাহরণ হতে পারে।’

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী ফাতেমা হঠাৎ পর্যটনশিল্প নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন কেন? কারণ, সম্প্রতি তিনি অংশ নিয়েছেন জাতীয় মডেল অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) সম্মেলনে। ইসলামি কনফারেন্স ইয়ুথ ফোরাম ফর ডায়ালগ অ্যান্ড কো-অপারেশন (আইসিওয়াইএফ-ডিসি) ও লাইটহাউস ইম্পেরিয়াম ফাউন্ডেশন এই সম্মেলনের আয়োজন করে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত দশম ‘ওআইসি টুরিজম মিনিস্টার মিটিং’-এর অংশ হিসেবে ৩ ফেব্রুয়ারি ইসমাইলিয়া জামাতখানা অ্যান্ড সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মেলন।

তরুণদের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১২টি দেশের ১১০ জন তরুণ অংশ নেন। বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ওআইসিভুক্ত বিভিন্ন দেশের পর্যটনশিল্পকে কীভাবে আরও বিকশিত করা যায়, এ নিয়ে বিভিন্ন কৌশল পর্যালোচনা করেন শিক্ষার্থীরা। সম্মেলনের মহাসচিব এস আই এম সাদমান শেখ জানান, ‘আমরা এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে ১১টি কর্মপরিকল্পনার বিষয় তুলে ধরেছি, যা ওআইসির মন্ত্রী সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে।’ পর্যটনশিল্প বিকাশের নানা বিষয় পর্যালোচনার জন্য এবারই প্রথম ওআইসি সেক্টরিয়াল মিটিংয়ের অংশ হিসেবে তরুণদের এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ইনডেক্স গ্রুপের সহায়তায় সম্মেলনে দেশ-বিদেশের রাষ্ট্রদূত ও সরকারি কর্মকর্তারা তরুণদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য হাজির হয়েছিলেন।

বাংলাদেশে এই আয়োজনের জাতীয় সমন্বয়ক ফাহমিদা ফাইজা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতিচর্চার সুযোগের জন্যই এই সম্মেলন। পর্যটনশিল্পের বিকাশের মাধ্যমে কীভাবে বিভিন্ন মুসলিম দেশ নিজেদের আর্থিক সক্ষমতা বিকাশ করতে পারে, তা-ই খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি আমরা। অংশগ্রহণকারী তরুণেরা শুধু নিজের দেশ নিয়েই আলোচনা করেনি, অন্য দেশগুলোর সুযোগ ও সম্ভাবনা নিয়েও ভেবেছে, কথা বলেছে।’

মডেল ওআইসি সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ছাত্র রাকিবুর রেহমান। তাঁর সঙ্গে গল্প জমে উঠেছিল ক্যামেরুনের বাসিন্দা আল মোকতার মোহামেদ ও ফাউন্ডিকো মোকতারের সঙ্গে। রাকিব বলেন, ‘বিদেশি প্রতিনিধিদের কাছ থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় জানার সুযোগ হলো। ক্যামেরুনের পর্যটনশিল্প বিকাশের সুযোগগুলো আমরা খুঁজে বের করেছি।’ ওদিকে ক্যামেরুনের শিক্ষার্থী আল মোকতার মোহামেদ বলছিলেন, কীভাবে বাংলাদেশের কক্সবাজারকে আরও আধুনিক করে গড়ে তোলা যায়।

বাংলাদেশের তরুণ সামিয়া ইলমা তারশান প্রতিনিধিত্ব করেছেন ইরানের। তাঁর সহযোগী ছিলেন শেহজাদ সিয়াম। কীভাবে পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, এই ছিল তাঁদের আলোচ্য বিষয়। আফ্রিকার দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোকজনকে কীভাবে পর্যটনশিল্পের বিকাশে আরও বেশি সুযোগ দেওয়া যায়—এই বিষয়ে বলছিলেন নাইজেরিয়ার শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আদামু ইউসুফ। তাঁর ভাষ্য, ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে কীভাবে তাদের পর্যটনশিল্পের অংশ হিসেবে সক্ষম করে তোলা যায়, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ভাবতে পারে।’ বাংলাদেশের তরুণেরা তো ছিলেনই, নাইজেরিয়ার আদামু ইউসুফ, ফিলিস্তিনের আবদেল রহমান, মিসরের ওমরের মতো শিক্ষার্থীরা মডেল ওআইসি সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের মতামত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন।