বিশ্বকে বাঁচাতে কাজ করছেন যে নারীরা

(ওপরে বাঁ থেকে) হিন্দোও উমারোও ইব্রাহিম, ক্রিস্টিয়ানা ফিগুরেস, বন্দনা শিবা, গ্রেটা থুনবার্গ, (নিচে বাঁ থেকে) সুনীতা নারাইন, রায়ান ক্রিস্টিন ম্যাক্সিমো ফ্রাঙ্কা, নাকাবুয়ে হিলডা এফ। ছবি: সংগৃহীত
(ওপরে বাঁ থেকে) হিন্দোও উমারোও ইব্রাহিম, ক্রিস্টিয়ানা ফিগুরেস, বন্দনা শিবা, গ্রেটা থুনবার্গ, (নিচে বাঁ থেকে) সুনীতা নারাইন, রায়ান ক্রিস্টিন ম্যাক্সিমো ফ্রাঙ্কা, নাকাবুয়ে হিলডা এফ। ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে বাহামা দ্বীপপুঞ্জ। পুড়ছে আমাজন। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন বা ভারতের চেন্নাইয়ে প্রকট হয়ে উঠছে পানিসংকট। এসবই জলবায়ু পরিবর্তনের ফল। তাই কার্বন নিঃসরণ কমাতে, টেকসই উন্নয়ন আর মানুষ ও প্রাণীদের বিলুপ্তি থেকে বাঁচাতে, সর্বোপরি বিশ্বকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাজ করছেন নারীরা।

সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ (১৬) কয়েক বছর ধরেই ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ নামে আন্দোলন চালাচ্ছে। এদিন শিশুরা সরকারকে গ্রিনহাউসের প্রতিক্রিয়া কমাতে ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় আন্দোলনে নামে। সুইডেনের সংসদের সামনে এই কিশোরী প্যারিস চুক্তিতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর দাবি জানিয়েছিল। সম্প্রতি আকাশপথে দূষণ কমাতে সে দুই সপ্তাহ নৌকা ভ্রমণ করে ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেয়।

ক্রিস্টিয়ানা ফিগুরেস জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জের নির্বাহী কর্মকর্তা। ২০১৬ সালে তিনি মার্কিন সাময়িকী ফরচুন-এর করা বিশ্বের শীর্ষ ৫০ নেতার তালিকায় সপ্তম স্থান অধিকার করেন। ২০০৯ সালে ব্যর্থ হওয়ার পর ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বিশ্বনেতাদের এক ছাদের নিচে আনার ক্ষেত্রে তাঁর অবদানই মুখ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তিনিই প্রথম সফলভাবে লিঙ্গবৈষম্যের বিষয়টিকে যুক্ত করেন। কিয়োটো প্রটোকলের চুক্তিতেও অবদান ছিল এই পরিবেশবাদীর।

চাদের ৩৪ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী হিন্দোও উমারোও ইব্রাহিম ১০ বছর ধরে তাঁর জীবনের প্রায় প্রতিটি দিন ব্যয় করেছেন শুধু পরিবেশের জন্য। চাদসহ পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ কমছে। বেঁচে থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। হিন্দোও উমারোও ইব্রাহিম মনে করেন, শতবর্ষী পুরোনো ঐতিহাসিক জ্ঞানের মধ্যেই পরিবেশ রক্ষার উপায় নিহিত আছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে তিনি সমঝোতাকারীর ভূমিকা পালন করেছেন।

গ্রেটা থুনবার্গের অনুপ্রেরণায় ২২ বছর বয়সী নাকাবুয়ে হিলডা এফ নাকাবুয়ে উগান্ডায় ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ আন্দোলন শুরু করেন। তিন ‘গ্রিন আফ্রিকা ক্যাম্পেইন’-এর একজন ‘গ্রিন গার্ল অ্যাম্বাসেডর’। এই সংস্থা আফ্রিকার মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে উদ্বুদ্ধ করে। নাকাবুয়ের উদ্যোগে উগান্ডার রাস্তাঘাট ও উন্মুক্ত স্থান থেকে প্লাস্টিক পণ্য সরানো হয়। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে তিনি সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কাজ করে যাচ্ছেন। প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ করতে ও বনায়নের উদ্দেশ্যে উগান্ডার সংসদের স্পিকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছেন তিনি।

২৫ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান পরিবেশবাদী রায়ান ক্রিস্টিন ম্যাক্সিমো ফ্রাঙ্কা প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে গিয়ে আমাজনকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেন। বলসোনারো সরকার যেখানে জনসমর্থনের জন্য আমাজন বন থেকে গাছ কাটা এবং কাঠের সব ব্যবসার বৈধতা দিয়েছে, সেখানে ফ্রাঙ্কা বলেছেন একেবারে উল্টো কথা। বলেছেন, এর ফলে কেবল ব্রাজিল নয়, বিশ্বের বাস্তুসংস্থান নষ্ট হচ্ছে। ফ্রাঙ্কা মনে করেন, পরিবেশ রক্ষার জন্য নারীর ক্ষমতায়নের বিকল্প নেই। বর্তমানে তিনি জাতিসংঘের নারী প্রকল্পের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

৫৮ বছর বয়সী সুনীতা নারাইন ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবেশকর্মী। ১৯৮২ সাল থেকে তিনি পরিবেশবিষয়ক নীতি নির্ধারণ নিয়ে গবেষণা করছেন। ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ডাউন টু আর্থ ম্যাগাজিনের সম্পাদক। তা ছাড়া দিল্লির বায়ুদূষণ নিয়েও কাজ করছেন। ২০১৬ সালে টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় নাম ছিল সুনীতা নারাইনের। অস্কারজয়ী হলিউড তারকা লিওনার্দো ডি-ক্যাপ্রিওর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ক্যাপ্রিওর বিফোর দ্য ফ্লাড প্রামাণ্যচিত্রে ভারত কীভাবে অবদান রাখতে পারে, সে বিষয়েও আলাপ করেছেন।

বন্দনা শিবা ভারতীয় প্রকৃতিবিজ্ঞানী, বাস্তুবিদ্যা গবেষক, পরিবেশকর্মী ও লেখক। বৈশ্বিক ‘ইকো-নারীবাদী’ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন ৬৬ বছর বয়সী এই পরিবেশবাদী। ২২ বছর ধরে তিনি শুদ্ধ কৃষি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আধুনিক উন্নয়ন ডিসকোর্সে ‘নারী ও বাস্তুসংস্থান’কে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ১৯৯৩ সালে তাঁকে ‘রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড’ (বিকল্প নোবেল প্রাইজ) প্রদান করা হয়। ২০০৩ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাঁকে ‘পরিবেশের নায়ক’ উপাধি দেয়।

*হারস্টোরি থেকে অনুবাদ করেছেন জিনাত শারমিন