নারীর বাহন স্কুটিতে কর বেশি

রাজধানীতে স্কুটি চালানো শিখছেন এক নারী। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন
রাজধানীতে স্কুটি চালানো শিখছেন এক নারী। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন

নারীদের জনপ্রিয় বাহন স্কুটির দাম মোটরসাইকেলের চেয়ে বেশি। দেশে উৎপাদন ও সংযোজনে কর ছাড় পেয়ে মোটরসাইকেলের দাম বেশ কমিয়ে এনেছে কোম্পানিগুলো। কিন্তু স্কুটিতে সেই সুবিধা পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। কোম্পানিগুলোর হিসাবে স্কুটির ৭০ শতাংশ গ্রাহকই নারী।

যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইউএসএইডের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী নারীর ক্ষমতায়ন করতে পারে এমন ১০টি প্রযুক্তির একটি হলো স্কুটি। বাংলাদেশে স্কুটির দাম বেশি হওয়ায় আমদানিতে উচ্চহারে শুল্ক কর আরোপ করা হয়। স্কুটি সংযোজন ও উৎপাদনপ্রক্রিয়া জটিল হওয়া এবং দেশের বাজার বড় না হওয়ায় এখনো বিনিয়োগ করেনি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো।

কোম্পানিগুলো বলছে, স্কুটির ক্ষেত্রে শুল্ক কর কিছুটা কমিয়ে দিলে দেশের বাজার বড় হবে। তখন এ খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হবে। শহুরে নারীর জন্য বাহনের ব্যবস্থা করা ও তাঁদের ক্ষমতায়নের জন্য হলেও স্কুটিতে আলাদা কর ব্যবস্থা চায় কোম্পানিগুলো।

বাংলাদেশ হোন্ডা লিমিটেডের অর্থ ও বাণিজ্য বিভাগের প্রধান শাহ মো. আশিকুর রহমান বললেন, ‘শহুরে নারীদের জন্য নিরাপদ ও সহজ যানবাহনের খুব অভাব। তাই অনেকেই স্কুটি চালাতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য স্কুটির দাম নাগালে আনা দরকার। এখন বছরে ১৫-২০ হাজার স্কুটি বিক্রি হয়। এই বাজার বড় না হলে কেউ সংযোজন অথবা উৎপাদনে যাবে না।’

কোম্পানিগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন বছরে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। স্কুটি বিক্রি হয় ১০ হাজারের মতো। তবে বিক্রি প্রতিবছর বাড়ছে।

নারীদের বাইক চালানোর প্রশিক্ষণদাতা প্রতিষ্ঠান যাব বহুদূরের প্রতিষ্ঠাতা আতিকা রোমা বললেন, নারীদের জন্য স্কুটির কর কমানোর পাশাপাশি কোম্পানিগুলোকে কিস্তিতে স্কুটি দিতে বাধ্য করা উচিত। অবশ্য স্কুটি শুধু নারীদের বাহন নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাজারে এখন ইয়ামাহার দুটি মডেলের স্কুটির বাজারদর ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ও ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। হোন্ডার একটি মডেলের স্কুটি বিক্রি হয় ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকায়। টিভিএস, হিরো, সুজুকিসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্কুটি বাজারে মেলে।

উদ্যোক্তারা জানান, মোটরসাইকেল ও স্কুটি পুরোপুরি তৈরি বা সংযুক্ত অবস্থায় (সিবিইউ) আমদানি করতে করভার দাঁড়ায় ১৫২ শতাংশ। পুরোপুরি বিযুক্ত (সিকেডি) অবস্থায় আমদানি করলে হয় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি। অন্যদিকে দেশে উৎপাদন করলে ৪০ শতাংশ কম হারে কর দাঁড়ায়। দেশে উৎপাদন করায় এখন ৯০ হাজার টাকায় ভালো মানের মোটরসাইকেল পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ভালো একটি স্কুটি কিনতে গেলে লাগছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার বেশি।

দেশে মোটরসাইকেলের বাজার অনেক বড় হওয়ায় বাজাজ, হিরো, হোন্ডা, সুজুকিসহ কয়েকটি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল সংযোজন অথবা উৎপাদনের কারখানা হয়েছে বাংলাদেশে। সর্বশেষ ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল সংযোজনের কারখানা চালু করেছে এসিআই মোটরস। দেশীয় উৎপাদক রানারও মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে। ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস বললেন, বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের উৎপাদন এখনো চেসিস বা কাঠামো বানানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ। স্কুটির চেসিস বানানো কিন্তু এত সহজ নয়। এটা করতে আরও ৪-৫ বছর লাগবে।